অজি অভিযান

শুধু অ্যাশেজ নয়, এখন ক্রিকেটের সেরা মহারণ মানেই বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি। অ্যালান বর্ডার এবং সুনীল গাভাসকরের নামে সেই টেস্ট সিরিজের সূচনা হয়েছে ১৯৯৬ সাল থেকে। আর যতদিন গিয়েছে, তত প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়েছে। বিশেষত একবিংশ দশকের গোড়া থেকে সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও বেড়েছে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সচিন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষ্মণরা অজিদের গর্বে ধাক্কা দেওয়ার যে ধারাটা শুরু করেছিলেন, সেটার ট্র্যাডিশন বজায় রেখেছেন বিরাট কোহলি, অজিঙ্কা রাহানেরা। আর যতদিন গিয়েছে, তত হোম-অ্যাওয়ের পার্থক্য অনেক কমেছে। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে পরপর সিরিজ জিতে এসেছে ভারত। আবার ভারতে এসে অস্ট্রেলিয়াও যথেষ্ট বেগ দিয়েছে (২০০৪-০৫ সালে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া)। এবার সিরিজে পাঁচটি টেস্ট - পার্থ (২২ নভেম্বর), অ্যাডিলেড (৬ ডিসেম্বর), ব্রিসবেন (১৪ ডিসেম্বর), মেলবোর্ন (২৬ ডিসেম্বর) এবং সিডনি (৩ জানুয়ারি)।

২০২২-২৩ সাল পর্যন্ত মোট ১৬ বার বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি হয়েছে। ভারত ১০টি সিরিজ জিতেছে। অস্ট্রেলিয়া জিতেছে পাঁচটি সিরিজে। একটি সিরিজ ড্র হয়েছে। ১৯৯৬-৯৭ সালে ঘরের মাঠে ১-০ ব্যবধানে জিতেছিল ভারত। ১৯৯৭-৯৮ সালে দেশের মাঠে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিল টিম ইন্ডিয়া। ১৯৯৯-২০০০ সালে অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে গিয়েছিল ভারত। ০-৩ ব্যবধানে হেরেছিল। ২০০০-০১ সালে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সেই ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ হয়েছিল। দ্রাবিড় এবং লক্ষ্মণের হাত ধরে ইডেনের ঐতিহাসিক জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল ভারত। ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল।

২০০৩-০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিল ভারত। স্টিভ ওয়াওয়ের বিদায়ী সিরিজকে আলোকিত করে রেখেছিলেন দ্রাবিড়। অ্যাডিলেডে দ্রাবিড় ২৩৩ রান এবং অপরাজিত ৭২ রান করে ভারতকে জিতিয়েছিলেন। অন্যদিকে, লক্ষ্মণ প্রথম ইনিংসে ১৪৮ রান করেছিলেন। প্রথম ইনিংসে দ্রাবিড় এবং লক্ষ্মণের মধ্যে ৩০৩ রানের জুটি হয়েছিল। অ্যাডিলেডে জিতেছিল ভারত। তবে মেলবোর্নে হেরে গিয়েছিল। ১-১ ব্যবধানে শেষ হয়েছিল সিরিজ।


২০০৪-০৫ সালে ভারতে এসে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল। ২০০৭-০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ১-২ ব্যবধানে হেরেছিল ভারত। কিন্তু সেই সিরিজে চূড়ান্ত বিতর্ক হয়েছিল। মাটিতে বল ঠেকে যাওয়ার পরও রিকি পন্টিংয়ের কথায় আউট দেওয়া হয়েছিল। অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। মাঙ্কিগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে উত্তাল হয়েছিল। সেইসবের মধ্যেই পার্থে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিয়েছিল ভারত। আর তখনকার পার্থে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর অর্থই আলাদা ছিল।

