প্রথমবার ছয় নম্বরের জন্য হয়নি। দ্বিতীয়বার দু'নম্বরের জন্য স্বপ্ন অধরা থেকে গিয়েছিল। কিন্তু তৃতীয়বার যেরকম পরীক্ষা দিয়েছিলেন, তাতে মনে হয়েছিল যে এবার স্বপ্নটা পূরণ হতে চলেছে। কিন্তু বুধবার রাতের একটা ঘোষণায় কলকাতার ইউজিসি-নেট প্রার্থীর স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। বুধবার রাতে যখন আয়োজক সংস্থা ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির (এনটিএ) তরফে ঘোষণা করা হয় যে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠায় ২০২৪ সালের জুন সেশনের UGC-NET বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে, তখন কিছুটা দিশেহারা হয়ে পড়েন। হতাশা মাখা হাসি নিয়ে ‘হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা’-কে বললেন, ‘এবার আমার পরীক্ষা ভালো হয়েছিল। রেজাল্টও ভালো হবে বলে ভেবেছিলাম। সত্যি কথা বলতে আমি ভেবেছিলাম যে দু'দিনের মধ্যে অ্যানসার কি পাব। সেই জায়গায় পরীক্ষা বাতিলের নোটিশ পেলাম। এটাই খুব খারাপ লাগছে।’
নিজেকে কিছুটা সান্ত্বনা দেওয়ার ভঙ্গিতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রার্থী বলেন, ‘খুব ভালো করে প্রস্তুতি দিয়েছিলাম। খারাপ লাগছে, মানে খুবই খারাপ লাগছে। কিন্তু কিছু করার নেই। এটা তো শুধু আমার সঙ্গে হল না। এটা সকলের সঙ্গেই হচ্ছে।’
NTA-র বিরুদ্ধে ক্ষোভ
সেইসঙ্গে এনটিএয়ের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ গোপন করে রাখেননি। তিনি দাবি করেছেন, সর্বভারতীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকায় (NEET-UG) লাগামহীন জালিয়াতির অভিযোগ ওঠার পরেও নেট পরীক্ষার ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করেনি এনটিএ। বরং চূড়ান্ত অব্যবস্থা ছিল। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিও ভালো ছিল না। পরীক্ষার ক্ষেত্রে এত অব্যবস্থা যে কিছু বলার নেই। বিশেষত নিটে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠার পরপরই যখন এত বড় মাপের একটি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে, তখন তো এনটিএয়ের আরও বেশি সতর্ক থাকা উচিত ছিল।’
‘সমস্ত পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া হল’
একইসুরে এনটিএয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সাইকোলজির পড়ুয়া সৌমি ধর। প্রথমবার পরীক্ষা দিয়েই নেট ‘ক্লিয়ার’ করে যাবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু বুধবার রাতের ঘোষণায় সব আশা গুঁড়িয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘UGC-NET বাতিলের কথা জানার পর মনে হচ্ছে যে ভারতে উচ্চশিক্ষার পরিসর ও তার বিশ্বাসযোগ্যতা ক্রমশ কমে আসছে। এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার ক্ষেত্রে এমন গাফিলতি বরদাস্ত করা যায় না। সমস্ত পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া হল।’
আর সত্যিই তো সামনের রাস্তাটা অন্ধকার। একটা পরীক্ষাকে নিয়ে তো কম প্রার্থীর আশা-আকাঙ্খা জড়িয়ে থাকে না। সেই আশা সম্বল করেই নদিয়ার নবদ্বীপ থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজে গিয়ে নেট পরীক্ষা দেন হৃতিশা মজুমদার। দুর্নীতির অভিযোগে পরীক্ষা বাতিলের খবর পাওয়ার পরে তিনি বলেন, ‘এতটা দূর থেকে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। খরচ নেহাত কম হয়নি।’ সেইসঙ্গে তিনি জানান, এরপর নেট হলেও সেটার কতটা বিশ্বাসযোগ্যতা থাকবে, তা নিয়ে একটা প্রশ্নচিহ্ন থেকেই গেল, যেটা সম্ভবত কোনওদিন মুছে যাবে না।
'যোগ্যদের বঞ্চিত হতে হয়নি'
তবে হতাশ হলেও অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় এনটিএ যে পরীক্ষা বাতিলের পথে হেঁটেছে, সেই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সংস্কৃতের এক প্রার্থী। তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে দু'বার নেটে উত্তীর্ণ হলেও জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপের আশায় ফের পরীক্ষা দিয়েছিলেন। প্রস্তুতি ভালো ছিল। পরীক্ষাও ভালো হয়েছিল। তারপর পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় হতাশ লাগছে। তাঁর কথায়, ‘সবক্ষেত্রেই কারচুপির খবর পেলে আত্মবিশ্বাসে ধাক্কা লাগে। তবে এটা ভালো যে পরীক্ষার পরেই অস্বচ্ছতা ধরা পড়েছে। যোগ্যদের বঞ্চিত হতে হয়নি।’
সেইসঙ্গে ওএমআর শিটের পরিবর্তে ফের অনলাইনেই পরীক্ষা নেওয়ার দাবি তুলে তিনি বলেছেন, ‘অনলাইনে পরীক্ষা হলে অনেক সুবিধা হয়। সেক্ষেত্রে ভুল শুধরে নেওয়ার সুযোগ থাকে। ওএমআরে একবার ভুল করে পেন দিয়ে মার্ক করলে আর ভুল শুধরে নেওয়ার উপায় নেই। অনলাইনে সময় বাঁচে। পরেরবার যেন অনলাইনে পরীক্ষা হয়।’