তানিয়া পারভিনের পর এবার মহম্মদ হাবিবুল্লাহ। গ্রেফতার হয়েছে জঙ্গি সন্দেহে। আর উভয়ের ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যে দুজনেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রছাত্রী। কিন্তু এই মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা কীভাবে জঙ্গিদের খপ্পরে পড়ে? কেন তারা এই জাল কেটে বেরিয়ে আসতে পারে না? প্রতি পদে পদে বিপদের হাতছানি, অন্ধকার গলি, এরা বিপদে ফেলে দেশকে, সেটা কেন তারা বুঝতে পারে না? নাকি বুঝেও ক্ষতি করে দেশের?
অনেকের মতে এই মেধাবী ছাত্রছাত্রীরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন কিন্তু সেই জায়গায় তারা দেশকে পিছিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য় ছক কষছে। কেন এই অবনমন?
পশ্চিম বর্ধমানে কাঁকসার বাসিন্দা যুবক মহম্মদ হবিবুল্লাহকে গ্রেফতার করার পরে এই প্রশ্নটা বার বার উঠছে। জঙ্গি গোষ্ঠী শাহদাতের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। কিন্তু হবিবুল্লাহ তো পড়াশোনায় এত ভালো। তারপরেও কেন সে এই অন্ধকার জগতে হারিয়ে যাচ্ছিল?
এই প্রশ্নটা খুঁজছেন অনেকেই। অভিজ্ঞ মহলের মতে, একটা সময় আইএসআইএসের কার্যকলাপ যখন ছড়িয়ে পড়ছিল তখন দেখা গিয়েছিল একাধিক মেধাবী ছাত্রকে তারা টার্গেট করছে। মূলত সংগঠনের কাজকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা তাদের টার্গেট করছিল। এমনকী সিরিয়া, বাংলাদেশ বা ভারতের কোনও শহরে বসেই কাজ করত তারা।
বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার–আল–ইসলামের’ সঙ্গেও ‘শাহাদাত’ জঙ্গি সংগঠনের যোগ আছে বলে খবর। হবিবুল্লা পূর্ব বর্ধমানের বুদবুদ থানা এলাকার মানকর কলেজের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বাংলাদেশের আনসার উল ইসলাম জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সে যুক্ত বলে জানতে পেরেছে এসটিএফ। ওই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় তথ্য আদানপ্রদান হত। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের অন্তর্গত কাঁকসা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং ইউএপিএ আইনে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। হবিবুল্লার ভাই অষ্টম শ্রেণির ছাত্রকেও আটক করেছে এসটিএফ।
এর আগে উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়া থেকে স্থানীয় কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তানিয়া পারভিনকে গ্রেফতার করেছিল রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স। জঙ্গিযোগের সন্দেহে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তদন্তে নেমে NIA জানতে পারে নিয়মিত পাকিস্তানের লস্কর কম্যান্ডারের সঙ্গে যোগ রেখে চলত তানিয়া। বাদুড়িয়ায় বসেই জঙ্গি মডিউল তৈরি করছিল সে।
এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছিল, কাশ্মীরের বন্দিপোরার বাসিন্দা আলতাফ নামে স্কুলের শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তানিয়ার। তদন্তে নেমে এনআইএ জানতে পারে, এই আলতাফই বাদুড়িয়ার তানিয়া পারভিনকে পাকিস্তানের এই জঙ্গিগোষ্ঠীর মাথাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে সেতুবন্ধনের কাজ করেছিল। তদন্তে এনআইএ আরও জানতে পেরেছিল, এই আলতাফ যুবক যুবতীদের জেহাদের জন্য উস্কে তাদেরকে দলের সদস্য পদ পাইয়ে দেওয়ার কাজ করত।
উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার তানিয়া পারভিনের সঙ্গে ওই ব্যক্তির সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্মে যোগাযোগ হয়েছিল। সেখান থেকেই আলতাফ তানিয়া পারভিনকে তাদের দলে যোগ করায়। তারপর তানিয়াকে পাকিস্তানের লস্কর-ই-তৈবার জঙ্গিগোষ্ঠীর মাথাদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয় আলতাফ। এই তানিয়া বা হবিবুল্লাহদের মতো যুবক যুবতীদের ভূমিকা ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠছে।