বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন নেই। কোনও স্থায়ী অধ্যাপক বা শিক্ষকও নেই। স্থায়ী উপাচার্যও নেই। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও কৃষ্ণনগরের কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের এমনটাই হাল । এরই প্রভাব পড়ছে ছাত্রীদের উপর। পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে কারও কারও কথায়, রাজ্য জুড়ে পড়ুয়াদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় অনীহা তৈরি হচ্ছে ইদানিং। তারই প্রতিফলন হচ্ছে কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারায়। তবে কর্মীদের অনেকের কথায়, পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে বলেই অনেক ছাত্রী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার উৎসাহ পাচ্ছেন না। বরং কাছাকাছির মধ্যে থাকা বর্ধমান বা কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়কেই উচ্চশিক্ষার জন্য বেছে নিচ্ছেন পড়ুয়ারা।
(আরও পড়ুন: সন্তানের বোর্ড পরীক্ষায় শুধু শিক্ষিকারা পাবেন চাইল্ড কেয়ার লিভ!)
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে চালু হয় কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়। নিজস্ব ভবন ছিল না বলে প্রথমে কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস হচ্ছিল। বছরখানেক পর কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের নতুন ভবনে এই ক্লাস শুরু হয়। কৃষ্ণনগর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের আবাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজের জন্য ব্যবহার করা হত।
কৃষ্ণনগরের ছাত্রীদের জন্য কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয় চালুর কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন তৈরির জন্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু সেই টাকা এখনও পূর্ত দফতরের হাতে আসেনি। ফলে ভবন তৈরির কাজ বিশ বাঁও জলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ জন শিক্ষাকর্মী। তাদের মধ্যে কেউই স্থায়ী নন। অন্যদিকে ১৪৪ জন অতিথি অধ্যাপক রয়েছেন বিশ্ববিদ্য়ালয়ে। এছাড়া, কোনও স্থায়ী অধ্যাপক নেই। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০টি বিষয়ে মোট আসন সংখ্যা ৪৬০টি। চলতি বছরে ভর্তি হয়েছেন ৩৪৩ জন। গত বছর এই সংখ্যাটা ছিল ৪৩৭ জন।
(আরও পড়ুন: বাংলা সহ দেশে শিক্ষকদের শূন্যপদ কত, জানিয়ে দিল কেন্দ্র)
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য কাজল দে। তিনি বর্তমানে ডায়মন্ড হারবার উইমেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। ফলে নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারেন না তিনি। অন্যদিকে ফিনান্স অফিসার, কন্ট্রোলার, রেজিস্ট্রার সকলেই অবসরপ্রাপ্ত। তাঁদের নতুন করে নিয়োগ করলেও সকলে নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয় আসতে পারেন না।
সমস্যা পড়ুয়াদেরও। কৃষ্ণনগর সরকারি মহাবিদ্যালয়ে বসেন রেজিস্ট্রার ও উপাচার্য। আর পঠনপাঠন হয় কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের নতুন ভবনে। দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার। ফলে সামান্য কোনও কাজেও সমস্যা তৈরি করেছে দূরত্ব। তাছাড়া বিদ্যালয় চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস করতে গিয়ে নানারকম অস্বস্তির মুখেও পড়তে হয়। সে নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলেই দাবি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিকাঠামোর কথা সকলেই কমবেশি জানেন। ফলে খুব বাধ্য না হলে কেউই এখানে ভর্তি হতে চান না বলে দাবি অধ্যাপকের একাংশের। যেমন ছাত্রীসংখ্যা কম হওয়ায় গত বছরে অঙ্কের ব্যাচ শুরু করা যায়নি। মাত্র একজন ভর্তি হয়েছিল সেই বিভাগে। পরিকাঠামোর এই অবস্থার উন্নতি কবে হবে, সে কথা কেউই জানে না।