ঘরের মাঠে লজ্জার হোয়াইটওয়াশের পরে 'অ্যাকশনের' পথে হাঁটতে চলেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, অস্ট্রেলিয়া সিরিজের পরেই রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজাদের মতো ‘সুপার’ সিনিয়র খেলোয়াড়দের ভবিষ্যৎ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ভারত যদি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে না ওঠে, তাহলে চার ‘সুপার’ সিনিয়রের মধ্যে কমপক্ষে দু'জনের শেষ সিরিজ হবে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি। সেই পরিস্থিতিতে দেশের মাটিতে রোহিত, বিরাট, অশ্বিন এবং জাদেজা একসঙ্গে সম্ভবত শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলে ফেলেছেন বলেও বিসিসিআইয়ের সূত্র উদ্ধৃত করে পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
আগরকর, গম্ভীর, রোহিতের মধ্যে বৈঠক
কিন্তু এখনই কেন কোনও কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না? পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিসিসিআইয়ের ওই কর্তা জানিয়েছেন যে আড়াই সপ্তাহ পরেই অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের টেস্ট সিরিজ শুরু হচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে এখনই কঠোর কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। দল ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। তাতে কোনও পরিবর্তন করা হচ্ছে না। ঘরোয়াভাবে ‘বুড়ো’ হয়ে যাওয়া টিমের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকর, হেড কোচ গৌতম গম্ভীর এবং অধিনায়ক রোহিত শর্মার মধ্যে আলোচনা হবে। আর তারপর যা ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটা বর্ডার-গাভাসকর ট্রফির পরে।
ওই সংবাদসংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, নাম গোপন রাখার শর্তে বিসিসিআইয়ের ওই শীর্ষকর্তা বলেছেন যে ‘নিশ্চিতভাবে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। ১০ নভেম্বর যেহেতু অস্ট্রেলিয়ায় রওনা দিচ্ছে ভারতীয় দল, তাই সেটা (আলোচনা) ঘরোয়াভাবে হবে। কিন্তু এটা (নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ) যা হল, সেটা বড়সড় বিপর্যয়। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ সামনেই চলে আসায় এবং ইতিমধ্যে দল ঘোষণা করে দেওয়া হওয়ায় তাতে কোনও হেরফের করা হবে না।’
WTC ফাইনালে না উঠলেই ছেঁটে ফেলা হবে ২ জনকে?
কিন্তু সেই সিরিজটাই ‘অগ্নিপরীক্ষা’ হবে সুপার সিনিয়রদের জন্য। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের শীর্ষকর্তা বলেছেন যে ‘ইংল্যান্ডে যে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল হবে, তাতে যদি ভারত উঠতে না পারে, তাহলে নিশ্চিত থাকতে পারেন যে পরবর্তী পাঁচ টেস্ট সিরিজের জন্য চারজন সুপার সিনিয়রের মধ্যে সকলেই ইংল্যান্ডের বিমানে উঠতে পারবে না। আর এমনিতে চারজন একসঙ্গে সম্ভবত ঘরের মাঠে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলে ফেলল।’
এমনিতে অস্ট্রেলিয়ায় ভারত যদি ৪-০ ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেয়, তাহলে অন্য কোনও দলের দিকে না তাকিয়েই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠে যাবে। আর অন্য দল যদি বাজে পারফরম্যান্স করে, তাহলে অস্ট্রেলিয়ায় হারলেও ফাইনালে উঠতে পারবে ভারত। আর ভারত ফাইনালে না উঠলে পরবর্তী বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দিকে তাকিয়ে সাই সুদর্শন, দেবদূত পাডিক্কালদের মতো খেলোয়াড়দের দলে নেওয়ার পথে হাঁটতে পারে বিসিসিআই। যাঁরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য তৈরি হয়ে গিয়েছেন।
ভবিষ্যতে লগ্নি করতে চায় BCCI
রোহিত, বিরাটদের এখন যা ভয়াবহ ফর্ম, তাতে তরুণদের সুযোগ দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই বলে মত একাংশের। ২০২১ সালের মার্চ থেকে ওয়াংখেড়ে টেস্ট পর্যন্ত ঘরের মাটিতে ৩৫টি টেস্ট ইনিংসে ১,২১০ রান করেছেন রোহিত। গড় হল ৩৭.৮১। চারটি শতরান করেছেন। কিন্তু শেষ ১০টি ইনিংসে ছ'বার ১০-র নীচে আউট হয়ে গিয়েছেন। দু'বার ২০ রান পেরোতে পারেননি। আর দুটি অর্ধশতরান করেছেন। অন্যদিকে, ওই একই সময়ের মধ্যে ২৫টি টেস্ট ইনিংসে ৭৪২ রান করেছেন বিরাট। গড় ৩০.৯১। একমাত্র শতরান এসেছিল আমদাবাদের পাটা পিচে।
আবার অশ্বিন নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম পাঁচটি ইনিংসে ফর্মে ছিলেন না। ওয়াংখেড়েতে দ্বিতীয় ইনিংসের শেষভাগে নিজের ছন্দ খুঁজে পান। তবে ইতিমধ্যে তাঁর বয়স হয়ে গিয়েছে ৩৮। ফলে কতদিন খেলতে পারবেন, তা নিয়ে ধন্দ আছে। আর বিকল্প হিসেবে ওয়াশিংটন সুন্দর তৈরি রয়েছেন। অন্যদিকে, জাদেজার বিকল্প হিসেবে অক্ষর প্যাটেল, মানব সুথাররা আছেন। তবে জাদেজার যা ফিটনেস, তাতে হয়তো তিনি আরও কয়েক বছর টেনে দিতে পারবেন।
২০১১-র যেন পুনরাবৃত্তি না হয়
কিন্তু কে কত বছর খেলতে পারবেন, তা নির্ভর করছে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের উপরে। সূত্র উদ্ধৃত করে ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছে যে বিসিসিআই একটা বিষয় নিশ্চিত চাইছে যে ২০১১ সালের মতো যেন না হয়। সেইসময় পরপর সিনিয়র খেলোয়াড়রা অবসর নেওয়ার পরে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় ভরাডুবি হয়েছিল ভারতের।