চলতি টি-২০ বিশ্বকাপের শুরু থেকেই চর্চায় নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বাইশগজ। পিচ যে বিশ্বকাপের মানের নয়, সেটা প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছে আইসিসিও। বিশেষজ্ঞদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে নিউ ইয়র্কের বাইশগজকে। তবে ক্রিকেটারদের খুব বেশি অখুশি প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। কেননা এই মাঠের পিচ ম্যাচের উভয় ইনিংসে আচরণ করছে কার্যত সমান।
হতে পারে বোলিং সহায়ক বাইশগজে বিস্তর রান উঠছে না, যেমনটা দেখতে অভ্যস্ত ক্রিকেটপ্রেমীরা। তবে লো-স্কোরিং ম্যাচ কত উত্তেজক রূপ নিতে পারে, সেটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে পরপর ২ দিনেই। রবিবার মাত্র ১১৯ রান করেও শেষ ওভারের থ্রিলারে পাকিস্তানকে হারায় ভারত। সোমবার আরও কম রান তুলে ম্যাচ জেতে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়ারা মাত্র ১১৩ রান তুলেও শেষ ওভারে রুদ্ধশ্বাস জয় ছিনিয়ে নেয় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, সোমবার বাংলাদেশের হারের জন্য নিউ ইয়র্কের পিচকে দায়ি করা যাবে না মোটেও। বাইশগজে বোলারদের জন্য সাহায্য থাকলেও বাংলাদেশ কার্যত ভয়েই ম্যাচ হেরে যায়। ডাকাবুকো মানসিকতার অভাব চোখে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে। বরং এমনও বলা যায় যে, টি-২০ ক্রিকেটে ম্যাচ ফিনিশ করার দক্ষতা দেখাতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটাররা।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ছিল মোটে ১১ রান। হাতে ছিল ৫টি উইকেট। সুতরাং, টেল এন্ডাররা ব্যাট করছিলেন, এমনটা বলা যাবে না কোনওভাবেই। ব্যাট করছিলেন অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ, যিনি দলগত ১৯ ওভারের শেষে ২৫ বলে ১৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। অন্য ব্যাটার জাকের আলিও ততক্ষণে ৭ বলে ৬ রান সংগ্রহ করেছেন। শেষ ওভারে একটি বড় শট মানেই ম্যাচ বাংলাদেশের হাতের মুঠোয়।
এমন অবস্থায় শেষ ওভারে বল করতে আসেন প্রোটিয়া স্পিনার কেশব মহারাজ। শেষ ওভারের শুরুতেই ওয়াইড বল করেন তিনি। সুতরাং, জিততে ৬ বলে ১০ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। প্রথম বলে ১ রান নেন মাহমুদুল্লাহ। দ্বিতীয় বল ফুলটস করে বসেন কেশব। বড় শট নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেন জাকের। তিনি বাউন্ডারি মারার বদলে ২ রান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকেন।
ওভারের তৃতীয় বল ছিল কার্যত হাফ-ভলি। তা সত্ত্বেও বড় শট নেওয়ার চেষ্টায় মার্করামের হাতে ধরা পড়েন জাকের। চতুর্থ বল পায়ে লাগিয়েই প্রান্তবদল করেন নতুন ব্যাটার রিশাদ। কেশবের ওভারের পঞ্চম বলটিকে অন্য কেউ হলে স্টেডিয়ামের বাইরে বার করে দিতেন। অতি সহজ ফুলটস বলে ছক্কা হাঁকানোর সুযোগ ছিল অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহর সামনে। তবে তিনি বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন মার্করামের হাতে। এই বলে ছক্কা মারলেই ম্যাচ জিতত বাংলাদেশ।
শেষ বলের মোকাবিলা করেন নবাগত ব্যাটার তাসকিন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, কেশব মহারাজ এই বলটি করেন পায়ের উপরে ফুলটস। এটি কোনওভাবেই লো-ফুলটস ছিল না। এক বলে ৬ রান দরকার থাকলে ব্যাটার বড় শট নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বাধ্য। ছক্কা হাঁকানোর জন্য এর থেকে সহজ বল কোনও ব্যাটার পেতে পারেন কিনা সন্দেহ। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, শেষ বলে তাসকিন ১ রান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকেন।
সুতরাং, শেষ ওভারে কেশব মহারাজ ৩টি ফুলটস বল করেন। একটিও কাজে লাগাতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটাররা। এই তিনটি ফুলটসের একটিতে বাউন্ডারি মারলেই সহজে ম্যাচ জিতে যেত বাংলাদেশ। সম্ভবত বাংলাদেশের ব্যাটারার বল দেখে নয়, বরং বোলারকে দেখে ব্যাট করছিলেন। তাই জেতা ম্যাচ হেরে মাঠ ছাড়তে হয় নাজমুল হোসেন শান্তদের।
উল্লেখ্য, সোমবার নিউ ইয়র্কে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা ৬ উইকেটের বিনিময়ে ১১৩ রান সংগ্রহ করে। পালটা ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ২০ ওভারে ৭ উইকেটের বিনিময়ে ১০৯ রান সংগ্রহ করে। ৪ রানে ম্যাচ জেতে দক্ষিণ আফ্রিকা।