আর্থিক লেনদেনই কি কাল হল? সেই কারণেই কি অকালে জীবন খোয়াতে হল বিশ্বভারতীর ছাত্রী অনামিকা সিংকে? তদন্তে নেমে আপাতত এসবেরই উত্তর খুঁজছে বীরভূমের শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ। উত্তরের খোঁজে কলকাতার বেনিয়াপুকুর থেকে দুই সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে তারা। ধৃতরা হলেন মহম্মদ কাইফ ও মহম্মদ ফায়েজ।
কারা এই মহম্মদ কাইফ ও মহম্মদ ফায়েজ?
পুলিশ সূত্রে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, ধৃতদের সঙ্গে প্রয়াত ছাত্রীর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল এবং তাঁদের মধ্যে আর্থিক লেনদেনও চলত। ছাত্রীর মোবাইল থেকে উদ্ধার হওয়া একাধিক ভয়েস মেসেজ ও হোয়াট্সঅ্যাপ চ্যাটের সূত্র ধরেই কলকাতা থেকে কাইফ ও ফায়েজকে পাকড়াও করা হয়।
অনামিকার পরিচয়
বিশ্বভারতীর শিল্প সদনের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন অনামিকা সিং। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই আম্রপালি ছাত্রী নিবাসে। গত ৫ সেপ্টেম্বর সেই ছাত্রী নিবাসেই বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় অনামিকাকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। পরে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার পর আদতে উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর বাসিন্দা অনামিকার বাবা-মা শান্তিনিকেতনে পৌঁছন। তাঁদের মেয়েকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা।
অর্থই কি অনর্থের কারণ?
অনামিকার পরিবারের করা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ জানতে পারে, একটি বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্টরা টাকা দেওয়ার জন্য তাঁকে মানসিক চাপ দিচ্ছিলেন। অনামিকার মোবাইলের চ্যাট হিস্ট্রি থেকে পুলিশ একটি কথপোকথনের অংশ পায়, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
চ্য়াটের ওই অংশে সংশ্লিষ্ট অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্ট লিখেছেন, 'রুপিয়া অ্যারেঞ্জ কিজিয়ে। ক্যায়া হোনেওয়ালা হ্যায়, মালুম চলেগা আপকো।' অনামিকা এর জবাবও দেন। পাল্টা লেখেন, 'ক্য়ায়া করেঙ্গে আপ? ধমকি দে রহে হ্যায়?' এর উত্তর আসে, ‘ওয়েট করো, মালুম চলেগা…।'
একজন আবাসিক পড়ুয়ার হঠাৎ করে কেন এত টাকার প্রয়োজন হল, তিনি নিজের প্রয়োজনে টাকা ধার করেছিলেন, নাকি কারও জন্য টাকার ব্যবস্থা করেছিলেন, আর সেটা করতে গিয়েই নিজে বিপদে পড়েছিলেন কিনা - ইত্যাদি সমস্ত সম্ভাবনা পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
এদিকে, ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তির দাবিতে পুলিশের উপর চাপ বাড়াচ্ছেন বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারাও। ইতিমধ্যেই শান্তিনিকেতন থানার ওসি কস্তুরী মুখোপাধ্যায়কে ঘেরাও বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তাঁরা।
পুলিশের দাবি, তাদের তদন্ত এগোচ্ছে। ধৃত দুই যুবককে ইতিমধ্যেই জেরা করা হচ্ছে। তাঁদের আচরণের জন্যই অনামিকা বিষ খেতে বাধ্য হন, নাকি এর পিছনে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে, সবটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।