বাংলা নিউজ > কর্মখালি > Viral Story: করোনায় বেকার, ৬০০ ইমেল, ৮০ ফোন কল - বিশ্বব্যাঙ্ক ও IMF-তে চাকরি ভারতীয় যুবকের

Viral Story: করোনায় বেকার, ৬০০ ইমেল, ৮০ ফোন কল - বিশ্বব্যাঙ্ক ও IMF-তে চাকরি ভারতীয় যুবকের

ছবি: লিঙ্কডইন (LinkedIn)

পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসা, ইয়েলের পড়াশোনা করে আদৌ কী লাভ হল, সেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন তিনি। 'মা-বাবা ফোন করে যখন চাকরির কথা জিজ্ঞেস করত, কিছু বলতেই পারতাম না আমি,' লিখেছেন বৎসল।

'কোনওভাবেই ভারতে ফিরব না। আর প্রথম চেকটা হতে হবে আমেরিকান ডলারেই,' পণ করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠরত এক ভারতীয় যুবক। লাগাতার চেষ্টার মাধ্যমেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ব ব্যাঙ্কে চাকরি জোটালেন তিনি। একটানা ইমেল ও ফোন করার মাধ্যমেই সেই চাকরি জোটান। তাঁর এই সাফল্যের কথা তিনি লিঙ্কডইনে শেয়ার করেছেন। তাঁর এই কাহিনীতে অনুপ্রাণিত হাজার হাজার ভারতীয় পড়ুয়ারা।

দিল্লির শ্রীরাম কলেজ অফ কমার্স থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক। এরপর বৎসল নাহাতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। ২০২০ সালের এপ্রিলে বিশ্বের অন্যতম নামী এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পাশ করেন। বছর ২৩ বয়স। কিন্তু সেই সময়েই বিশ্বজুড়ে জাঁকিয়ে বসে করোনা। টালমাটাল অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান সম্পর্কেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েন বৎসল। চাকরির চিন্তায় রাতে ঘুমোতে পারতেন না কৃতী ছাত্র।

সেইসময় বিশ্বজুড়ে মন্দা চলছিল। বেশিরভাগ সংস্থাই কর্মীদের সংখ্যা কমাতে পারলে বাঁচে। এছাড়া অভিবাসন নীতির বিষয়ে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান নিয়েও চিন্তিত ছিল কোম্পানিগুলি। সেই কারণে শুধুমাত্র মার্কিন নাগরিকদেরই নিয়োগ করছিল তারা।

'যতবার আমার এই পুরো পরিস্থিতিটা ভাবি, আজও যেন ততবারই কেঁপে উঠি,' লিঙ্কডইনে লিখেছেন আবেগঘন বৎসল।

'আমার হাতে একটিও চাকরি ছিল না। এদিকে ২ মাসের মধ্যেই স্নাতক হওয়ার কথা। ইয়েলের ছাত্র হয়েও আমার এমন অবস্থা ছিল,' লিখেছেন তিনি। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসা, ইয়েলের পড়াশোনা করে আদৌ কী লাভ হল, সেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন তিনি। 'মা-বাবা ফোন করে যখন চাকরির কথা জিজ্ঞেস করত, কিছু বলতেই পারতাম না আমি,' লিখেছেন বৎসল।

শুধু বৎসলই নন। সেই সময়ে হাজার-হাজার ভিনদেশ থেকে মার্কিন মুলুকে পড়াশোনা করতে যাওয়া পড়ুয়াদের এই পরিস্থিতি হয়েছিল।

কিন্তু এই কঠিন পরিস্থিতিতেও বৎসল দু'টি বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন। কোনওভাবেই ভারতে ফেরা যাবে না। আর তাঁর প্রথম চেকটা হতে হবে আমেরিকান ডলারেই।

সেই সময়েই তিনি জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি নেন - চাকরির আবেদনপত্র পূরণ করা বা নিয়োগ পোর্টাল দেখা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেন। এভাবে কোনও চাকরির চেষ্টা করবেন না বলে স্থির করেন। ঠিক করেন, শুধুমাত্র মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা করবেন। আর তার মাধ্যমেই চাকরি জোটাবেন।

এর পরবর্তী ২ মাসে, তিনি দেড় হাজারেরও বেশি কানেকশন রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলেন। ৬০০টিরও বেশি ইমেল করেছিলেন। প্রায় ৮০ জনের সঙ্গে ফোনে সরাসরি কথা বলেন। বৎসলের কথায়, 'এভাবে রিজেক্ট হতে হতে যেন আমরা চামড়াটাই মোটা হয়ে গিয়েছিল। ভয় করত না আর।' অবস্থা এমনই দাঁড়ায় যে মাধরাতে ঘুমের সময়েও স্বপ্নে যেন লোককে ফোন করে চাকরি খুঁজতেন।

এই লাগাতার প্রচেষ্টারও ফলও মেলে হাতেনাতে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে একসঙ্গে ৪টি চাকরির অফার পান তিনি। তার মধ্যে ছিল বিশ্বব্যাঙ্কও। সেখানে গবেষণা সংক্রান্ত কাজ পান বৎসল। এর আগে কোনও এত কমবয়সী কেউ বিশ্ব ব্যাঙ্কে এমন পদে চাকরি পাননি।

সেখানেই অবশ্য থেমে থাকেননি কৃতী পড়ুয়া। বর্তমানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভাণ্ডারের গবেষণা বিশ্লেষকের পদে কাজ করছেন তিনি।

বন্ধ করুন