ভারত নাকি সুইডেন, কোন দেশের কাজের কালচার সবচেয়ে ভালো। তুলনা টেনে কঠিন সত্য ফাঁস করলেন সুইডেনে এক টেক কর্মী। তিনি ভারতীয়। ভারত সুইডেনে গিয়ে প্রযুক্তি খাতে, কাজ করতে করতে তাঁর এমন কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা শেয়ার না করলেই নয়।
এই প্রযুক্তি কর্মীর নাম অঙ্কুর ত্যাগী। ভারত এবং সুইডেনের কাজের সংস্কৃতির তুলনা করে তিনি বলেন, সুইডেনে কর্মসংস্কৃতি কর্মীদের সুস্থতার জন্য ভালো। নিয়োগকর্তারা কর্মীদের ভালোটা বোঝেন। তাঁরা এটা বিশ্বাস করেন যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন কর্মীদের আরও ভাল কাজ করতে সাহায্য করে। কিন্তু ভারতে ব্যাপারটা ঠিক বিপরীত। এ দেশে কঠোর পরিশ্রম করা এবং ব্যস্ত থাকাটা প্রায়শই ভালো নজরে দেখা হয়। এ দেশে অতিরিক্ত সময় কাজ করাকে স্বাভাবিক হিসাবে দেখা হয়। দেরীতে জেগে থাকাকে গর্বের বিষয় বলে মনে করা হয়।
আরও পড়ুন: (Central Govt Jobs: ৫৭,২০৮ পদে নিয়োগের পরীক্ষা কোন তারিখে? সূচি প্রকাশ SSC-র, কবে কবে? রইল তালিকা)
অঙ্কুরের চোখে, ভারতে কর্মজীবন
অঙ্কুর ত্যাগী, লখনউয়ের ডঃ এপিজে আব্দুল কালাম টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক হয়েছেন। বেশ কয়েক বছর ধরে ভারতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার পর ২০২১ সালে সুইডেনে চলে যান। এখন সে দেশে, প্রযুক্তি সংস্থাগুলির জন্য একজন স্বাধীন পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করছেন তিনি।
ত্যাগী এদিনের এক্স পোস্টে ভারতে কাজ করার বিষয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা শেয়ার করেছেন। এদিন তিনি এমনই একজন আইনজীবীর টুইটের প্রতিক্রিয়া জানান, যিনি আগের দিন অতিরিক্ত ঘণ্টা কাজ করার পরের দিন দেরিতে লগ ইন করার জন্য জুনিয়রের সমালোচনা করেছিলেন। ভারতের অতিরিক্ত কাজ করাটা কীভাবে প্রশংসা পায়, তারই উদাহরণ দিয়েছেন ত্যাগী। ত্যাগী এদিন তাঁর এক পরিশ্রমী ম্যানেজারী কথাও বলেন, যিনি কখনই রাত ১০টার আগে অফিস থেকে বেরোতে পারতেন না এবং পরের দিন ঠিক সকাল ৯টায় অফিসে চলে আসতে হত।
ত্যাগী আরও বলেন যে ভারতে, শেষ মুহূর্তের পণ্য লঞ্চকে একটি সমস্যা হিসাবে দেখা হয় না। কারণ ভারতীয়দের কাছে ক্লায়েন্ট হলেন ঈশ্বর। ভারতে অতিরিক্ত পরিশ্রম কেন এত সাধারণ ব্যাপার সেটাও এদিন উল্লেখ করেছেন। এ দেশে যেহেতু অনেক প্রযুক্তি কর্মীই আছেম, কোম্পানিগুলি সহজেই এমন কাউকে প্রতিস্থাপন করতে পারে যিনি আরও বেশি কাজ করতে পারবেন। ত্যাগীর দাবি, ভারতের প্রযুক্তি শিল্পে প্রতিযোগিতা এতটাই কঠিন যে অনেক কর্মীই, ব্যক্তিগত জীবন ভুলে, হাসল কালচার গ্রহণ করা ছাড়া আর কোনও উপায় পান না।
সুইডেনে ত্যাগীর কর্মজীবন
সুইডেনে নিজের কর্মজীবনের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে, ত্যাগী স্পষ্ট জানান, ভারত ছেড়ে কাজের জন্য সুইডেনে চলে যাওয়াটা, তাঁকে এক নতুন পৃথিবীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। এখানে কর্মীরা সময় মেনেই কাজ করেন। স্বাস্থ্যকর কর্ম-জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখেন। কেউ তাঁদের কাজের প্রতি প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন না। ত্যাগী আরও শেয়ার করেছেন যে সুইডিশ কোম্পানিগুলি পারস্পরিক বিশ্বাসকে মূল্য দেয়। ব্যক্তিগত সীমানাকে সম্মান করে।
যদিও, নতুন প্রজন্মের অর্থাৎ জেনারেল জেড ভারতীয় কর্মীদের এদিন প্রশংসা করেছেন ত্যাগী। তাঁরা, ওভারটাইমকে স্বাভাবিক বলে মনে করা কাজের সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করে, নিজেদের জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখার দিকে ঝুঁকছেন। এই বিষয়টিই নজর কেড়েছে অঙ্কুর ত্যাগীর।