বাজারে যেন আগুন, কিছু কিনতে গেলেই পকেটে পড়ছে টান, নতুন প্রযুক্তি আসায় ভারতের অর্থনীতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দাবি করা হচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হাজার হাজার চাকরিও খেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, কলেজ পাস করে কীভাবে কর্মজীবনের পথে এগোলে সফলতা সম্ভব, তা ভেবেই পাচ্ছেন না তরুণ পেশাদাররা।
সাধারণত বলা হয়, পশ্চিমি দেশগুলির তুলনায় ভারতে জীবনযাত্রার খরচ কম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, জীবনযাত্রার খরচ বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতি এখন নতুন স্নাতকদের ক্রমাগত প্রভাবিত করছে। কারণ এই পরিবর্তিত চাকরির বাজারে তাঁদেরই ক্যারিয়ার শুরু করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, অক্টোবর ২০২৪-এ, ভারতের মুদ্রাস্ফীতির হার আগের মাসের ৫.৪৯ শতাংশ থেকে ৬.২১ শতাংশে পৌঁছেছিল, যা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশিই। এটি ছিল এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির হার।
আজকের স্নাতকদের জন্য, শুধুমাত্র আগের মত একই গতিতে কর্মজীবনের পথ অনুসরণ করা যথেষ্ট নাও হতে পারে। কর্মজীবনে আরও ভাল করার জন্য বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা, স্মার্টভাবে আর্থিক পরিকল্পনা এবং ক্রমবর্ধমান শিল্পের উপর ফোকাস করাও গুরুত্বপূর্ণ। ভাল খবর হল যে ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি অনেক ভাল কাজের সুযোগ দেয়, বিশেষ করে যারা দ্রুত নতুন দক্ষতা শিখে নিতে পারেন তাঁদের জন্য।
আরও পড়ুন: (WBJEE 2025 রেজিস্ট্রেশন শুরু কবে থেকে? কীভাবে আবেদন? সব জানুন এখানে)
কলেজ পাস করে কীভাবে কর্মজীবন শুরু করলে সফলতা নিশ্চিত
প্রযুক্তি দ্রুত পরিবর্তিত হয়ে চলেছে। এমন সময়ে প্রযুক্তি খাত, আর্থিক খাত এবং কনসাল্টিং খাতে নতুন স্নাতকরা বেশি বেতনের ভালো চাকরির আশা রাখতেই পারেন। জানা গিয়েছে, ২০২৫ অর্থবর্ষে আইটি সেক্টর আরও ২০-২৫ শতাংশ নতুন স্নাতক নিয়োগ করতে পারে৷ এআই, মেশিন লার্নিং, ইন্টারনেট অফ থিঙ্কস (আইওটি) এবং জেনারেটিভ এআই-এর মতো নতুন প্রযুক্তি ডেটা অ্যানালাইসিস, প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট এবং সাইবার নিরাপত্তায় আরও চাকরির সুযোগ তৈরি করছে। এছাড়াও, ডিজিটাল পরিবর্তনের কারণে গ্লোবাল কোম্পানিগুলি ২০২৪ সালে আরও ৪০ শতাংশ নতুন স্নাতক নিয়োগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ব্যাঙ্কিং এবং ফাইনান্স সেক্টরগুলি, বিশেষ করে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কিং, ফিনান্সিয়াল কনসাল্টিং এবং ফিনটেক-এ কাজের শুরুতেই বেতন ভালো দেওয়া হয়। বিশ্বজুড়ে বিমানে বেশি যাতায়াত করেছে মানুষ, তাই এখন এভিয়েশনেও প্রচুর চাকরির সুযোগ রয়েছে। কনসাল্টিং সংস্থাগুলিও ভাল বেতন দিচ্ছে। এই ক্ষেত্রগুলি শুধুমাত্র বড় অঙ্কের বেতন দেয়, তা নয় বরং আপনার কর্মজীবনে দ্রুত শিখতে এবং বৃদ্ধির সুযোগও দেয়, যা উচ্চাভিলাষী স্নাতকদের জন্য দুর্দান্ত হতে পারে।
প্রথম দিকে টাকা বাঁচানো জরুরি
মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য, তরুণ পেশাদারদের তাঁদের ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে ভাল আর্থিক অভ্যাস শুরু করতে হবে। একটি ভালো বেতনের চাকরি পাওয়া অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে সেই টাকার অঙ্ক সঠিক উপায়ে ব্যবহার করাও ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। তিন থেকে ছয় মাস ইনকাম করা হয়ে গেলেই, সেই আয়ের কিছু অংশ দিয়ে একটি জরুরী তহবিল তৈরি করার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। মিউচুয়াল ফান্ড, স্টক এবং ফিক্সড ডিপোজিটের মতো বিভিন্ন বিকল্পে বিনিয়োগের বিষয়েও চিন্তা করা উচিত। এর দরুণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তেই থাকবে বেতন এবং মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে রক্ষা করতেও সহায়তা করবে।
কোম্পানি-প্রদত্ত অবসর তহবিল এবং স্বাস্থ্য বীমার মতো সুবিধাগুলি ব্যবহার করাও অর্থ সাশ্রয়ের আরও একটি স্মার্ট উপায়। একটি বাজেট নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী চলতে হবে। যে কাজটা করার বা কেনার আপনার প্রয়োজন নেই, এমন জিনিসগুলি থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে হবে। স্নাতকরা অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের জন্য ফ্রিল্যান্স কাজ বা পার্ট টাইম কাজের সন্ধান করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, কন্টেন্ট তৈরি যোগাযোগ আপনার দক্ষতা উন্নত করতে সাহায্য করে, আয়ের একটি অতিরিক্ত উৎসও প্রদান করতে পারে।
ক্যারিয়ারের অগ্রগতির জন্য স্কিল ডেভেলপমেন্ট
আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল চাকরির বাজারে, প্রতিযোগিতামূলক থাকার জন্য নতুন দক্ষতা শেখা বা স্কিল ডেভেলপমেন্ট চালিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল প্রযুক্তির বৃদ্ধি ডেটা বিশ্লেষণ, ডিজিটাল নলেজ, এআই/এমএল-র মতো দক্ষতার উচ্চ চাহিদা তৈরি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে, কর্পোরেট প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া এবং বড় কোম্পানিতে কাজের জন্য চ্যালেঞ্জগুলি স্নাতকদের বড় সাহায্য করতে পারে। এই ইভেন্টগুলি অ্যানালাইসিস দক্ষতা উন্নত করে এবং ইন্টার্নশিপ বা চাকরির অফার আরও বেশি আসতে পারে। কোম্পানিগুলি কেবলমাত্র আপনার ডিগ্রির চেয়ে আপনার দক্ষতার বিষয়ে বেশি যত্নশীল এবং এই ইভেন্টগুলি আপনাকে নিয়োগকারীদের জন্য আপনি কী করতে পারেন তা দেখানোর অনুমতি দেয়। এরই পাশাপাশি, ক্লাউড কম্পিউটিং, ব্লকচেইন এবং ইউএক্স ডিজাইনের মতো নতুন ক্ষেত্রে সার্টিফিকেশন পাওয়া আপনাকে আরও বেশি নিয়োগযোগ্য করে তুলতে পারে।
সঠিক ক্যারিয়ারের পথ বেছে নিতে হবে
মুদ্রাস্ফীতিকে হারাতে, দ্রুত বর্ধনশীল শিল্পে সঠিক ক্যারিয়ার বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তি খাত, বিশেষ করে এআই, সাইবারসিকিউরিটির মতো খাতে দারুণ সুযোগ রয়েছে। টেলিমেডিসিন এবং বায়োটেকনোলজির উপর আরও ফোকাস সহ স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রটিও বিজ্ঞানের স্নাতকদের জন্য একটি ভাল মাধ্যম হতে পারে। কন্টেন্ট তৈরি এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মতো ক্যারিয়ারগুলিও ভাল বিকল্প হয়ে উঠছে। যেহেতু কোম্পানিগুলি আরও ডিজিটাল স্ট্রাটেজি ব্যবহার করছে, তাই এক্ষেত্রে দক্ষদের জন্য উচ্চ চাহিদা রয়েছে। ক্রমবর্ধমান ক্রিয়েটর অর্থনীতির বৃদ্ধি স্নাতকদের তাঁদের নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করার এবং একই সময়ে অর্থ উপার্জন করার সুযোগ দেয়।
প্রসঙ্গত, এই পরিবর্তনশীল চাকরির বাজারে একটি ভালো ক্যারিয়ার বেছে নেওয়ার অর্থ হল ভাল বেতন, চাকরির নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যতে আরও সফলতা। বাজারে ট্রেন্ডিং কাজের ধরন রিসার্চ করে, প্রয়োজনীয় স্কিল শিখে, এগিয়ে গেলে আপনাকে সফল হতে কেউ আটকাতে পারবে না।