বাংলাদেশ প্রিমিয়র লিগে (বিপিএল) কিছু গড়বড় হচ্ছে নাকি? ম্যাচ-ফিক্সিং হয়েছে কি? কয়েকটি ম্যাচে ঘটে যাওয়া ‘উদ্ভট’ ঘটনার প্রেক্ষিতে সেই বিতর্ক উস্কে দিলেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট লেখক জ্যারড কিম্বার। ‘গুড এরিয়াস’ নামে একটি ক্রিকেট ওয়েবসাইটে তিনি যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন, তাতে বিপিএলের দুটি ম্যাচের সময় বেটিং বাজারের কী অবস্থা ছিল, সেটা তুলে ধরেছেন। সেই প্রতিবেদনে তিনি সরাসরি ম্যাচ-ফিক্সিংয়ের কোনও অভিযোগ তোলেননি। কিন্তু ওই দুটি ম্যাচের দুটি ঘটনায় বিশেষভাবে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অবশ্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) তরফে কিছু জানানো হয়নি। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ বোর্ডকে ইমেল করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা ফেরত চলে এসেছে।
কিন্তু কোন কোন ম্যাচের কথা বলা হয়েছে?
ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ৭ জানুয়ারি প্রথমে ব্যাট করে ঢাকা ক্যাপিটালস ১১১ রানে অল-আউট হয়ে যাওয়ার পরে বেটিং বাজার একটা সময় বাজি ধরেছিল যে ১০ ওভারে রংপুর রাইডার্স ৭৯.৫ রানের বেশি করবে। আট ওভারের শেষে রংপুরের স্কোর ছিল এক উইকেটে ৫৪ রান। তখন ক্রিজে ছিলেন অ্যালেক্স হেলস। আর বেটিং বাজার বাজি ধরেছিল যে ১০ ওভারে রংপুরের স্কোর ৭৯.৫ রান বা তার বেশি হবে। অর্থাৎ ১২ বলে ২৬ রান দরকার ছিল। কিন্তু ৮.৪ ওভারে ২৭ বলে ৪৪ রান করে আউট হয়ে যান হেলস। আর সেইসময় রংপুরের স্কোর ছিল ৬১ রানে দু'উইকেট।
বিশাল-বিশাল ওয়াইড! করা হল সন্দেহ প্রকাশ
ইংরেজ তারকা আউট হয়ে যাওয়ার পরে ৭৮.৫ রানের জন্য প্রচুর টাকার বাজি এসেছিল বলে ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, সেই শর্ত পূরণের জন্য আট বলে ১৮ রান করতে হত রংপুরকে। অথচ সেইসময় পর্যন্ত রংপুরের স্ট্রাইক রেট ছিল ১১৯। আর হেলস ছাড়া বাকি খেলোয়াড়দের স্ট্রাইক রেট ৭০ ছিল। তাও বাজি ধরা হয়েছিল যে রংপুরে এবার ২২৫ স্ট্রাইক রেটে রান করবে।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্রিজে এসে প্রথম বলে (৮.৫ ওভার) এক রান নেন ইফতিকার আহমেদ। অর্থাৎ সাত বলে ১৭ রান বাকি ছিল। আর সেই অবস্থায় ওভারের শেষ বলটা লেগস্টাম্পের অনেক বাইরে করেন বোলার। একটু-আধটুর জন্য ওয়াইড হয়নি বলটা। বরং লেগস্টাম্পের বাইরে পিচ করে বলটা বাউন্ডারিতে চলে গিয়েছিল। ফলে রংপুরের স্কোরবোর্ডে যুক্ত হয়েছিল পাঁচ রান। আর শেষ বলটা ডট হওয়ায় ছয় বলে ১২ রান দরকার ছিল রংপুরের।
সেই অবস্থায় দশম ওভারের প্রথম দুটি বলে কোনও রান করতে পারেননি ইফতিকার। তৃতীয় বলে এক রান নেন। চতুর্থ বলে চার মারেন সইফ হাসান। আর পরের বলেই আউট হয়ে যান। অর্থাৎ ৯.৫ ওভারে রংপুরের স্কোর ছিল তিন উইকেটে ৭২ রান। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, বাজার যে রানের উপরে বাজি ধরেছিল, সেটা তুলতে এক বলে সাত রান করতে হত রংপুরকে। সেটা যে অতীতে হয়নি, তা নয়।
কিন্তু যে কায়দায় সেই সাত রান হয়েছে, তা নিয়েই ওই প্রতিবেদনে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ৯.৬ ওভারে খুশদিল শাহ স্ট্রাইকে ছিলেন। তখন একটা বিশাল বড় ওয়াইড করেন বোলার। একেবারেই ছোটখাটো ওয়াইড নয়। বরং রিটার্ন ক্রিজেরও পাশ দিয়ে বলটা বেরিয়ে যায়। চলে যায় বাউন্ডারিতে। ফলে পাঁচ রান পেয়ে যায় রংপুর।
অর্থাৎ ৭৮.৫ রানের গণ্ডি পেরোতে এক বলে দু'রান বাকি ছিল খুশদিলদের। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, সেই অবস্থায় আরও দুটি বড়সড় ওয়াইড করেন বোলার। ফলে ৯.৫ ওভারেই রংপুরের স্কোর তিন উইকেটে ৭৯ রান হয়ে যায়। অর্থাৎ ব্যাটারকে কার্যত কিছুই করতে হয়নি। বোলারের ‘নিয়ন্ত্রণহীনতায়’ বেটিং বাজারের ধরা বাজির তুলনায় বেশি রান ওঠে।
মার খাওয়ার পরেও ‘দুর্বল’ বোলারকে বল দেওয়া হয়
তবে শুধু একটি ম্যাচেই ওরকম ‘উদ্ভট’ ঘটনা ঘটেনি বলে ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ১০ জানুয়ারি ঢাকা ক্যাপিটালস এবং সিলেট স্ট্রাইকার্সের ম্যাচে একইরকম 'উদ্ভট' ঘটনা ঘটেছিল। সিলেটের স্কোর যখন দু'উইকেটে ১৯ রান ছিল, তখন বেটিং বাজারে বাজি ধরা হয়েছিল যে তারা ছয় ওভারে ৬৬ রানের বেশি তুলবে। আর সেজন্য শেষ দু'ওভারে ২৪ রান তুলতে হত সিলেটকে।
ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, পঞ্চম ওভারে ১৩ রান তোলে সিলেট। ফলে পাঁচ ওভারের শেষে স্কোর দাঁড়ায় তিন উইকেটে ৫৫ রান। চতুর্থ ওভারে বিপক্ষ দল ১৪ রান এবং পঞ্চম ওভারে ১৩ রান তোলার পরে ষষ্ঠ ওভার করতে ঢাকা এক পার্টটাইম বোলারের হাতে বল তুলে দেয়। বাজে বোলিং, মিসফিল্ডিংয়ের কারণে ওই ওভারে ১৯ রান ওঠে। আর ছয় ওভারের শেষে সিলেটের স্কোর দাঁড়ায় তিন উইকেটে ৭৪ রান। যা বুকিদের ধরা বাজির থেকে বেশি।
আর দুটি ঘটনা তুলে ধরলেও অস্ট্রেলিয়ান লেখক এটাও বলেছেন যে কারও বিরুদ্ধে ম্যাচ-ফিক্সিংয়ের অভিযোগ তুলছেন না। কোনওরকম প্রমাণ ছাড়া সেই কাজটা করা যায় না। যদিও বিষয়টি নিয়ে বিসিবির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি বলে ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছে।