একটা ছোট্ট ভুলেই, কম্পিউটারের সম্পূর্ণ মেমোরি ডিলিট করে ফেলেছিলেন নারায়ণ মূর্তি। বস এসে তখন ধিক্কার দেননি তাঁকে। কিন্তু এর পরিবর্তে, তাঁর বস এমন একটি কাজ করে গিয়েছিলেন, যার মাধ্যমে জীবনের একটি বিরাট পাঠ পড়েছিলেন মূর্তি। এদিন প্রকাশ্যেই সবটা বললেন মূর্তি।
ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তি হওয়ার প্রয়োজন নেই। দেশের স্বার্থে নিজেকে নিজের মতো করে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সম্প্রতি, 'টিচ ফর ইন্ডিয়া'স লিডারস' ইভেন্টে শিক্ষার্থীদের এমনই কিছু দুর্দান্ত পরামর্শ দিয়েছেন ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এদিন আসলে, একজন ১২ বছর বয়সী পড়ুয়া তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে কীভাবে তাঁর মতো হতে হবে। এরই উত্তরে মূর্তি বলেছিলেন, ‘আমি চাই না তুমি আমার মত হও। সারা দেশের মঙ্গলের জন্য আমি চাই তুমি আমার চেয়ে আরও ভালো হও।’
এদিন, নারায়ণ মূর্তি মাউন্ট এভারেস্ট স্কুলের ইভেন্টে পৌঁছেছিলেন। সেখানেই তিনি স্কুলের সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণীর পড়ুয়াদের সঙ্গে কিছুটা মূল্যবান সময় কাটান। জীবনের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ শেয়ার করেন৷ নিজের সফলতার জার্নি শুরু হওয়ার আগে, ঠিক কীভাবে মূর্তির বাবা, মা, শিক্ষক এবং অফিসের বস, তাঁর এগিয়ে যাওয়ার পথে অবদান রেখেছিলেন।।তাঁদের থেকে কীভাবে কী শিখেছেন, সবটাই শেয়ার করেছেন ছোটদের সঙ্গে।
জীবনে এগিয়ে চলার জন্য, সময়কে বোঝা, সময়কে মেনে চলা, শৃঙ্খলা মেনে চলা, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আর এই জিনিসটাই নারায়ণ মূর্তি, তাঁর বাবার কাছ থেকে শিখে ফেলেছিলেন। এরই সঙ্গে তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে কীভাবে তিনি নিজের বৃত্তির টাকা, ভাইয়ের সঙ্গেও ভাগ করে নিতেন। আর এই সুশীল মনোভাব, দেওয়ার অনুপ্রেরণা তিনি পেয়েছিলেন নিজের মায়ের থেকে।
তিনি ছোটবেলায় মহাভারত পড়েছিলেন। মহাভারতের কর্ণ চরিত্রটি অনুপ্রাণিত করেছিল তাঁকে। কর্ণ চরিত্রটি থেকে তিনি দয়ালু এবং উদার হতে শিখেছিলেন। নারায়ণ মূর্তিকে, দায়িত্বের পাঠ পড়িয়েছিলেন তাঁর স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তাঁর স্কুলের দিনগুলিতে কীভাবে সম্পদের ভাল যত্ন নিতে হয়, সম্মানের সঙ্গে আচরণ করতে হয়। এ সবই শিখেছিলেন তিনি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের থেকে।
ভুল শুধরে দিতে বস যা করেছিলেন
টিমওয়ার্ক এবং নেতৃত্বের গুরুত্বের উপর এদিন জোর দিয়েছেন মূর্তি। প্যারিসে একটি উন্নত অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করার সময়, বড়সড় ভুল করে ফেলেছিলেন। এই ভুল থেকে বেরিয়ে আসার সময়, যে শিক্ষা তিনি পেয়েছিলেন, সেই গল্পটিও এদিন শেয়ার করতে ভোলেননি কিন্তু৷
এদিন মূর্তির কথায়, এক শুক্রবার সন্ধ্যায়, তিনি একটি প্রোগ্রাম টেস্ট করার সময় গুরুতর ভুল করে ফেলেছিলেন, যা কম্পিউটার থেকে সম্পূর্ণ মেমরি মুছে ফেলেছিল। সমস্যাটি সংশোধন করতে তাঁর হাতে বেশি সময়ও ছিল না। এই সময় সমস্যা সমাধানের জন্য মরিয়া হয়ে, নিজের বস কলিনকেই ডাকেন তিনি। অবিলম্বে নারায়ণ মূর্তিকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন তাঁর বস। এরপর টানা ২২ ঘণ্টা অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর, মূর্তি সিস্টেমটি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এদিন মূর্তির এই কাজের ক্রেডিটটি কিন্তু নিজে নেননি তাঁর বস, এতটা সময় দিয়ে কাজটা করার জন্য মুর্তিকেই বাহবা দিয়েছিলেন। এই অভিজ্ঞতা থেকে, মূর্তি নেতৃত্বের একটি অপরিহার্য পাঠ শিখেছেন।