সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর একের পর এক প্রশ্নবাণে জর্জরিত হলেন 'উত্তরবঙ্গ লবির জনক' ডা. শ্যামাপদ দাস। আনন্দবাজার পত্রিকায় (অনলাইন) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন উল্লেখ করে শ্য়ামাপদর সামনে মোট পাঁচটি প্রশ্ন রেখেছেন শুভেন্দু। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে শ্যামাপদর উদ্দেশে লিখেছেন, 'আপনি যতোই এড়িয়ে যাওয়ার বৃথা চেষ্টা করুন না কেন, নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনাকেই দিতে হবে'।
শ্যামাপদর প্রতি শুভেন্দুর প্রশ্নমালা:
বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, এমডি না হওয়া সত্ত্বও ডা. শ্যামাপদ দাসের মেয়ে ডা. রিয়াল দাস স্বাস্থ্য শিক্ষা পরিষেবার আওতায় সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত রয়েছেন। শুধু তাই নয়। একইসঙ্গে তিনি ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি-রও বিভাগীয় প্রধান। শুভেন্দুর প্রথম প্রশ্ন, বাবার হাতযশ ছাড়া কি ডা. রিয়াল দাসের পক্ষে এভাবে এই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হত?
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. কৌস্তভ নায়েককে চরম স্বজনপোষক হিসাবে আক্রমণ করে শুভেন্দু জানতে চান, মাত্র একবছরের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা পাথেয় করে কীভাবে তিনি ডিরেক্টর অফ মেডিক্যাল এডুকেশন হতে চলেছেন? এখানেও শ্যামাপদরই প্রভাব রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু। চেয়েছেন জবাব।
আর জি করের সদ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডা. সন্দীপ ঘোষ যে দীর্ঘ সময় ধরেই উত্তরবঙ্গ লবির সক্রিয় অংশ এবং তিনি যে শ্য়ামাপদর বিশেষ স্নেহভাজন, সেই অভিযোগ ইতিমধ্যেই নানা মহলে উঠেছে। শুভেন্দুও সেই প্রসঙ্গ তুলেছেন। তাঁর দাবি, শ্যামাপদর আশীর্বাদ মাথায় ছিল বলেই একাধিকবার আর জি কর থেকে নিজের বদলির সরকারি সিদ্ধান্ত পর্যন্ত বদলে দিয়েছেন সন্দীপ! বহাল থেকেছেন নিজের পছন্দের হাসপাতালে। এই তথ্য সঠিক কিনা, তাও জানতে চেয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।
রাজ্যের একাধিক যোগ্য চিকিৎসক কেবলমাত্র উত্তরবঙ্গ লবির অনুগত না হওয়ায় তাঁদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে, বলেও দাবি করেছেন শুভেন্দু। এই প্রসঙ্গে এসএসকেএমের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান ডা. অর্পিতা রায়চৌধুরীর উদাহরণ দিয়েছেন বিরোধী দলেনতা। শ্যামাপদর রোষেই ডা. রায়চৌধুরীর মতো যোগ্য চিকিৎসকদের রাতারাতি প্রত্যন্ত এলাকায় বদলি করা হয়েছে কিনা, সেই প্রশ্নও তুলেছেন শুভেন্দু।
সবশেষে শ্যামাপদকে 'প্রতিহিংসাপরায়ণ' বলে তীব্র কটাক্ষ করেছেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর অভিযোগ, শ্যামাপদ কেবলমাত্র নিজের গোষ্ঠীর লোকেদেরই স্বার্থরক্ষা করেছেন। তাতে যে সামগ্রিকভাবে রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে, সেদিকে আমল দেননি তিনি! এই প্রসঙ্গে শ্যামাপদর মতামত জানতে চেয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।
প্রসঙ্গত, আনন্দবাজার পত্রিকায় ডা. শ্যামাপদ দাসের যে সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করলেও তিনি মেনে নিয়েছেন, তাঁর নাম করে নাকি অনেকেই অনেক কিছু করেছেন! এমনকী, আর জি কর কাণ্ডের পর তথাকথিত উত্তরবঙ্গ লবির যে চিকিৎসকদের নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে, ঘুরিয়ে তাঁদের অনেককেই চেনার কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন শ্যামাপদ।
সবশেষে 'ডাক্তারবাবু' জানিয়েছেন, তিনি এই বিষয়ে আর কোনও কথা বলবেন না। শুভেন্দুর বক্তব্য, এভাবে নিজের দায় এড়াতে পারেন না বর্ষীয়ান ওই চিকিৎসক - যাঁকে কিনা অনেকেই চেনেন 'মুখ্যমন্ত্রীর চিকিৎসক' হিসাবে!