অস্ট্রেলিয়াকে কাঁদিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল আফগানিস্তান। তারা ভারতীয় সময়ে মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশকে ৮ রানে হারিয়ে প্রথম বার টি২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠল। সেই সঙ্গে রশিদরা লিখে ফেলল ইতিহাস।
সোমবার ভারতের কাছে অস্ট্রেলিয়ার হারের পর, তাদের শেষ চারের আশা নির্ভর করছিল আফগানিস্তান- বাংলাদেশ ম্যাচের উপর। এই ম্যাচে আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশের সামনেও সুযোগ ছিল সেমির ছাড়পত্র জোগাড় করার। শেষ হাসি হাসে অবশ্য আফগানরা। বাংলাদেশকে হারিয়ে অজিরা সেমিতে ওঠায়, ছিটকে যেতে হল অস্ট্রেলিয়াকে।
সেমিফাইনালে যেতে হলে ১২.১ ওভারে বাংলাদেশকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছতে হত। কিন্তু সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছতে তো পারেইনি, উল্টে তারা ম্যাচটা হেরে যায়। সুপার আটের সব ম্যাচ হেরে টি২০ বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল বাংলাদেশ। আর অজিদের সেমিতে য়েতে হলে আগে আফাগানিস্তারকে হারতে হত। এবং বাংলাদেশ জিতলেও, রানরেট কম থাকতে হত। অর্থাৎ ১২.১ ওভারে রান তাড়া করে জয়ের বদলে তার বেশি বল খেলে জিততে হত টাইগারদের। তবে আফগানিস্তান ম্যাচ জিতে যাওয়ায়, বাকিদের কোনও সমীকরণই আর কাজে লাগল না।
আরও পড়ুন: 2024 T20 World Cup-এ সবচেয়ে বেশি ক্যাচ ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া, লজ্জার নজিরে শীর্ষে ক্যাপ্টেন মার্শ
বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে এদিন টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক রশিদ খান। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১০.৪ ওভার পর্যন্ত ওপেনিং জুটি ক্রিজে থাকে ঠিকই, কিন্তু মাত্র ৫৯ রান হয়। রহমানউল্লাহ গুরবাজ এবং ইব্রাহিম জাদরান মিলে খুব স্লো ব্যাটিং করেন। এখানেই চাপে পড়ে যায় আফগানিস্তান। ২৯ বলে ১৮ করে সাজঘরে ফেরেন জাদরান। হাঁকান ১টি চার। এদিকে ৩টি চার এবং একটি ছয়ের হাত ধরে ৪৩ রান (৫৫ বল) করেন রহমানউল্লাহ। এটাই কিছুটা অক্সিজেন ছিল আফগানিস্তানের। এর বাইরে বাকিদের হাল তথৈবচ।
আজমতউল্লাহ ওমরজাই করেন ১০ রান, গুলবাদিন নায়েব করেন ৪, মহম্মদ নবি করেন ১ রান। সাতে নেমে ১০ বলে অপরাজিত ১৯ করে দলকে একশোর গণ্ডি পার করিয়ে দেন রশিদ। আফগানদের মধ্যে একমাত্র আগ্রাসী মেজাজে খেলতে দেখা গিয়েছে রশিদকেই। তাঁর ছোট্ট ইনিংসে ৩টি ছক্কা ছিল। করিম জানাত ৬ বলে ৭ করে অপরাজিত থাকেন। আফগানিস্তান নির্দিষ্ট ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১১৫ রান করে। বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার রিশাদ হোসেন। তিনি ৪ ওভার বল করে ২৬ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। একটি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ এবং মুস্তাফিজুর রহমান।
আরও পড়ুন: ছক্কা হাঁকিয়ে নিজের ১৪ বছর আগের রেকর্ড ছুঁলেন রোহিত, ICC T20 WC-এ গড়লেন বাউন্ডারি মারার নজিরও
জবাবে বাংলাদেশ রান তাড়া করতে নামলে বৃষ্টির কারণে বার বার বন্ধ হয় খেলা। বদলে যায় তাদের লক্ষ্যও। জয়ের জন্য ১৯ ওভারে ১১৪ রান প্রয়োজন ছিল তাদের। শেষ পর্যন্ত ৮ রানে হেরে গেল বাংলাদেশ।
উইকেট নেওয়ার শুরুটা করেছিলেন ফজলহক ফারুকি এবং নবীন উল হক। ২৩ রানের মধ্যে ৩ উইকেট পড়ে যায় বাংলাদেশের। মধ্য ওভারে আবার রশিদের দাপট। তিনি ৪ ওভারে ২৩ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নেন। নুর আহমেদ উইকেট না পেলেও, ৪ ওভারে দিলেন ১৩ রান। আর তাতে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তার পর উপর বারবার বৃষ্টি ম্যাচের ছন্দ কাটতে থাকে। সব মিলিয়েই চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সব মিলিয়েই হেরে মাঠ ছাড়তে হয় টাইগারদের।
বাংলাদেশের হারের আসল কারণটি নিঃসন্দেহে ব্যাটিং ব্যর্থতা। ওপেন করতে নেমে শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন একমাত্র লিটন দাসই। তবে উল্টোদিকের কেউই থিতু হননি। লিটন একা কুম্ভ হয়ে বাংলাদেশের ইনিংসের হাল ধরে রাখেন। অন্যরা তো এসেছেন, আর ফিরে গেছেন। তাঁর অপরাজিত অর্ধশতরান জলে গিয়েছে। ৫টি চার একটি ছক্কার হাত ধরে লিটন ৪৯ বলে ৫৪ রান করলেও, বাকিদের অবদানের ভাঁড়ার কার্যত শূন্য। খুব বেশি লক্ষ্য ছিল না, তাও সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে একেবারে নাকানিচোবানি খেতে হল বাংলাদেশকে। তাও যদি ম্যাচটা জিতত!
বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ রান করেছেন তৌহিদ হৃদয়। ১০ করেছেন সৌম্য সরকার। বাকিরা তো কেই দুই অঙ্কেই পৌঁছানননি। ১৭.৫ ওভারে বাংলাদেশ ১০৫ রানে অলআউট হয়ে যায়। তবে শেষ দিকে বড় কৃতিত্ব দিতে হবে নবীনকে। কারণ নবীনই শেষ দুই উইকেট পরপর তুলে নিয়ে আফগানিস্তানের সেমির ছাড়পত্র জোগাড় করে দেন। তা না হলে ফল কী হত, তা জোর দিয়ে কেউি বলতে পারবেন না! ১৭.৫ এবং ১৭.৫ ওভারে তাসকিন এবং মুস্তাফিজুরকে ফিরিয়ে শেষ বাজিমাত করেন নবীন। যে কারণে তাঁকে ম্যাচের সেরাও নির্বাচিত করা হয়। নবীন এদিন ৩.৫ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নেন। আফগানিস্তানের হয়ে একটি করে উইকেট নিয়েছেন ফারুকি এবং গুলবাদিন নায়েব। আফগানিস্তান ২৭ জুন সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে।