বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান edtech স্টার্টআপ BYJU's। কিন্তু এই চড়া ভ্যালুয়েশনই সার। দেদার লোকসানে ডুবে ব্যবসা। আর সেটা সামাল দিতেই বিভিন্ন বিভাগ থেকে প্রায় ২,৫০০ কর্মী ছাঁটাই করছে সংস্থা। BYJU's নিজেই একটি বিবৃতি এই বিষয়ে জানিয়েছে।
'অপ্রয়োজনীয়তা ও কাজের সদৃশতা এড়াতে এবং প্রযুক্তিকে আরও ভালভাবে ব্যবহার করে, BYJU's-এর ৫০,০০০ কর্মীর প্রায় পাঁচ শতাংশকে পর্যায়ক্রমে প্রোডাক্ট, কনটেন্ট, মিডিয়া এবং প্রযুক্তি দল থেকে ধাপে ধাপে 'রেশনালাইজড' করা হবে,' বিবৃতিতে জানিয়েছে সংস্থা।
BYJU's আরও জানিয়েছে যে, Toppr, মেরিটনেশন, টিউটরভিস্তা, স্কলার এবং হ্যাশলার্ন-সহ তার ইন্ডিয়া কে-10 অধিগ্রহণগুলিকে একটি একক ব্যবসায়িক ইউনিটে একত্রিত করা হবে। তবে আকাশ এবং গ্রেট লার্নিং দু'টি পৃথক সংস্থা হিসাবে কাজ করতে থাকবে।
'একটি পরিণত সংস্থা হিসাবে, যারা কিনা তার বিনিয়োগকারী এবং স্টেকহোল্ডারদের দায়িত্ব গুরুত্ব সহকারে নেয়, আমরা বিপুল আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি বৃদ্ধি নিশ্চিত করার লক্ষ্য রাখছি। এই পদক্ষেপগুলির আমাদের ২০২৩ সালের মার্চের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে লাভজনক হয়ে উঠতে সহায়তা করবে,' জানালেন মৃণাল মোহিত, সিইও, BYJU’S India বিজনেস।
এর আগে জুন মাসে, মানিকন্ট্রোল-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, Byju's তার বিভিন্ন সংস্থা যেমন, Toppr, WhiteHat Jr, এবং সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং, অপারেশন, কনটেন্ট এবং ডিজাইন টিম জুড়ে মোট ২,৫০০ জন স্থায়ী এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মী ছাঁটাই করছে।
FY21 বার্ষিক রিপোর্টে দিতে দিতে এর আগে প্রায় ১ বছরের বিলম্ব হয়েছিল। তাছাড়া বিপুল সংখ্যক ছাঁটাই এবং ফান্ড সংগ্রহের সমস্যার কারণে গত ৬ মাস ধরে Byju's-এর অন্দরমহলের হাওয়া ভাল নয়।
'এর চেয়ে কঠিন কিছুই হতে পারে না। যদি এটি আমাদের থামাতে না পারে, তাহলে আমি হলফ করে বলতে পারি যে, অন্য কিছুই আর আমাদের আটকাতে পারবে না,' মানিকন্ট্রোলকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা বাইজু রবীন্দ্রন। তিনি এটিও বলেছিলেন যে, তাঁর সংস্থার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আর সেই দুশ্চিন্তায় তিনি রাতে ঘুমোতে পারছেন না।
২০২০-২১ অর্থবর্ষে ১৪ শতাংশের আয় সংকোচন হয়েছে সংস্থার। যদিও তাদের দাবি, অ্যাকাউন্টিং পদ্ধতিতে পরিবর্তনের কারণে এমনটা হয়েছে। ৪,৫৮৯ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থা।
আর সেই লোকসান কাটিয়ে উঠতে ছাঁটাইয়ের পথে সংস্থা। এক্ষেত্রে লক্ষণীয়, বুধবারই সংস্থা জানিয়েছে যে, আগামী বছর তাদের আরও ১০,০০০ শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। তা-ই যদি হয়, তবে এখন ২,৫০০ ছাঁটাই কেন? প্রশ্ন অনেকের।
এমনিতেই এখন বাইজুসে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষক কাজ করেন।
এঁদের মধ্যে অনলাইনে জনপ্রিয় বহু শিক্ষক রয়েছেন। তাঁদের বিপুল অঙ্কের বেতন দেয় সংস্থা। এমনকি ইঞ্জিনিয়ারিং, সেলস টিমে ফ্রেশারদেরই ৮-১০ লক্ষ টাকার বার্ষিক প্যাকেজ দিচ্ছে বাইজুস। শাহরুখ খানের মতো প্রথম সারির সেলিব্রেটিকে সংস্থার বিজ্ঞাপনের মুখ করা হয়েছে। এমনকি ভারতীয় ক্রিকেট টিমের জার্সিতেও বাইজুসের নাম। ফলে সেখানে কী বিপুল স্পনসরশিপ ব্যয় করছে সংস্থা, তা সহজেই অনুমেয়।
অথচ সেই সংস্থাই চলছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার লোকসানে!
বাইজুসের সেলস টিমের উপর কোর্স বিক্রির তুমুল চাপ দেওয়া হয়। এই বিষয়ে প্রাক্তন কর্মীদের অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলেছেন। অথচ পড়ুয়াদের মধ্যে বাইজুসের কোর্সের জনপ্রিয়তা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। বিভিন্ন অনলাইন রিভিউ-ই তার প্রমাণ।
সব মিলিয়ে বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বেশি ভ্যালুয়েশনের(২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) স্টার্ট-আপের ভবিষ্যত স্ট্র্যাটেজি কী হবে, সেটাই দেখার।