চাকরির নিরিখে কে এগিয়ে? দেখবেন সেখানে অন্যদের গোল দিচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং। আইটির পড়ুয়াদের ক্যাম্পাসিংয়ে চাকরি হয়ে যায়। তাই এখনও পড়ুয়াদের পছন্দের জায়গা ইঞ্জিনিয়ারিং - সেই তথ্যই তুলে ধরলেন জেআইএসের সিনিয়র কেরিয়ার অ্যাডভাইজার বিদ্যুৎ মজুমদার।
মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের প্রথম পছন্দের বিষয়টা কী? এর উত্তর খুবই সোজা। কারণ সকলেই জানেন, বিজ্ঞানের শাখাগুলি মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের প্রথম পছন্দের তালিকায়। এর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে অঙ্ক, পদার্থবিদ্যা এবং রসায়ন। এখনও বিভিন্ন বোর্ডের সেরা ছাত্রছাত্রীদের কম্বিনেশন এটাই। বিশ্বজোড়া সমীক্ষাগুলি এটা বলছে। এরপরই আসে বায়োলজি, কম্পিউটার সায়েন্স এবং রাশিবিজ্ঞান বা স্ট্যাটিসটিক্স। ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডাক্তারি পড়তে ক্লাস টুয়েলভের ছাত্রছাত্রীরা মোটামুটি এই কম্বিনেশনগুলিই নেন। এখন অবশ্য ফার্মাসি পড়ার আগ্রহও আগের থেকে অনেক বেড়েছে। বি.ফার্ম পড়ার জন্য ছাত্রছাত্রীরা সাধারণভাবে এই কম্বিনেশনের বিষয় থেকেই আসেন। চলতি বছর এআইসিটিই বিজ্ঞানের ১৪ টি বিষয়কে বেছে নিয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য।
আইআইটি বা এনআইটির প্রবেশিকা পরীক্ষা জেইই (মেন)-এ বসেছেন প্রায় ১৫ লক্ষ ছাত্রছাত্রী। আবার আমাদের রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৬৫,১৭০ জন ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে মোট ৬৪,৮৫৩ জন ছাত্রছাত্রী মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই বি.টেক বা বি.ফার্ম পড়তে আগ্রহী। ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষা হল 'ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট' বা নিট। এ বছর নিটের আবেদনকারীর সংখ্যা ১৫ লক্ষের বেশি। যা গত বছরের থেকে পাঁচ শতাংশ বেশি।
স্বাধীনতার ৭৫ বছরে সারা দেশে ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা ডাক্তারি পড়ার চাহিদাও আগের থেকে বেড়েছে বহুগুণ। আইআইটি, এনআইটি বা রাজ্য ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলির সম্মিলিত সংখ্যা এখন প্রায় ৪,৫০০ টি। প্রতি বছর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে প্রথম বছরে ভরতি হয় ১৩ লক্ষের বেশি ছাত্রছাত্রী, যদিও এআইসিটিই অনুমোদিত মোট আসন সংখ্যার তুলনায় তা কম।
তাই প্রশ্ন হতে পারে, ডাক্তারি বা ফার্মাসি পড়ার জন্য যেখানে প্রচুর ভিড়, সেখানে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতে মেকানিকাল, ইলেকট্রিকাল কিংবা সিভিলের আসন ফাঁকা থাকছে কেন? এর অন্যতম কারণ হল, এখন তথ্যপ্রযুক্তি বা কম্পিউটার সায়েন্স নির্ভর বিষয়গুলিই শিল্পমহলের নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানতম চাহিদা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ এই ক্ষেত্রগুলিতেই চাকরির সুযোগ সবচেয়ে বেশি। আবার সেই ক্ষেত্রে নিয়োগকারী সংস্থার সংখ্যাও বেশি। শুধু তাই নয়, গত পাঁচ বছরে কম্পিউটার সায়েন্স শাখায় যুক্ত হয়েছে অনেক নতুন বিষয়, যেমন আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মেশিন লার্নিং, সাইবার সিকিউরিটি, ব্লক চেইন, ডেটা সায়েন্স অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স ইত্যাদি। যেহেতু কম্পিউটার বিজ্ঞানের কাজ মূলত তথ্যনির্ভর, তাই এইসব বিষয়ে পাশ করে ভালো ছাত্রছাত্রীরা কেউ বসে থাকেন না। এছাড়াও শিল্পমহলে যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে মাইনিং, পেট্রোলিয়াম, বায়োমেডিকাল, বায়োটেকনোলজি, এগ্রিকালচারাল বা অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো বিষয়গুলির। তাই এই বিষয়গুলিতে আসন খুব একটা ফাঁকা থাকে না। আবার চাকরির সুযোগ কম হওয়ার কারণে, চাহিদা কমছে মেকানিকাল কিংবা কেমিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো বিষয়গুলির। তবে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই বিষয়গুলিতে নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন প্রযুক্তি জগতের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা।
এ বছরের রাজ্য জয়েন্টের রেজাল্ট প্রকাশের পরে শুরু হয়ে গিয়েছে ই-কাউন্সেলিং পর্বও। এই পর্বে ছাত্রছাত্রীরা পছন্দের বিষয় এবং কলেজ বেছে নেবেন। এটা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই প্রথমেই দেখে নেওয়া উচিত কলেজ সম্পর্কে শিল্প জগতের ধারণা কী? অর্থাৎ শিল্প মহলের কোন কোন সংস্থা পছন্দের কলেজে ক্যাম্পাসিংয়ে এসেছে এবং ওই কলেজের কত শতাংশ ছাত্রছাত্রী ক্যাম্পাসিংয়ের মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন? পাশাপাশি, কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত ছাত্রছাত্রীদের গড় বেতনই বা কত?
