স্বপ্ন ছিল আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবেন। নাম্বারের নিরিখে ভর্তি হতে গেলে সুযোগ পেতেন না, তাই প্রতারণার পথই বেছে নিয়েছিলেন ১৯ বছর বয়সী ভারতীয় পড়ুয়া। আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও বৃত্তি পাওয়ার জন্য এই ছাত্র জাল নথি তৈরি করেছিলেন। স্কুলের অধ্যক্ষের ভুয়ো মেইল আইডি তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছিলেন। এছাড়া ইন্টারমিডিয়েটের মার্কশিট কারচুপি করে মিথ্যা সার্টিফিকেটও তৈরি করে ফেলেছিলেন। স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য বাবার জাল ডেথ সার্টিফিকেটও বানিয়েছিলেন। মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ ওই ছাত্রকে আটক করেছে।
তদন্ত করে কী কী গোপন তথ্য উঠে এসেছে
ভারতীয় এই পড়ুয়ার নাম আরিয়ান আনন্দ। ২০২৩-২৪ সেশনের জন্য পেনসিলভানিয়ার লেহাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাল নথি জমা দিয়েছিলেন তিনি। আনন্দের জালিয়াতি প্রকাশ্যে আসে যখন তিনি সোশ্যাল মিডিয়া সাইট রেডিটে মিথ্যার উপর আমি আমার জীবন এবং ক্যারিয়ার তৈরি করেছি শিরোনামের একটি পোস্ট শেয়ার করেছিলেন। এতে প্রতারণার পুরো ঘটনা খুলে বলেছিলেন আনন্দ। কিছুক্ষণ পর অবস্থা বেগতিক হতে পারে দেখে তিনি নিজেই পোস্টটি মুছেও দিয়েছিলেন।
পোস্টে কী লিখেছিলেন আনন্দ
আনন্দ পোস্টে লিখেছিলেন যে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার জন্য principal@schoolname.com এর মাধ্যমে একটি জাল ইমেল তৈরি করেছিলাম। এরপর সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুল শেষ করে, সিনিয়র স্কুলে এসে নিজেকে সফল দেখানোর জন্য মিথ্যা সার্টিফিকেট তৈরি করেছিলেন তিনি। এ ছাড়া আর্থিক সহায়তা পেতে বাবার মৃত্যুর ভুয়ো সার্টিফিকেটও তৈরি করা হয়েছিল। রেডডিট টিম সবটা পড়ে লেহি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিভাগকে পোস্টের বিষয়ে জানাতেই সবটা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: (Study Abroad: কানাডা না আমেরিকা! সবচেয়ে বেশি কোন দেশে পড়তে যাচ্ছেন ভারতীয়রা? খোলসা করল বিদেশ মন্ত্রক)
এরপর তদন্তে জানা গিয়েছে যে আনন্দ iLovePDF ওয়েবসাইট ব্যবহার করে মৃত্যু শংসাপত্র এবং নথি পরিবর্তন করেছিলেন। একাডেমিক নথিগুলি অ্যাডোব ফটোশপ ব্যবহার করে পরিবর্তন করা হয়েছিল। মামলার তদন্তের পর, কমনওয়েলথ অফ পেনসিলভানিয়া আনন্দের বিরুদ্ধে জালিয়াতি, নথিতে কারচুপি এবং প্রতারণার মাধ্যমে পরিষেবা নেওয়ার সুবিধা পাওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছিল।
আরও পড়ুন: (Coaching Centres to be closed: ১০ বছরের মধ্যে ৯০ শতাংশ কোচিং বন্ধ হয়ে যাবে, বলছেন সুপার ৩০-র আনন্দ কুমার)
কী শাস্তি পেয়েছেন আনন্দ
তদন্তে আরও জানা গিয়েছিল, আনন্দের বাবা বেঁচে আছেন এবং ভারতে আছেন। এর ভিত্তিতে আনন্দকে জালিয়াতি, প্রতারণা এবং পরিষেবার অপব্যবহারের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ম্যাজিস্ট্রিয়াল ডিস্ট্রিক্ট জজ জর্ডান নিসলে ১২ জুন আনন্দকে ২৫,০০০ মার্কিন ডলারে জামিন দিয়ে হাজির করেছিলেন। জালিয়াতির জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। দোষের শাস্তি হিসাবে নর্থহ্যাম্পটন কাউন্টি জেলে এক থেকে তিন মাসের কারাদণ্ডও দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। তবে, আর্থিক সহায়তা হিসাবে আনন্দকে দেওয়া ৮৫,০০০ মার্কিন ডলার ফেরত না চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লেহাই। আনন্দকে ইতিমধ্যেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁর দায়িত্ব গিয়ে পড়েছে ইউএস ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের কাঁধে। চুক্তির অংশ হিসাবে, আমেরিকার মায়া ত্যাগ করে এবার ভারতে ফিরে আসতে হবে আনন্দকে।