অ্যাডিলেড টেস্টের শুরুতেই 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' নিয়ে হাজির হলেন কয়েকজন নেটিজেন। তাঁরা দাবি করলেন, পিঙ্ক বল টেস্টের প্রথম দিনে ইচ্ছাকৃতভাবে বাজে বোলিং করেছেন জসপ্রীত বুমরাহরা। কারণ তিনি নাকি চান যে রোহিত শর্মার হাত থেকে ভারতীয় দলের অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়া হোক, ক্যাপ্টেন করা হোক তাঁকে। সেজন্য ইচ্ছাকৃতভাবে বুমরাহরা ইচ্ছাকৃতভাবে খারাপ বোলিং করেছেন বলে দাবি করেছেন নেটিজেনদের একাংশ। তাঁদের দাবি, রোহিতকে পিছন থেকে ছুরি মেরেছেন বুমরাহরা। আর সেইসব ব্যাখ্যা শুনে নিজেদের হাসি থামাতে পারেননি নেটিজেনদের একাংশ। অনেকে তো এটাও বুঝতে পারেননি যে এরকম 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' শুনে হাসবেন নাকি কাঁদবেন। যাঁরা এরকম 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' নিয়ে হাজির হয়েছেন, তাঁদের নিয়ে অনেকে কটাক্ষও করেছেন।
‘রোহিত, আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে’
তারপরও অবশ্য নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকেছেন ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’-র ‘প্রবতর্ক’ নেটিজেনরা। তেমনই একজন বলেছেন, ‘আমার একটা জিনিস মনে হয়। বুমরাহ এবং তাঁর (বোলিং) সঙ্গীরা ইচ্ছাকৃতভাবে জঘন্য বোলিং করছেন, যাতে রোহিতকে বরখাস্ত করা যায় আর জসপ্রীত অধিনায়কত্ব পেয়ে যান। দয়া করে এই দিকটি খতিয়ে দেখুক বিসিসিআই। যখন আপনি জানেন যে স্টাম্পে বল করে উইকেট পাবেন, তাহলে আচমকা কেন সেই কাজটা করা বন্ধ করে দেবেন? আমি দুঃখিত রোহিত শর্মা। কিন্তু আপনার বিরুদ্ধে বড়সড় ষড়যন্ত্র চলছে।’
রোহিত ‘বাহুবলী’, বুমরাহ ‘কাটাপ্পা’, দাবি নেটিজেনদের
সেখানেই থামেননি ওই নেটিজেন। 'বাহুবলী' সিনেমার আইকনিক দৃশ্যে রোহিত এবং বুমরাহের মুখ বসিয়ে তিনি বলেন, 'আর কিছু বলার নেই।' যে ছবিতে দেখা গিয়েছে যে একজন ব্যক্তি (কাটাপ্পা) পিছন থেকে অপর একজনের (বাহুবলী) পিঠে তলোয়ার মারছেন। যিনি তলোয়ার মারছেন, তাঁর মুখে বুমরাহের ছবি বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর যাঁর পিঠে তলোয়ার মারা হয়েছে, তাঁর মুখে বসানো হয়েছে ভারতীয় অধিনায়ক রোহিতের ছবি।
আরও পড়ুন: BGT 2024-25: গোলাপি বলটা ওরা ঠিক করে কাজে লাগাতে পারেনি: বুমরাহ-সিরাজদের কাজে খুশি নন গাভাসকর
বিরক্ত নেটিজেনদের অপর অংশ
আর সেইসব দেখে নিজেদের হাসি চাপতে পারছেন না নেটিজেনদের অপর অংশ। কেউ-কেউ এরকম 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব'-এ বিরক্ত হয়ে গিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তো রোহিত অধিনায়ক ছিলেন। আর তখন প্রায় প্রতিটি ম্যাচে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সময় বুমরাহ উইকেট নিতেন কেন? বার্বাডোজে যে ২৯ জুন ভারতের হাতে বিশ্বকাপ উঠেছিল, সেটার তো বড় কৃতিত্ব প্রাপ্য বুমরাহের। যিনি বিশ্বকাপের সেরাও নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সেই রেশ ধরেই এক নেটিজেন বলেন, ‘সত্যি বলছি, একটু বুদ্ধি হোক আপনাদের মাথায়। আপনারা আর ১৪ বছরের বাচ্চা নন। আর তাছাড়া এই উলটো-পালটা জিনিসে নিজের আইডলকে টেনে আনছেন। কারণ আপনাদের মতো নির্বোধদের কারণে খেলোয়াড়দের অকারণে ঘৃণার মুখে পড়তে হয়।’
বোলাররা নন, সবথেকে বেশি দায়ি ব্যাটাররা
এমনিতে অ্যাডিলেড টেস্টের প্রথমদিনে ভারতীয় বোলাররা যে ঠিকমতো বল করতে পারেননি, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ঠিক লেংথে বল রাখতে পারেননি, যেখান থেকে অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা বিপদ তৈরি করছিলেন। অজি ব্যাাটারদের প্রতিটি রানের জন্য ঘামও ঝরাতে হয়নি। অনেক অতিরিক্তও হয়েছে। নিয়ন্ত্রণের অভাব দেখা গিয়েছে ভারতীয় বোলারদের মধ্যে।
আরও পড়ুন: ভিডিয়ো: বল ব্যাট মিস করতেই ল্যাবুশানকে খোঁচা বুমরাহর, মনে করালেন ইশান্তকে
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, ভারতীয় দল পিঙ্ক বলে খেলে না। ফলে কিছুটা সময় তো লাগবেই মানিয়ে নিতে। আর তাছাড়া বোলারদের শুধু দোষ দিয়ে লাভ নেই। তাঁরা কি প্রতিবার ব্যাটারদের খামতি ঢেকে দিতে পারবেন? এই পিচে ভয়ংকর কিছু ছিল না। তারপরও এক উইকেটে ৬৯ রান থেকে ১৮০ রানে অল-আউট হয়ে গিয়েছে ভারত। রোহিত নিজে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন। ক্যাপ্টেন্সিতেও ভুল করেছেন।
ওই মহলের মতে, বোলারদের সঙ্গে রোহিতের কথা বলার মধ্যে একটা খামতি ধরা পড়েছে। ট্যাকটিকাল ভুলও করেছেন। হর্ষিত রানা, মহম্মদ সিরাজরা যে সময় ঠিক যুত করতে পারছিলেন না, সেইসময় বুমরাহকে বোলিংয়ে আনেননি। আবার এটাও ঠিক যে শুরুতেই যদি নাথান ম্যাকসুইনির ক্যাচটা না ফেলতেন ঋষভ পন্ত, তাহলে পরিস্থিতি আলাদা হতেই পারত। ফলে শুধুমাত্র বোলিংয়ের জন্য অ্যাডিলেডে ভারত ব্যাকফুটে আছে, সেটা কোনওভাবেই বলা যায় না। ব্যাটারদের দোষ সবথেকে বেশি বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।