দ্বিতীয়ত, কলেজটি ন্যাক বা এনবিএ-এর স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কিনা? এছাড়া এনআইআরএফ র্যাঙ্ক লিস্টে বা অটল র্যাঙ্কিং অথবা ইনস্টিটিউট ইনোভেশন কাউন্সিলের তালিকায় কলেজটির নাম আছে কিনা এবং থাকলে কোন অবস্থানে রয়েছে? একইভাবে ন্যাকের গ্রেড অনুসারে কলেজের প্রাপ্তি কত তাও জেনে নেওয়া ভালো। আমাদের রাজ্যে যেমন বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের মধ্যে রয়েছে জেআইএস কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, হলদিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, হেরিটেজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি ন্যাকের 'এ' গ্রেড প্রাপ্ত। এনআইআরএফ তালিকায় রয়েছে নারুলা ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, জেআইএস কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং, গুরুনানক ইনস্টিটিউট অফ ফার্মাসিউটিকাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং।
তৃতীয়ত, দেখতে হবে কলেজের ওয়ার্কশপ এবং ল্যাবের অবস্থাও। কারণ, ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত হাতেকলমে শিক্ষাপ্রণালীর উপর নির্ভরশীল। তাই বিষয়ের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত হয়ে পড়ে যন্ত্রপাতির আধুনিকতম উপাদানগুলিও। একে স্টেট অফ আর্ট টেকনোলজিও বলা হয়। সেই কারণে ভরতির আগে ভালো করে জেনে নিতে হবে যে ওয়ার্কশপগুলির অবস্থা কেমন। যদিও অতিমারীর জন্য আপাতত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। কিন্তু সেগুলি খোলার ঠিক পরেই ল্যাব ও ওয়ার্কশপের কাজ শুরু হয়ে যাবে পুরোদমে। তাই এ বিষয়ে আগাম খোঁজ থাকা বিশেষ জরুরি।
ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে ই-কাউন্সেলিংয়ের প্রথম পর্বের আসন বণ্টনের তালিকা। এরপরে হবে দ্বিতীয় পর্ব বা মপ-আপ রাউন্ড। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে নিজের পছন্দমতো কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় না পেলেও মপ-আপ রাউন্ড পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। তবে সেজন্য প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে আপগ্রেডেশনের ফর্ম পূরণ করতে হবে। তাতে যেন কোনওভাবেই ভুল না হয়। চলতি বছর যেহেতু রিপোর্টিং কেন্দ্র নেই, তাই র্যাঙ্ক কার্ড এবং সিট অ্যালটমেন্টের প্রিন্ট-আউট নিয়ে কলেজে গিয়ে ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন করে ওই কলেজে ভরতি হতে পারবেন বা আপগ্রেডেশন ফর্ম পূরণ করতে পারবেন, যা পাওয়া যাবে কলেজ থেকেই। তবে মপ-আপ রাউন্ডের আগে র্যাঙ্ক অনুযায়ী পছন্দের বিষয় বা কলেজ পেয়ে গেলে কিছুতেই হাতছাড়া করবেন না।
শেষে বলব, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এখন অনেক নতুন-নতুন শাখা যুক্ত হয়েছে। প্রযুক্তির আধুনিকীকরণের জন্যই এটা হয়েছে। ভবিষ্যতে কম্পিউটার সায়েন্সের হাত ধরে আরও অনেক প্রযুক্তির জগতে অনেক নতুন দরজা খুলে যাবে। তাই সেগুলিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
সতর্কীকরণ (ডিসক্লেমার) : এই তথ্যাদি প্রস্তুত করেছে ব্র্যান্ড সলিউশনস টিম। এই প্রবন্ধ লেখার কাজে HT Media-র কোনও সাংবাদিক নিযুক্ত ছিলেন না। এই প্রবন্ধে লেখা তথ্যের সত্যনিষ্ঠতা, প্রাসঙ্গিকতা, যথার্থতা, বৈধতা নিয়ে কোনও দাবি করে না HT Media।