২০০৮-০৯ সাল এবং ২০১০-১১ সালে দেশের মাটিতে ২-০ ব্যবধানে জিতেছিল ভারত। কিন্তু ২০১০-১২ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দুরমুশ হয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। ০-৪ ব্যবধানে হেরেছিল ভারত। ওই সিরিজের মতো কখনও বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে খারাপ ফল করেনি টিম ইন্ডিয়া। তে ২০১২-১৩ সালে অজিদের একই লজ্জার মুখে ফেলেছিল ভারত। ৪-০ ব্যবধানে জিতেছিল।

২০১৪-১৫ সাল থেকে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে বিরাট যুগের শুরু হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে চার ম্যাচের সিরিজে ভারত ০-২ ব্যবধানে হেরে গেলেও বিরাটের নেতৃত্বে টেস্টে টিম ইন্ডিয়ার নয়া যাত্রা শুরু হয়েছিল। পিচ যাই হোক না কেন, বিশ্বের যে দেশই হোক না কেন, জেতার মন্ত্রণা নিয়ে এসেছিলেন বিরাট। তাঁর আমলেই ভারতীয় পেসারদের দাপট বৃদ্ধি পায়। পাঁচ বোলার স্ট্র্যাটেজিতে খেলা শুরু করেছিল ভারত। আজ যে ভারতের পেসারদের উত্থান, সেটার বীজ সেই ২০১৪-১৫ সাল সিরিজেই পুঁতেছিলেন বিরাট। ২০১৬-১৭ সালে ঘরের মাঠে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল ভারত। সেই সিরিজ মারাত্মক উত্তপ্ত হয়েছিল। ড্রেসিংরুমের দিকে তাকিয়ে ডিআরএস চেয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন স্টিভ স্মিথ। বিরাটের চোট নিয়ে মশকরা করেছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। পালটা দিয়েছিলেন বিরাটরা। ইশান্ত শর্মা ভেংচেছিলেন স্মিথকে।

তারপর ২০১৮-১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ২-১ ব্যবধানে ভারত সিরিজ জিতেছিল। যা অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের প্রথম বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি জয় ছিল। ২০২০-২১ সালে ৩৬ রানের অল-আউটের লজ্জা কাটিয়ে ভারত ২-১ ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়া থেকে জিতে ফিরেছিল। আর তারপর ঘরের মাঠে ২০২২-২৩ সালে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিল ভারত।

অজি অভিযান FAQ's

২০০৩ সালে অ্যাডিলেড টেস্টে জিতেছিল ভারত। প্রথম ইনিংসে দ্রাবিড় ও লক্ষ্মণের কত রানের জুটি ছিল?

রাহুল দ্রাবিড় এবং ভিভিএস লক্ষ্মণের মধ্যে পঞ্চম উইকেটে ৩০৩ রানের পার্টনারশিপ হয়েছিল। ১৪৮ রান করেছিলেন লক্ষ্মণ। ২৩৩ রান করেছিলেন দ্রাবিড়।

২০০১ সালে ঐতিহাসিক ইডেন টেস্টে প্রথম ইনিংসে ভারত কত রানে পিছিয়ে ছিল?

প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ৪৪৫ রান করেছিল। আর ভারত মাত্র ১৭১ রানেই অল-আউট হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ ২৭৪ রানে পিছিয়ে ছিল ভারত।

অস্ট্রেলিয়ায় কোন ভারতীয়ের বক্সিং ডে টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি আছে?

অজিঙ্কা রাহানে। ২০১৪ সালে ১৪৭ রান করেছিলেন। সেই টেস্ট ড্র হয়েছিল। আর ২০২০ সালে ১১২ রান করেছিলেন। ম্যাচের সেরাও নির্বাচিত হয়েছিল।

২০২১ সালে সিডনি টেস্টে কতগুলি বল খেলে ড্র করেছিলেন অশ্বিন ও বিহারী?

চতুর্থ ইনিংসে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও হনুমা বিহারী ২৫৮টি বল খেলেছিলেন। অপরাজিত ৬২ রান যুক্ত হয়েছিল।