বানান যাই লেখা হোক, পুরো নম্বর পাওয়ার বন্দোবস্ত করেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।যার জেরে রাজ্যজুড়ে শুরু হয়ে বিতর্ক। আর তার মধ্যেই এবার নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এর আগে হেড এগজামিনারদের কাছে মাধ্যমিকের উত্তরপত্র মূল্যায়নের যে নির্দেশিকা এসেছে তাতে লেখা, 'উত্তর শুদ্ধ হলে পুরো মার্কস দেবেন, বানানে হেরফের থাকলেও মার্কস কাটা যাবে না।'
অবশেষে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অবস্থান স্পষ্ট করে বিবৃতি দিলেন পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। বুধবার তিনি জানান 'বানানে ভুল হলে নম্বর কাটা যাবে না এই ধরনের কোন নির্দেশিকা পর্ষদ এর তরফে দেওয়া হয়নি'।তিনি এও জানান 'মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে করা মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্রে স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে বানানে ভুল হলে নম্বর কাটা যাবে।'কার্যত বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে বলেই পর্ষদ সভাপতি ইঙ্গিত করেন।তাঁর ব্যাখ্যা, এখন নানা ধরনের বানান বিধি রয়েছে। দেখা গিয়েছে, পরীক্ষার্থীরা অনেক সময় এক শব্দের দু’রকম বানান লেখে। বিধিভেদে দু’রকম বানানই সিদ্ধ। সে-ক্ষেত্রে দু’টিতেই নম্বর দেওয়া উচিত। তার পরেই দেশের রাজধানীর বানানের উদাহরণ দিয়ে পর্ষদ-প্রধান বলেন, 'কেউ ‘দিল্লি’ লিখলে তাকে যেমন নম্বর দিতে হবে, কেউ ‘দিল্লী’ লিখলে তাকেও বঞ্চিত করা যাবে না। কেননা দু’রকম বানানেরই চল আছে। নম্বর কাটব কী করে? বানানের হেরফের বলতে এটাই বোঝানো হয়েছে।'
এমনিতে বাংলা বানান নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। কোন বানানটা ঠিক, কোন বানানটা ভুল তা নিয়ে বিভ্রান্তি শিক্ষামহলেই। কেউ 'বাড়ি' লিখলে সে বাড়ি মেরামত হয়ে 'বাড়ী' হয়ে যাওয়া বিচিত্র নয়। মাসী না মাসি, পিসী না পিসি তা নিয়ে পরিবারেই দ্বিমত আছে। তবে সব দিক বিচার করলে বাংলা বানান নিয়ে বাঙালির বিশেষ মাথাব্যথাও নেই। সাইনবোর্ডে, হোর্ডিংয়ে, হিসেবের খাতায়, ভুল বানানের ছড়াছড়ি দেখে মনে হয় না, বানান নিয়ে আদৌ কারও দুশ্চিন্তা আছে। ইংরেজি বানান ভুল হলে খুব লজ্জা, কিন্তু বাংলা বানান ভুল করলে লজ্জা তো নেইই, বরং যেন খানিক গৌরবের।
এই রকম একটা প্রেক্ষাপটে বানান ভুল করলেও নম্বর দেওয়াটা কি সঙ্গত? এটা কি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বানানের প্রতি আরও উদাসীন করে তুলবে না? ভাষাবিদ তথা রাজ্য সরকারি নিযুক্ত পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি রিভিউ কমিটির প্রাক্তন সদস্য পবিত্র সরকার বলেন, 'শুদ্ধ বানান লেখার বিষয়টি অগ্রাহ্য করা হলে পড়ুয়ারা বানান সম্পর্কে আগ্রহ হারাবে ও আতঙ্ক কমে যাবে। কারণ, পর্ষদের নির্দেশে ভুল বানান লিখলেও পুরো নম্বর পাওয়া যাবে। তাতে বিপুল নম্বর পেয়ে পাশ করা যাবে ঠিকই, কিন্তু সমাজে তাঁদের কোনও গুরুত্ব থাকবে না। তাই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের উচিত, সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা। বাংলা ও ইংরেজির পাশাপাশি অন্য বিষয়ের বানানেও একটা বাঁধন থাকা উচিত। ইতিহাসের পাশাপাশি ভূগোল, বিজ্ঞানের বিষয়ে বানানে খুব কড়াকড়ি না-থাকলেও নম্বরের একটা শাস্তি থাকা কি উচিত নয়?'