শিখর ধাওয়ান জানিয়েছেন, তিনি সবসময় ভারতের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতেন, এমনকি চোটের পরও, এবং এই স্বপ্ন তিনি মনের মধ্যে বাস্তবায়িত করেছেন। তিনি একাধিকবার ভয়াবহ যন্ত্রণার মধ্যেও খেলেছেন, যার মধ্যে ২০১৯ সালের আইসিসি বিশ্বকাপও ছিল। শিখর ধওয়ান এএনআই-কে দেওয়া এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমি সবসময় দেশের হয়ে খেলার ইচ্ছা রেখেছিলাম, যদিও আমি চোট পেয়ে যেতাম। আমি এটা স্বপ্নে দেখতাম এবং সেটাই বাস্তব হয়ে ওঠে।’ এরপরে তিনি বলেন, ‘আমি ভারতের হয়ে তিনবার হাত ভেঙে খেলেছি, যন্ত্রণায় ভুগে ও ঔষধ এবং পেইনকিলারের সাহায্যে ব্যাট করেছি।’
শিখর ধাওয়ানের দৃঢ়তার একটি অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত ছিল ভারতের ২০১৯ বিশ্বকাপ ক্যাম্পেইনে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলা। এই ম্যাচে শিখর ধওয়ান যখন ২৫ রান পেয়ে গিয়েছিলেন, তখন ১৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় একটি বাউন্সি বল তাঁর আঙুলে আঘাত করে এবং সেটা ভেঙে যায়।
ধাওয়ান ২০১৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ইনিংস নিয়ে বলেন-
শিখর ধাওয়ান ২০১৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১০৯ বল ১১৭ রানের ইনিংস খেলেন। সেই ইনিংসের মুহূর্তটি স্মরণ করে শিখর ধাওয়ান বলেন, ‘আমি যন্ত্রণা অনুভব করলাম এবং জানলাম যে এটি ভেঙে গেছে। আমি রোহিতকে বললাম যে আমার হাত চলে গেছে, আর সে বলল, ‘এখন খেলো। লেফট-রাইট কম্বিনেশন ভালো কাজ করছে; আমরা দাপট দেখাবো।’ সেই সময়ে আমাদের জুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই আমি ইনজুরি স্প্রে করলাম, পেইনকিলার নিলাম এবং খেলা চালিয়ে গেলাম। প্রথমে সতর্কভাবে খেলেছিলাম, কিন্তু যখন হাত গরম হয়ে গেল, তখন আরেকটি পেইনকিলার নিয়ে ফ্লুয়েন্টভাবে ব্যাট করতে থাকলাম। ২৭ থেকে ৫০ রান করার পর আমি ভালো অনুভব করলাম এবং ১০০ রান করে টুর্নামেন্ট থেকে বেরিয়ে আসলাম চোটের কারণে।’
আরও পড়ুন … SL vs AUS: সিরিজের মাঝেই সন্দেহ হয়েছিল, শেষে রিপোর্ট কেন? কুনম্যানের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে নতুন বিতর্ক
শিখর ধাওয়ানের সাহসী মনোভাব শুধু ঐ ম্যাচে সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি শ্রীলঙ্কা এবং অস্ট্রেলিয়াতেও একই ধরনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। যেখানে চোটের পরেও তিনি সেঞ্চুরি করেছিলেন। শিখর ধাওয়ান হাসতে হাসতে বলেন, ‘আমি অনুভব করেছিলাম, আমি একটা পুরুষ। হয়তো ছোটবেলায় যত মার খেয়েছি, তাতেই আমার যন্ত্রণার সহ্যক্ষমতা বেড়ে গিয়েছিল।’
শিখর ধাওয়ান ক্রিকেটে স্লেজিংয়ের ভূমিকা নিয়েও আলোচনা করেছেন। বিশেষত অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে যেখানে কথার যুদ্ধ অনেকটাই তীব্র ছিল। শিখর ধাওয়ান স্বীকার করে বলেছেন, ‘আমার অনেক লড়াই ছিল, বিশেষত শেন ওয়াটসন এবং ব্র্যাড হ্যাডিনের সঙ্গে।’ যখন তাকে প্রশ্ন করা হয় যে, মাঠের বাইরে কি এই রেষারেষি চলে, ধাওয়ান সেটা নাকচ করে দেন। ধাওয়ান বলেন, ‘আমি কখনও মাঠের বাইরে কোনও রাগ পুষে রাখতাম না। আজ যদি আমি ওয়াটসনের সঙ্গে দেখা করি, আমরা সেই মুহূর্তগুলো নিয়ে হাসব। আইপিএলে আমরা একসঙ্গে খেলি, আর সব কিছু ভুলে যাই।’
আরও পড়ুন … IND vs ENG ODI: অনুশীলন করিনি, এটা একেবারেই সত্যি নয়: শাস্ত্রী ও পিটারসেনকে ম্যাককালামের কড়া জবাব
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে কীভাবে খেলোয়াড়রা তাদের ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী স্লেজিংয়ের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানায়। শিখর ধাওয়ান বলেন, ‘এটা সবই একটি কৌশল। সবার নিজস্ব স্টাইল থাকে। উদাহরণ হিসেবে পূজারা (চেতেশ্বর) কে নাও, তুমি কখনও তাকে স্লেজিং করতে দেখবে না, কারণ এটা তার প্রকৃতির মধ্যে নেই, কিন্তু কোহলি (বিরাট) এতে ভরসা রাখে; তাঁর এটা পছন্দের বিষয় এবং সে এর মাধ্যমে তার সেরাটা বের করে আনে। ব্যক্তিগতভাবে, আমি খুব বেশি স্লেজিং করিনি কারণ আমি সেটি প্রয়োজন মনে করি না।’
আরও পড়ুন … Hundred-এ IPL-এর মালিকরা! এবার কি তাহলে ভারতীয় ক্রিকেটাররা অন্য লিগ খেলবেন? কী হবে পাক তারকাদের?
শিখর ধাওয়ান আরও বলেন যে দলের মধ্যে স্লেজিংয়ের সংস্কৃতিগত পার্থক্য রয়েছে। তিনি বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়রা, উদাহরণস্বরূপ, খুব কমই স্লেজিং করে। তারা আসল জেন্টলম্যান। আমি একবার ট্রেন্ট বোল্টের বিরুদ্ধে খেলছিলাম, সে শুধু বলেছিল, ‘তোমাকে আউট করব,’ আমি শুধু বললাম, ‘ওকে, দেখা যাক।’