হাজারও প্রস্তুতির পরেও ইউপিএসসি ক্র্যাক করা সম্ভব হয়নি। প্রিলিমস পাস করলেও মেইনসে গিয়ে আটকে গিয়েছে। লিখিত পরীক্ষা ভালো হলেও ইন্টারভিউয়ে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন! কিংবা ইউপিএসসির জন্য এখনও সেইভাবে প্ৰস্তুত নন আপনি! চিন্তার কোনও কারণ নেই, সেরা সরকারি চাকরির পরীক্ষা এসএসসি সিজিএল আছে তো।
এসএসসি সিজিএল, একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় পরীক্ষা, ভারত সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, মন্ত্রক এবং বিভাগে বিভিন্ন গ্রুপ বি এবং সি পদে মেধাবী গ্রাজুয়েটদের নিয়োগের জন্য স্টাফ কমিশন বোর্ড (SSC) দ্বারা পরিচালিত হয়। চাকরি দেওয়া হয় সহকারি নিরীক্ষা কর্মকর্তা, সহকারি হিসাব কর্মকর্তা, আয়কর পরিদর্শক, কেন্দ্রীয় আবগারি পরিদর্শক, উচ্চ বিভাগের কেরানি, কর সহকারী, সহকারী এনফোর্সমেন্ট অফিসার, ডাক পরিদর্শক, জুনিয়র পরিসংখ্যান কর্মকর্তার মতো পদগুলোতে। এবার আপনিও কি প্রথম প্রচেষ্টায় এসএসসি সিজিএল ক্র্যাক করতে চান? তবে কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন এবং কোথায় থেকে সবটা শুরু করবেন, তা সহজেই জেনে যাবেন আজ।
- কীভাবে প্রথম চেষ্টায় এসএসসি সিজিএল পরীক্ষা ক্র্যাক করবেন
এসএসসি সিজিএল হল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জিং পরীক্ষা। তাই প্রস্তুতির জন্য সঠিক নির্দেশিকা প্রয়োজন। যা নিম্নরূপ -
১) পরীক্ষার কাঠামো সম্পর্কে জানুন
এসএসসি সিজিএল পরীক্ষার কাঠামো এবং প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে ভালো করে জানতে সিলেবাস, প্রশ্নের ধরন, কোনও নেগেটিভ মার্কিং রয়েছে কিনা সবটা প্ৰথমে জেনে নিন। আগের বছরের কাগজপত্র খুব সাবধানে ভালো করে অধ্যয়ন করুন।
২) একটি ভালো রুটিন প্ৰস্তুত করুন
পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য একটি রুটিন জরুরি। এর সাহায্যে আপনি নির্ধারিত সময়ে যথাযথ উপায়ে সম্পূর্ণ অধ্যয়ন করতে পারবেন এবং সময়েরও সদ্ব্যবহার করতে পারবেন। আপনার পড়াশোনার পরিকল্পনা এমনভাবে করুন, যাতে আপনি পরীক্ষার অন্তত তিন মাস আগে পুরো সিলেবাসটি শেষ করতে পারেন। পরীক্ষার আগে এই তিন মাসে, বারবার সংশোধন এবং অনুশীলন করার চেষ্টা করুন।
৩) পরীক্ষার সিলেবাসটাই মুখস্থ করে ফেলুন
এই পরীক্ষার সিলেবাস পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কভার করুন। নিশ্চিত করুন যে আপনি একদম নিয়ম মেনে সময় সীমা অনুযায়ী প্রতিটি বিষয় অধ্যয়ন করছেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি বার বার পড়তে ভুলবেন না।
৪) বিগত বছরের প্রশ্নপত্র পর্যালোচনা করুন
বিগত বছরের প্রশ্নপত্র অনুশীলন করা কিন্তু একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এটি এসএসসি সিজিএল পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন এবং মার্কিং নিয়ম সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে।
৫) নিজেই নিজের পরীক্ষা নিন
