করোনা প্রকোপের জেরে বন্ধ হতে চলেছে বহু বেসরকারি স্কুল। আর্থিক উৎস যেমন পুরোপুরি বন্ধ তেমনই কোনও বিকল্প তহবিল না থাকায় সংকটের মুখে পড়েছে স্বল্প বাজেটের বেসরকারি স্কুলগুলি।
ভারতে বেশিরভাগ প্রাইভেট স্কুলগুলির প্রায় ৮০ শতাংশই স্বল্প-বাজেটের স্কুল। এখানে শিক্ষার্থীদের কম ফি দিতে হয়। অভিভাবকদের কাছে এই স্কুলগুলি সরকারি স্কুলের বিকল্প।
থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর সিভিল সোসাইটির (সিসিএস) মতে, কম বাজেটের 'প্রাইভেট স্কুলগুলি সমাজের এমন একটি প্রসারিত অংশ' যা অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের চাহিদা পূরণ করে এবং অনেক ক্ষেত্রে কয়েক জন মিলে নিজেদের বাড়িতেই এই ধরনের স্কুল চালান।
সেন্ট্রাল স্কোয়্যার ফাউন্ডেশন (সিএসএফ) প্রকাশিত 'স্টেট অফ দ্য সেক্টর-প্রাইভেট স্কুল ইন ইন্ডিয়া' শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ভারতীয় বেসরকারি স্কুলগুলিতে ৭০ শতাংশেরও বেশি শিক্ষার্থীদের প্রতিমাসে ফি বাবদএক হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়। যেখানে ৪৫ শতাংশের প্রতি মাসে খরচ ৫০০ টাকারও কম। মহামারী ও লকডাউনের ফলে কর্মসংস্থান সাংঘাতিকভাবে প্রভাবিত হয়। এই পরিস্থিতিতে, কম বাজেটের সমস্ত বেসরকারি স্কুলগুলিতেই আয়ের প্রধান উৎসে ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা। স্কুল বন্ধ থাকলেও ভাড়া, ট্যাক্স,বিদ্যুতের বিল-সহ একাধিক খাতে খরচ নিয়মিত ভাবেই মেটাতে হচ্ছে।
জুনে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, করোনা আবহে কম বাজেটর বেসরকারি স্কুলগুলিতে ফি দেওয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। ইন্ডিয়ান স্কুল ফিনান্স সংস্থা নামে একটি নন-ব্যাংকিং আর্থিক সংস্থা যা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির আর্থিক সংস্থান করে, তারাও এবিষয়ে একটি সমীক্ষা চালায়। শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রের ১,৬৭৮ জনের সঙ্গে একটি প্রশ্নোত্তর পর্বে ছিলেন বেসরকারি স্কুল, কলেজ এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ সংস্থাগুলির মালিক এবং অধ্যক্ষরা। সেখানে স্বল্প বাজেটের বেসরকারি স্কুলগুলির প্রতিনিধিরাও ছিলেন।
তাঁদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তাঁদের মধ্য উপস্থিত ৮৫.৫ শতাংশই ফি আদায়ের ক্ষেত্রে সমস্যাকে বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেছেন। সমীক্ষা অনুসারে, এর মূল কারণগুলি হল - অভিভাবকদের অনেকেরই আর্থিক সংস্থান বন্ধ (৫৫ শতাংশ) নেই, লকডাউনের কারণে (২৪.৫ শতাংশ) ফি জমা করার জন্য স্কুল বা ব্যাংকে যেতে পারছেন না, দেরিতে বেতন হওয়ায় (১২ শতাংশ) সময়মতো ফি দিতে পারেননি এবং অনলাইন ক্লাসের (৮.৫ শতাংশ) ফি দিতে করতে রাজি নন।
এই সমীক্ষাটিও টি সিএসএফ এর 'স্টেট অফ সেক্টর - প্রাইভেট স্কুল ইন ইন্ডিয়ার' শীর্ষক সমীক্ষার রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দীর্ঘ সময় ধরে স্কুল বন্ধ থাকা, পরীক্ষা স্থগিত করা এবং বড় অংশের শিক্ষার্থীদের ফি জমা না দেওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে স্বল্প বাজেটের স্কুলগুলির রাজস্বে।সিএসএফের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিক্রম দৌলত সিং বলেন, স্বল্প বাজেটের সমস্ত বেসরকারি স্কুল তাঁদের জানিয়েছিল যে লকডাউন চলাকালীন কোনও ফি নেওয়া হয় নি এবং এই কারণেই বহু শিক্ষকের বেতনও হয়নি।
তিনি জানিয়েছেন, 'করোনা র কারনে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে সমস্ত স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় স্কুলগুলিতে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় এবং ফি নেওয়া হয়। অনেক স্কুল শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শেষ শিক্ষাবর্ষের ফিও নিতে পারেনি।
তাঁর মতে, মহামারী নিয়ন্ত্রণে আসার পর যতদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় এই সমস্যা সমাধানের কোনো উপায় নেই। কারণ বেসরকারী স্কুল হওয়ায় এখানে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে না। ভারত সরকারের প্রাক্তন সচিব, অনিল স্বরূপ, মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের শিক্ষা বিভাগে কর্মরত। তাঁর মতে এটি একটি 'অভূতপূর্ব সময়' এবং সমস্যার সমাধান সরাসরি অংশীদারদেরই করতে হবে। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার কার ও পক্ষেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কারণ অভিভাবকদের যেমন ফি দিতে বাধ্য করা যাবেনা তেমনই স্কুলগুলিকেও বাধ্যতামূলকভাবে ফি সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া যাবে না।