অর্ণব বসু। ২৬ বছর বয়স। হুগলির কোন্নগরে বাড়ি। পুণে-ভিত্তিক এক আইটি সংস্থার কর্মী। করোনার সময় থেকে ওয়ার্ক ফ্রম হোম করেন। করোনার পর ধীরে ধীরে অফিস খুললেও পুণে যেতে নারাজ অর্ণব। বাড়িতে মা-বাবার সঙ্গে থেকে কাজ করাতেই বেশি স্বচ্ছন্দ তিনি। বললেন, 'প্রথম চাকরি ছিল টিসিএস-এ। কেরলে লোকেশন। নামী সংস্থা বলে সুযোগ ছাড়িনি। কেরল চলে গিয়েছিলাম ২ বছরের জন্য। কিন্তু মন খারাপ করত বাড়ি, বন্ধুদের জন্য।' এরপর মহামারী এল। লকডাউনে কোন্নগরে ফিরে এলেন। সঙ্গী কোম্পানির দেওয়া ল্যাপটপ। বাড়ি থেকে অফিস। একেবারে নতুন ব্যাপার। প্রথম প্রথম বিষয়টা একটু অদ্ভুত লাগছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে অর্ণবের একটি উপলব্ধি হয়। সেটি কী?
'দূরে, বড় শহরে গেলে বেতন বাড়ে অবশ্যই। ভালো বেতন পেলে থাকা-খাওয়ার খরচও পুষিয়ে যায়। কিন্তু এই ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম করে একটি বিষয় বুঝেছি। বাড়িতে বসেই যদি একই মানের কাজ করা যায়, দূরে কেন যাব? মা-বাবা, বন্ধুদের সঙ্গে সময়ও কাটছে,' বললেন অর্ণব। টিসিএস-এ এরপর মাস ছয়েক বাড়ি থেকে কাজ করেন। এর মধ্যেই বর্তমান সংস্থায় আবেদন করেন। প্রায় ৫০% বেশি বেতনের অফার পান। শুধু তাই নয়, সেই সংস্থায় ১ বছর কাজের পর আবার ১৫% বেতন বৃদ্ধি হয়েছে তাঁর। পুরোটাই বাড়ি বসে কাজ করে। আরও পড়ুন : 'Work From Home মানেই অলস লোক, ওঁদের কম বেতন দাও,' মত কোটিপতি ব্যবসায়ীর
অর্ণবের মতো ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম করেই কেরিয়ারে উন্নতি করছেন এমন বহু অল্পবয়সী চাকরিজীবী। শুধু আইটি কর্মীই নন। তালিকায় আছেন কনটেন্ট রাইটার, ডিজিটাল সাংবাদিক, ভিডিয়ো এডিটর, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার, গ্রাফিক্স শিল্পীর মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাদার। আর এঁদের বেশিরভাগই টায়ার ২ বা ৩-এর বাসিন্দা। অর্থাত্ কলকাতা, ব্যাঙ্গালুরু, দিল্লি, নয়ডায় এঁদের অফিস হলেও, ছোট শহর বা গ্রামের বাড়ি থেকেই কাজ করেন এই কর্মীরা। অদূর ভবিষ্যতে অফিস যাওয়ারও খুব একটা ইচ্ছা নেই তাঁদের। কেন?
মফস্বলের চাকরিজীবীদের যুক্তি:
১. বাড়ি থেকেও একই মানের কাজ করা সম্ভব। ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই যথেষ্ট। সেক্ষেত্রে অহেতুক অফিসে যাওয়াটাই অর্থহীন। মিটিংয়ের জন্য তো জুম কল আছেই।
২. মফস্বলের বাড়ি থেকে অফিসে যাতায়াত করা বেশ কষ্টসাধ্য। সময়সাপেক্ষও বটে। খরচের বিষয়টা তো আছেই। আর দূরের শহরে হলে তো সেখানে যাওয়া, থাকার খরচ আছেই।
৩. লিঙ্কডইন, সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এখন নেটওয়ার্কিং করাও বেশ সহজ। ফলে বাড়ি বসে কাজ করতে করতেই দেশজুড়ে শূন্যপদের খবর পেয়ে যাচ্ছেন। চাকরিও বদল করতে পারছেন।
৪. অনেকে ভাবেন ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম মানেই সারাদিন কাজ। বাস্তবে এমনটা নয়। শিফ্ট ভিত্তিকে ৮-৯ ঘণ্টা লগ ইন করে কাজ করতে হয় কর্মীদের। আর যাতায়াতের সময় না লাগায় কোনও কোনওদিন অল্প বেশি কাজ করলেও সমস্যা হয় না।
৫. সর্বোপরি, অল্প বয়সে মা-বাবা, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর গুরুত্বটা এই লকডাউনে উপলব্ধি করতে পেরেছে নতুন প্রজন্ম। নিজের পছন্দের হবি, বাড়ির কাজের জন্যও সময় পাচ্ছেন তাঁরা।
অন্যদিকে নতুন সংস্থাগুলিরও সুবিধা হচ্ছে। নতুন অফিস ভাড়া নেওয়া, সেটা চালনা করার খরচ থেকে অব্যাহতি পাচ্ছেন তাঁরা। সেই চিন্তা না করেই কর্মীর সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছে সংস্থাগুলি।
ফলে বহু ধরণের পেশার ক্ষেত্রে ওয়ার্ক-ফ্রম-হোমই ভবিষ্যত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে আপনার কী মত?