মধ্যপ্রদেশের কাছে রুদ্ধশ্বাস কোয়ার্টার ফাইনাল হেরে রঞ্জি ট্রফি থেকে ছিটকে যাওয়ার পরেই, সোশ্যাল মিডিয়ায় বোমা ফাটিয়েছেন হনুমা বিহারী। তাঁর লড়াই করার পরেও, দল ম্যাচ হারায় হতাশা প্রকাশ করেন বিহারী। ১৬৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৬২ রানে গুটিয়ে যায় তারা। হনুমা বিহারী একাই ৫৫ রান করেন। তবু হারতে হয় অন্ধ্রপ্রদেশকে। আর এই হারের পরেই অন্ধ্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনকে তুলোধনা করেন তাঁর সঙ্গে অন্যায় আচরণ করার জন্য়। ক্রিকেট সংস্থার আচরণে অপমানিত হনুমা ক্ষোভের সঙ্গেই জানিয়ে দেন যে, দলকে ভালোবাসলেও, আর কখনও খেলবেন না অন্ধ্রপ্রদেশের হয়ে।
এতেই জোর বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এর পর ফের বিশাল বড় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন হনুমা। তিনি সরাসরি আক্রমণ করেছেন তাঁর দলের সতীর্থকেই। আসলে কেএন প্রুধবিরাজ নামে তাঁর দলের এক সতীর্থ হনুমার পোস্ট নিয়ে পালটা দাবি করেন, সহানুভূতি আদায় করতে নেমেছেন বিহারী। এর পরে অন্ধ্রের ক্রিকেটারও ছেড়ে কথা বলেনি। তিনিও নিজের বক্তব্যের সমর্থনে প্রমাণ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: যাদের টেস্ট খেলার খিদে নেই… জুরেল সহ তরুণদের নিয়ে উচ্ছ্বসিত হলেও, ঘুরিয়ে ইশানদের ঠুকলেন রোহিত
বিহারী তাঁর চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘বাংলার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে অধিনায়ক ছিলাম। সেই ম্যাচে দলের ১৭ নম্বর খেলোয়াড়ের উপর চিৎকার করেছিলাম। ও গিয়ে নিজের বাবাকে (যিনি একজন রাজনীতিবিদ) অভিযোগ করে। ওর বাবা রাজ্য সংস্থাকে নির্দেশ দেন, আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। গত বারের ফাইনালিস্ট বাংলার বিরুদ্ধে আমরা ৪১০ তাড়া করে জিতলেও, কোনও কারণ ছাড়াই আমাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়।’
এর পরে প্রুধবিরাজ নিজেই প্রকাশ্যে এসে দাবি করেন, ‘আমিই সেই ছেলে যাকে আপনারা সবাই খুঁজছেন। যা আপনারা শুনেছে তা সম্পূর্ণ অসত্য। কেউই খেলাটার থেকে উঁচুতে নয়। আমার আত্মসম্মানও বাকি সব কিছুর থেকে উপরে। যে কোনও মাধ্যমেই ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং খারাপ ভাষা গ্রহণযোগ্য নয়। সবাই জানে সে দিন কী ঘটেছিল। সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছে। যে ভাবেই হোক না কেন।’
এর পরেই বিহারী একটি চিঠি পোস্ট করেন। সেই চিঠিতে তাঁর ১৫ জন সতীর্থের সই রয়েছে। চিঠিতে লেখা হয়েছে, বিহারীর বিরুদ্ধে এক সতীর্থকে খারাপ ভাষায় আক্রমণের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু সে দিন কেউ ওই ক্রিকেটারকে খারাপ ভাষায় আক্রমণ করেননি বা গালিগালাজ করেননি। যে ভাষায় কথা বলা হয়েছে, তা সাজঘরে প্রায়ই বলা হয়ে থাকে। এতে দলের থেকে সেরাটা বেরিয়ে আসে। অনেক দিন ধরেই তা ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি।
আরও পড়ুন: এখন রান করলে চতু্র্থ ইনিংসে.… ৯০ করার সময়ে কী ভাবছিলেন, অকপটে জানালেন ম্যাচের সেরা জুরেল
তাঁরা এ-ও জানিয়েছেন, দলের স্বার্থে বিহারীকেই আগামী দিনে অধিনায়ক হিসাবে চান। তাঁর সঙ্গে দলের কারওরই সম্পর্ক খারাপ নয় বলে দাবি করা হয়েছে। লেখা হয়েছে, ‘বিহারী বরাবর আমাদের মধ্যে থেকে সেরাটা বার করে নিয়ে আসে। ওর নেতৃত্বে আমরা এক হয়ে খেলি এবং সে কারণেই সাত বার নকআউটের যোগ্যতা অর্জন করেছি। রঞ্জি মরসুম আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ এই চিঠিটি এখন নাকি আগে লেখা হয়েছে তা অবশ্য জানা যায়নি। চিঠিতে কোনও তারিখের উল্লেখ নেই।
অন্ধ্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনও (এসিএ) হাত গুটিয়ে বসে নেই। সোমবার সিনিয়র ব্যাটসম্যান হনুমা বিহারির বিরুদ্ধে একটি তদন্ত ঘোষণা করেছে তারা। এসিএ একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ‘বিহারীর অশ্লীল ভাষা ব্যবহার এবং আপত্তিজনক আচরণ সম্পর্কে টিমমেট, সাপোর্ট স্টাফ এবং সংস্থার অ্যাডমিনিস্ট্রেটরদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। ACA সমস্ত অভিযোগের একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত পরিচালনা করবে এবং যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ অন্ধ্র ক্রিকেট সংস্থার এই বিবৃতিটি হনুমা নিজেই এক্সে শেয়ার করেছেন। সঙ্গে কটুক্তির সুরে লিখেছেন, ‘চেষ্টা জারি থাকুক’।
এসিএ সেই বিবৃতিতে আরও জানিয়েছে যে, সেই সময়ে জুনিয়র খেলোয়াড়ের কাছ থেকে বিহারী সম্পর্কে অভিযোগ পেয়েছিল তারা। বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, ‘এটা আমাদের নজরে এসেছে যে মিস্টার বিহারী ব্যক্তিগত ভাবে বাংলার বিরুদ্ধে রঞ্জি ম্যাচ খেলার সময়ে একজন নির্দিষ্ট খেলোয়াড়কে সবার সামনে গালিগালাজ করেছিলেন। সেই খেলোয়াড় এসিএ-তে একটি অফিসিয়াল অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।’