নিয়মিত সিলেবাস শেষ করে এক একটি অনুশীলন পরীক্ষা নিন, নিজেই নিজের। সমযয়ে সময়ে এটি করলে আপনারও জ্ঞান বাড়বে। পরীক্ষা দিতে বসে আপনার গতি, ক্রিয়াকলাপ এবং সময় ব্যবস্থাপনার ক্ষমতাকে আরও উন্নত করবে এই নিয়ম।
৬) সাধারণ জ্ঞান বা জেনারেল নলেজ থাকা জরুরি
এই পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞান একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর জন্য লেটেস্ট ট্রিভিয়ার সঙ্গে আপ টু ডেট থাকুন। এর জন্য খবরের চ্যানেল, খবরের কাগজ, ট্রিভিয়া ম্যাগাজিন এবং খবরের ওয়েবসাইটগুলোতে নিয়মিত নজর রাখুন।
৭) স্বাস্থ্য এবং মনের কথা মাথায় রাখুন
পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে ভুলবেন না। এর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করুন, সঠিক খাবার খান এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। মনে রাখবেন যে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আপনার মানসিক অবস্থাও গুরুত্বপূর্ণ, তাই মানসিক চাপ বাড়তে দেবেন না।
৮) গ্রুপ আলোচনায় অংশগ্রহণ করুন
এটি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে। আপনি যদি বাড়িতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাহলে এসএসসি সিজিএল সম্পর্কে ধারণা বিনিময় করতে আপনার অসুবিধা হতে পারে। তাই আপনি অনলাইন স্টাডি ফোরামে অংশগ্রহণ করেন। ইনপুট এবং শর্টকাট প্রদান করা ছাড়াও আপনার তাত্ত্বিক সন্দেহ দূর করতে পারে, এমন ফোরামে অংশগ্রহণ করুন।
- এসএসসি সিজিএল পরীক্ষার প্যাটার্ন কেমন হয় কিংবা কীভাবে নির্বাচন করা হয়
দুই ভাগে পরীক্ষা হবে এসএসসি সিজিএল-এ। এসএসসি সিজিএল টায়ার ১, এসএসসি সিজিএল টায়ার ২। এরপর ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়। উল্লেখ্য, এসএসসি সিজিএল টিয়ার ১ এবং টিয়ার ২ পরীক্ষায় নেতিবাচক মার্কিং রয়েছে।
১) এসএসসি সিজিএল টিয়ার ১ পরীক্ষার প্যাটার্ন
সাধারণ বুদ্ধিমত্তা এবং যুক্তি/ জেনারেল ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিজনিং বিষয়ের ক্ষেত্রে মোট ৫০ নম্বরের ২৫টি প্রশ্ন থাকবে।
জেনারেল অ্যাওয়ারনেস বিষয়ের ক্ষেত্রে মোট ৫০ নম্বরের ২৫টি প্রশ্ন থাকবে।
পরিমাণগত যোগ্যতা/ কোয়ান্টেটিভ অ্যাপটিচিউড বিষয়ের ক্ষেত্রে মোট ৫০ নম্বরের ২৫টি প্রশ্ন থাকবে।
ইংরেজি বোধগম্যতা/ ইংলিশ কমপ্রিহেনশন বিষয়ের ক্ষেত্রে মোট ৫০ নম্বরের ২৫টি প্রশ্ন থাকবে।
সবমিলিয়ে মোট ২০০ নম্বরের ১০০টি প্রশ্ন থাকবে।
২) এসএসসি সিজিএল টায়ার ২ পরীক্ষার প্যাটার্ন
তিনটি সেকশনে নেওয়া হবে এই পরীক্ষা। তিনটি সেকশনের এক-একটিতে ২টো করে বিষয় থাকবে।
সেকশন ১: গাণিতিক ক্ষমতায় ৯০ নম্বরের মোট ৩০টি প্রশ্ন থাকবে। এবং যুক্তি ও সাধারণ বুদ্ধিমত্তায়ও ৯০ নম্বরের মোট ৩০টি প্রশ্ন থাকবে। পরীক্ষার সময় সীমা এক ঘণ্টা।
সেকশন ২: ইংরেজি ভাষা এবং বোধগম্যতায় ১৩৫ নম্বরের মোট ৪৫টি প্রশ্ন থাকবে। এবং সাধারণ সচেতনতায় ৭৫ নম্বরের মোট ২৫টি প্রশ্ন থাকবে। পরীক্ষার সময় সীমা এক ঘণ্টা।
সেকশন ৩: কম্পিউটার জ্ঞান পরীক্ষায় ৬০ নম্বরের মোট ২০টি প্রশ্ন থাকবে। এবং একটি ডাটা এন্ট্রি স্পিড টেস্টও নেওয়া হবে। পরীক্ষার সময় সীমা ১৫ মিনিট করে।
৩) এসএসসি সিজিএল ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন – ডকুমেন্ট টেস্ট
টায়ার ১ এবং টায়ার ২ পরীক্ষায় সফল হওয়ার পরে, প্রার্থীদের ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন (DV) এর জন্য ডাকা হবে। আবেদন করার সময় প্রদত্ত সমস্ত নথির মূল কপি এবং ফটোকপি সহ ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন পরীক্ষায় উপস্থিত হতে হবে নির্বাচিত প্রার্থীদের। এরপর নথিপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর, সিজিএল-এর চূড়ান্ত ফলাফল এসএসসি প্রকাশ করবে এবং নির্বাচিত প্রার্থীদের নিয়োগপত্র প্রদান করা হবে। এছাড়াও এই প্রার্থীদের কিছু অতিরিক্ত নথিরও প্রয়োজন হবে যা নিম্নরূপ।
- দুটি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
- একটি আসল ফটো পরিচয়পত্র যেমন আধার কার্ড/ই-আধারের প্রিন্টআউট, নির্বাচনী পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, প্যান কার্ড, পাসপোর্ট, বা কেন্দ্রীয় সরকার/রাজ্য সরকার দ্বারা জারি করা অন্য কোনও ফটো আইডি ইত্যাদি।
বেশি নম্বর তোলার গোপন টিপস
১) ইংরেজিতে দ্বিগুণ ফোকাস করুন
প্রথম প্রচেষ্টায় এসএসসি সিজিএলল পাস করতে চাইলে ইংরেজি বিষয় এবং বিভাগে দ্বিগুণ মনোযোগ দিতে হবে। কারণ ইংরেজিই হচ্ছে সেই সর্বাধিক স্কোরিং বিভাগ, যেখানে আপনি কম সময়ে বেশি স্কোর করতে পারবেন।
টায়ার ২ পরীক্ষার দ্বিতীয় পর্বে ইংরেজি বিষয় থেকে ১৩৫ নম্বরের ৪৫টি প্রশ্ন করা হয়। তা গণিত, যুক্তি, জিএস, কম্পিউটারের মতো এই সমস্ত বিভাগের চেয়ে বেশি। তাই পরীক্ষার্থীরা যদি ইংরেজি পরীক্ষায় বেশি নম্বর তুলতে পারেন, তাহলে সকলের থেকে বেশি স্কোর করে কাঙ্খিত পদ পেতে পারবেন। এই কারণেই ইংরেজি বিষয়ে দ্বিগুণ ফোকাস করা উচিত। তবে, এর আগে ইংরেজির ব্যাকরণ, প্যাসেজ, লেখার ক্ষমতা, বানান সংশোধনের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।
২) সময়ের মাপকাঠি বজায় রাখুন
প্রথম প্রচেষ্টায় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য, অন্য সব বিষয় একদিকে রাখুন এবং সময় ব্যবস্থাপনা একদিকে রাখুন। অর্থাৎ প্রস্তুতি এবং পরীক্ষার সময় আপনাকে সম্পূর্ণভাবে সময় ব্যবস্থাপনায় ফোকাস করতে হবে। যাতে সময়ে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বাজিমাত করতে পারেন। অনুশীলন করার সময় আপনার যুক্তিসঙ্গত নির্ভুলতার সঙ্গে ২০ মিনিটের মধ্যে কমপক্ষে ১৫টি প্রশ্ন উত্তর করার চেষ্টা করা উচিত।
৩) প্রতি সপ্তাহের শেষে মক টেস্ট দিন
এসএসসি সিজিএল পরীক্ষার প্রস্তুতির সময়, আপনাকে প্রতি সপ্তাহের শেষে একটি করে মক টেস্ট দিতে হবে। এতে এই পরীক্ষা সম্পর্কে আপনার জ্ঞান বাড়বে। মনে রাখবেন, এই ধরনের মক টেস্ট বিনামূল্যে এবং অর্থ প্রদানের মাধ্যমে অনলাইনেও পাওয়া যায়।