একসময় একবেলা খাবার জোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে। কোনওভাবে রুটি এবং চাটনি খেয়ে দিন কাটিয়েছেন। তারওপর বাবাকে হারিয়ে মাথার উপর ছাদটুকুও হারিয়েছিলেন। সেই শত প্রতিকূলতার মধ্যেও মেডিক্যালের প্রবেশিকা পরীক্ষায় (নিট) সফল হয়ে নজির গড়লেন রাজস্থানের কোটার বাসিন্দা বছর কুড়ির প্রেরণা সিং। আসলে স্বপ্ন পূরণ করার জেদ এবং অদম্য ইচ্ছা থাকলে কোনও প্রতিকূলতায় যে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, তা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন প্রেরণা। নিটে সফল হয়ে এখন অনেকেরই অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন এই তরুণী।
জানা গিয়েছে, প্রেরণার বাবা একজন অটোচালক ছিলেন। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে তিনি বাড়ি তৈরি করেছিলেন। এরইমধ্যে তিনি মারা যান। এরপরে সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ল প্রেরণা ও তার মায়ের কাঁধে। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় তাঁদের বাড়ি খালি করার নোটিশ পাঠায় সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক। বাবার মৃত্যুর পরে একবেলা খাবার জোগাড় করতে গিয়েই হিমশিম খেতে হয়েছে তাঁদের। তাঁর পরিবার কোনওভাবে রুটি এবং চাটনি খেয়ে দিন কাটিয়েছেন। ক্ষুধার্ত পেতেই রাতে ঘুমোতে হয়েছে। কিন্তু এত প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকেছেন প্রেরণা। ক্ষুধার্ত পেটেই তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে গিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত নিটে সফল হলেন। সফল হওয়ার আনন্দে কেঁদে ফেলেন প্রেরণা এবং তাঁর মা।
জানা গিয়েছে, কোটার মহাবীর নগরের বাসিন্দা প্রেরণা নিট ইউজি’তে ৬৮৬ তম স্থান অধিকার করেছেন, যা একটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য যথেষ্ট। জানা যায়, ২০১৮ সালে প্রেরণার বাবা ক্যানসারে মারা যান। সেই সময় তিনি যখন দশম শ্রেণিতে পড়ছিলেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীর মৃত্যুতে সংসার চালানো মুশকিল হয়ে গিয়েছিল। তাদের আর্থিক অবস্থাও ভালো ছিল না। এই সময়ের মধ্যে প্রেরণার পরিবার তাদের আত্মীয়দের কাছ থেকে আর্থিক সমর্থন পেয়েছে। তার মা তাঁর নিট কোচিংয়ের জন্য অর্থের ব্যবস্থা করেছিলেন। প্রেরণা কোচিংয়ের সময় ছাড়াও ১২ ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন। প্রেরণার মা তাঁর সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য প্রায় ২ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। যে ব্যাঙ্ক তাঁদের হোম লোন দিয়েছিল, সেই ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধেও তিনি মামলাও করেন। প্রেরণার এই সাফল্যে খুশি পরিবারের প্রত্যেকে।