সম্প্রতি, ইলিশ ধরতে গিয়ে ট্রলার ডুবে মৃত্যু হয় আটজন মৎস্যজীবীর। নিখোঁজ রয়েছেন আরও একজন। যদিও, কয়েকটি সূত্রের তরফে দাবি করা হচ্ছে, ওই ব্যক্তিরও বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
প্রশ্ন হল, কেন বারবার ঘটছে এমন ঘটনা? কেন বাঁচানো যাচ্ছে না আমাদের মৎস্যজীবীদের? কোথায় খামতি থেকে যাচ্ছে?
অনুন্নত পরিকাঠামো, প্রশাসনিক উদাসীনতা, অদক্ষ মাঝি - এমন একাধিইক কারণের জন্যই নাকি ইদানীংকালে বঙ্গপোসাগরে মৎস্যজীবীদের ট্রলার ডোবার ঘটনা উত্তরোত্তর বাড়ছে! এমনটাই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
আর, এই ধরনের দুর্ঘটনা যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে মাছ ধরতে গিয়ে আর বাড়িতে না ফেরার মর্মান্তিক 'কাহিনি'। মৎস্যজীবীদের কারও মৃত্যু ঘটছে অকালে, আবার কেউ চিরকালের মতো হারিয়ে যাচ্ছেন সমুদ্রের বিপুল জলরাশিতে।
এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে লেখালিখি শুরু হলেও কাজের কাজ কিছুই তেমন হচ্ছে না বলে দাবি করছেন মৎস্যজীবীদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, তাঁরা যে ট্রলারগুলি নিয়ে দামাল সমুদ্রে মাছ ধরতে যান, সেগুলির অধিকাংশেরই বেহাল দশা।
খাতায়-কলমে ওয়্যারলেস রেডিয়ো সেট থাকলেও দরকারের সময়ে সেগুলি অকেজো হয়ে যায়। মৎস্যজীবীরা বলছেন, প্রশাসন চাইলে নজরদারির মাধ্যমে এগুলো ঠিক করতে পারে। কিন্তু, তাদের এ নিয়ে তেমন আগ্রহই নেই।
অনেকে আবার উপকূল লাগোয়া এলাকায় এবং মাছ ধরতে যাওয়া-আসার পথে ও নদীগুলিতে মারাত্মক হারে নাব্যতা কমে যাওয়াকেও ট্রলারডুবির অন্যতম কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। অভিজ্ঞ মৎস্যজীবীরা বলছেন, অবিলম্বে ড্রেজিং করে এইসব জায়গায় জলের গভীরতা বাড়ানো দরকার।
সেইসঙ্গে, কোন পথে মাছ ধরতে যাতায়াত করতে হবে, তাও চিহ্নিত করা দরকার। তা না হলে, ডুবে থাকা চরে ধাক্কা লেগে ঘটা দুর্ঘটনাগুলি বাগে আনা সম্ভব হবে না।
তবে, মৎস্যজীবীদের যেমন প্রশাসনের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে, তেমনই প্রশাসনও মনে করছে, দুর্ঘটনা এড়াতে মৎস্যজীবীদেরও আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। সেটা কী রকম ?
প্রশাসনের তরফে বলা হচ্ছে, মৎস্যজীবীদের মধ্যে লাইফ জ্যাকেট পরা নিয়ে অনীহা রয়েছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। প্রশাসনের সেই পরিকাঠামো নেই যে মাঝসমুদ্রে মাছ ধরার সময় তাঁরা লাইফ জ্যাকেট পরেছেন কিনা, তার উপর নজরদারি করবে। তাই, মৎস্যজীবীদের নিজেদের স্বার্থেই এই নিয়ম মেনে চলতে হবে।
অনেক সময়েই ন্যূনতম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মাঝিরা মৎস্যজীবীদের নৌকার দায়িত্ব নিচ্ছেন। ইদানীংকালে এমন লোকজনের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে বলে অভিযোগ। যা অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মানছেন মাঝি ও মৎস্যজীবীরাও।
অভিযোগ, অনেক সময় উপকূলরক্ষীবাহিনীর নিষেধ সত্ত্বেও মৎস্যজীবীরা বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে পড়েন। পরে সেদিক থেকে তাড়া খেয়ে পালিয়ে আসতে গিয়েও দুর্ঘটনা ঘটে।