২০২৪ আইপিএলে বেশ ভালো পারফরমেন্স করেছেন দিল্লি ক্যাপিটালসের ব্যাটার অভিষেক পোড়েল। বাংলার ছেলে অভিষেক তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মাত্র ২১ বছর বয়সেই দাপুটে ব্যাটিং করে। তাবড় তাবড় বোলারদের শাসন করেছেন এবারের আইপিএলে। সুযোগ পেতেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন চন্দননগরের ছেলে। এবারের আইপিএলে শুরুর দিকে দিল্লি ক্যাপিটালস দল সেভাবে ছন্দে ছিল না। ওপেনিংয়ে মিচেল মার্শ, ডেভিড ওয়ার্নার জুটি ক্লিক করেনি। তাই চাপের মধ্যে ব্যাটিং করতে আসতে হয়েছিল অভিষেককে। তারই মধ্যে চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন কম বলে বেশি রান করার। কিন্তু দিল্লির বোলাররাও দলকে খুব বেশি সাহায্য করতে পারেননি শুরুর দিকে, তাই আর জেতা হয়নি। এরপর ডেভিড ওয়ার্নার চোটের জন্য মাঠের বাইরে যেতে এবং পৃথ্বী শ খারাপ পারফরমেন্সের জন্য বাদ পড়তেই ওপেনিংয়ের দায়িত্ব এসে বর্তায় ২১ বছরের অভিষেকের ওপর। সুযোগের সদ্ব্যবহার করে নিজেই দলে জায়গা পাকা করে নিয়েছেন অভিষেক।
এবারের আইপিএলে করে ফেলেছেন ১৪ ম্যাচে ৩২৭ রান, যা জাতীয় দলের খেলে আসা ইশান কিষান, শ্রেয়স আইয়ারদের থেকেও বেশি। শুধু রান নয়, তাদের তুলনায় স্ট্রাইক রেটও বেশি অভিষেকের। লখনউয়ের বিপক্ষে করেছেন অসাধারণ অর্ধশতরান। এবারের মতো সেটাই হয়ত শেষ ম্যাচ ছিল তাঁর। এরপরই HT বাংলায় অভিষেকের খুঁটিনাটি জানালেন তাঁর বাবা, মা এবং ছোটবেলার কোচ।
অভিষেকের বাবা সোমনাথ পোড়েল HT বাংলাকে বলছেন, ‘আমাদের পরিবার বরাবরই খেলা নিয়ে থাকে। ৪ বছর বয়স থেকেই দেখতাম খুব ব্যাট চালাচ্ছে। ব্যাটিং করার স্টাইল দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। এরপর চন্দননগরে ন্যাশনাল ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কোচ প্রদীপ মণ্ডল দেখে বলেছিল, বাচ্চাটার মধ্যে কিছু আছে। ওনার হাত ধরেই শুরু, এরপর কলকাতায় বিভাস স্যারের কাছে নিয়ে যাই। ওর দাদা ইশান সাহায্য করত। এরপর বিভাস স্যারই কিপিংয়ের দিকটা আরও উন্নতি করল। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের স্কোয়াডে সুযোগ না পাওয়ার পর ওকে বলেছিলাম বিজয় হাজারে ট্রফিতে পারফর্ম কর। সেটা করেছিল। ছোট থেকে ও খুব ভালো ভাবেই বুঝত, ওকে নিজেকেই সব করতে হবে, ভেঙে পড়লে হবে না। এবারে যখন দিল্লিতে গেল, আমায় বলছিল হয়ত সুযোগ পাব না। কিন্তু আমি বলেছিলাম ঠিক সুযোগ পাবি। আইপিএল শুরুর এক সপ্তাহ আগে বলল ২০ ওভার কিপিং করিয়েছে, তখনই বলেছিলাম ৮০ শতাংশ চান্স আছে, সেটাই হল। লক্ষ্মীরতন শুক্লার কথা ভুলব না, করোনার সময় খুব উপকার করেছে’।
আরও পড়ুন-IPL 2024-আরসিবির বিপক্ষে খেলতে পারলে প্লে অফের দৌড়ে থাকতাম…কাকে খোঁচা দিলেন ঋষভ পন্ত
HT বাংলাকে অভিষের মা অনিমা পোড়েল বলছেন, ‘ওর দাদা ইশান পোড়েলই ওকে কলকাতায় ভর্তি করে দেয়। ইশান বলেছিল চল খেলায় ভর্তি হবি কলকাতায়। ওর নিজেরও খুব আগ্রহ ছিল। ওর আশা ছিল আমি ঠিক খেলতে পারব। ভোরবেলায় প্র্যাকটিস থাকলে ঘুম থেকে নিজেই উঠে পড়ত। ঘরের মধ্যে ব্যাট বল নিয়ে বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে খেলত। এই কাচ ভাঙছে, এই লাইট ভাঙছে। ছোটবেলায় টিভি দেখে দেখেই খেলা শিখেছে’।
আরও পড়ুন-IPL 2024-ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নিয়ম তুলে দিলেও রেহাই পাবেন না বোলাররা, বড় বার্তা পন্টিংয়ের
অভিষেকের ছোটবেলার কোচ বিভাস দাস, যার হাত ধরে তিনি এত টেকনিক রপ্ত করেছেন। বাংলা দলে সুযোগ পাওয়ার পর এখন রিকি পন্টিং, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়দের নজর কাড়ছেন। নিজের সন্তানের মতোই ছোট্ট অভিষেককে তৈরি করেছেন। লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে এবারের আইপিএলের লিগ স্টেজের শেষ ম্যাচের পর HT বাংলাকে সেই বিভাস দাস বলছেন, ‘ ছোট থেকে খুব আগ্রাসী ব্যাটিং করে অভিষেক। ওর কাছে মারার বল ছাড় পায় না। আজ যেটা আউট হল সেটা মারার বল ছিল, চালিয়েছিল। এর আগের কটা বলে রান ওঠেনি,তাই চালিয়েছে। ও খুব ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে। তাই ওর স্ট্রাইক রেট যথেষ্ট ভালো। অল ইন্ডিয়ায় ভালো পারফরমেন্সের পর শুভময় দাস বলেছিল ওকে বাংলা দলে রাখব। এরপর রঞ্জি ট্রফি খেলেছে। সেখানে লক্ষ্মী ওকে খুব সাপোর্ট দিয়েছে। দিল্লিতে প্রথম থেকেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় খুব সাহায্য করেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা কলকাতায় এসে থ্রো ডাউন নিয়েছে। সঞ্জয় দাসও ওকে খুব সাহায্য করেছে। অভিষেকের সব থেকে বড় গুন, ও কিন্তু বল দেখে, বোলার দেখে না। তাই মারার বল পেলেই চালিয়ে দেয়। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে যখন ও সুযোগ পেল না, ওটা ওকে ধাক্কা দিয়েছিল। ওর খুব ইচ্ছা ছিল যে দাদা ইশান পোড়েলের মতোই অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে খেলবে। লকডাউনে খুব কষ্ট করেছে, একদিনও ট্রেনিং মিস করত না, আমার মনে হয়ে আন্ডার নাইনটিনে ওর বাদ পড়াটাই শাপে বর হয়েছে’।