'বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করেছেন কি?' কথা বলার ধরণটা ভালো না লাগলেও ফোনের ওপার থেকে প্রশ্নটা শুনে এতটুকুও অবাক হননি। বরং গত কয়েক বছর ধরে তো সেটা শুনতে-শুনতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন কল্যাণীর প্রত্যূষা সরকার। তবে এবার বিষয়টি নিয়ে আর চুপ করে থাকেননি। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন। যা ভাইরাল হয়ে গিয়েছে।
কী হয়েছিল ঘটনাটি?
প্রত্যূষা জানান, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করে বিএড করেছেন। স্নাতকোত্তরের পড়াশোনার মধ্যেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষাই হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে কম বেতনে বেসরকারি স্কুলের চাকরি খুঁজতে হয়। সেরকমভাবেই ফেসবুক থেকে সোদপুরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে আবেদন করেছিলেন প্রত্যূষা।
গত বুধবার ওই স্কুল থেকে ফোন করা হয়েছিল। প্রত্যূষা দাবি করেন, কোন স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছিলেন, তা জানতে চেয়েছিলেন স্কুলের প্রতিনিধি। স্কুলের নাম বলতেই প্রশ্ন করা হয়, দুটোই কি বাংলা মাধ্যমের স্কুল? উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলতেই মুখের উপর ফোন কেটে দেওয়া হয় বলে দাবি করেছেন প্রত্যূষা।
প্রত্যূষা জানান, স্রেফ বাংলা মিডিয়ামে স্কুলে পড়ার কথা শুনে যেভাবে মুখের উপর ফোন কেটে দেওয়া হয়, তা অত্যন্ত অপমানজনক ছিল। বিষয়টা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তাঁর কথায়, 'বাংলা মিডিয়াম শুনে মুখের উপর ফোন কেটে দেওয়া হয়। তবে তাতে আমি আশ্চর্য হইনি। বিষয়টা আমার মতো অনেকের সঙ্গে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। এভাবে শুধু থাপ্পড়টা আমায় মারা হয় না, মারা হয় বিধানচন্দ্র গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুল এবং কল্যাণী ইউনিভার্সিটি এক্সপেরিমেন্টাল হাইস্কুল-সহ প্রতিটি (বাংলা মাধ্যমের) স্কুলের গালেও। যেটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।'
চলতি বছর জানুয়ারিতে বগুলার একটি স্কুলে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে একইরকম অভিজ্ঞতার মুখে পড়েছিলেন প্রত্যূষা। তাঁর দাবি, সেখানে স্কুলের কোনও শিক্ষক হাজির ছিলেন না। যে দু'জন ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে পড়াশোনার দূর-দূর থেকে সম্পর্ক ছিল না। তাঁরাই ইন্টারভিউ নিতে থাকেন। প্রশ্ন করা হয়েছিল, বাংলা মাধ্যমের পড়ুয়া হয়ে কীভাবে ইংরেজি শিখেছি, তা জানতে চাওয়া হয়। কথা বলার ধরণও ভালো ছিল না। নানারকম অপমানজনক প্রশ্ন করা হচ্ছিল বলে দাবি করেন প্রত্যূষা। তিনি দাবি করেন, শেষপর্যন্ত তাঁকে বেছে নেওয়া হলেও মাত্র ৬,০০০ টাকা বেতনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। বুক ফুলিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা ৪,০০০-৫,০০০ টাকায় এসব করিয়ে নিই।’ যে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন প্রত্যূষা। সঙ্গে জন্মেছিল প্রবল ক্ষোভ।
মাস সাতেকের মাথায় সেরকম ঘটনা হওয়ায় পুরো বিষয়টি জনসমক্ষে আনার সিদ্ধান্ত নেন প্রত্যূষা। ফোন করেন সোদপুরের ওই স্কুলে। তিনি জানান, বাংলা মাধ্যমের স্কুলে পড়াশোনা করায় কেন ফোন কেটে দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে কৈফিয়ত চান। যদিও ফের ফোন কেটে দেওয়া হয় (বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল, কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলে প্রতিবেদনে জানানো হবে)।
প্রত্যূষার প্রশ্ন, ‘ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করার পরেও আমাদের এই ধরণের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে দিনের পর দিন। বাংলা মিডিয়ামে পড়ে ইংরেজি ভাষার শিক্ষক হতে চাওয়াটা কি এতটাই অপরাধের?’ সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিষয়টা আমার ব্যক্তিগত নয়। বিষয়টা অসংখ্য প্রত্যূষার। যাঁরা আমাদের চারপাশে আছেন।’