২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য ভারত জসপ্রীত বুমরাহকে নিয়ে কোনও রকম ঝুঁকি নিতে চায়নি। আর এই ঝুঁকি নিতে না চাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণগুলির মধ্যে একটি হল তারকা পেসারকে ভারতের ভবিষ্যতের টেস্ট অধিনায়ক হিসাবে দেখা হচ্ছে। নীতিন প্যাটেলের নেতৃত্বে ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির (এনসিএ) মেডিক্যাল টিম যখন বুমরাহের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিসিসিআই-এর কোর্টে বল রেখেছিল, তখন নির্বাচকদের চেয়ারম্যান অজিত আগরকারের জন্য এটি কঠিন সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল যে, এনসিএ বলেছে, বুমরাহের সর্বশেষ স্ক্যান রিপোর্টে কোনও সমস্যা ধরা পড়েনি। তবে তারকা পেসার পুরোপুরি কাত হয়ে বোলিং শুরু করতে পারেননি। যেহেতু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মাঝে আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি ছিল, তাই ঝুঁকি নিতে চাননি নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্ট।
আরও পড়ুন: বিষ খাওয়ার ঠিক আগে পন্তের ত্রাতা রজত আর তাঁর বান্ধবীর রেকর্ড করা ভিডিয়ো ঘিরে চাঞ্চল্য
বুমরাহকে রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা শুধুমাত্র যে তিনি বর্তমানে দেশের সেরা একজন ফাস্ট বোলার, তার জন্য নয়। এর পাশে রয়েছে অন্য কারণও। তাঁকে টেস্টের পরবর্তী অধিনায়ক হিসাবেও ভাবা হচ্ছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই দাবি করেছে, বর্তমান ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে আর টেস্টের জন্য বিবেচনা করার সম্ভাবনা নেই এবং বুমরাহ, যিনি টিম ইন্ডিয়ার টেস্ট টিমের মনোনীত সহ-অধিনায়ক, এই বছরের জুন-জুলাইয়ে ইংল্যান্ড সফর থেকে নেতৃত্ব দেবেন।
পিটিআই লিখেছে, ‘আসলে বুমরাহ এখনও পুরো কাত হয়ে বোলিং শুরু করতে পারেননি এবং যাঁরা বিষয়টি জানেন, তাঁরা বলেছেন যে, এত অল্প সময়ের মধ্যে ম্যাচ ফিট করা খুব কঠিন। বরং, তিনি আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে ফিরে আসতে পারেন এবং তার পরে ইংল্যান্ডে ভারতকে নেতৃত্ব দিতে পারেন কারণ রোহিত শর্মাকে আবার টেস্ট দলে নেওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
আরও পড়ুন: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগেই ধাক্কা খেল পাকিস্তান, ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে কিউয়িদের কাছে হারলেন বাবররা
বুমরাহ এখনও পর্যন্ত তিনটি টেস্টে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০২২ সালে রোহিত যখন কোভিডে আক্রান্ত হন, তখন বুমরাহ বার্মিংহ্যামে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পঞ্চম এবং শেষ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ভারত সেই টেস্ট হেরেছিল, কিন্তু বুমরাহ একজন ভালো নেতা হওয়ার লক্ষণ দেখিয়েছিলেন। তিনি তাঁর পরবর্তী সুযোগ পেয়েছিলেন, যখন রোহিত তাঁর দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের জন্য গত বছরের শেষের দিকে অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছেছিলেন। পার্থে বর্ডার-গাভাস্কর ট্রফির প্রথম টেস্টে বুমরাহ একাই দায়িত্ব নিয়ে ভারতকে জয় এনে দেন। ঘটনাচক্রে, হতাশাজনক সিরিজে এটাই একমাত্র টেস্ট জিতেছিল ভারত।
বুমরাহ আবার অধিনায়কের দায়িত্ব নেন যখন রোহিত সিডনিতে শেষ টেস্টের জন্য প্রথম একাদশ থেকে নিজেকে বাদ দিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত বুমরাহ ম্যাচে মাত্র ১০ ওভার বল করার পরে চোট পেয়েছিলেন এবং ভারতকে ১-৩-এ সিরিজ হারতে হয়েছিল।
আরও পড়ুন: ২৭টি ব্যাগ নিয়ে অজি সফরে গিয়েছিলেন তারকা, নড়ে যায় BCCI- রিপোর্ট
কেন নতুন অধিনায়কের প্রয়োজন? রোহিত শর্মা কি অবসর নিচ্ছেন?
২০২৪ সালে টেস্ট ক্রিকেটে রোহিত শর্মার পারফরম্যান্স সবচেয়ে খারাপ ছিল। তিনি ২৫-এর কম গড়ে রান করেছিলেন এবং এক-অঙ্কের ঘরেই বেশি স্কোর করেছেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকে তো রোহিতের ফর্ম একেবারে তলানিতে। বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে। অভিজ্ঞ এই ডানহাতি তাঁর শেষ আট টেস্টে ১০.৯ গড়ে মাত্র ১৬৪ রান করেছেন।
পাশাপাশি, ভারত ২০২৪ সালের শেষ থেকে ২০২৫ সালের শুরুর দিকে রোহিতের নেতৃত্বে ভারত সব কটি টেস্ট অর্থাৎ ছয়টি টেস্টেই হেরেছে, যার মধ্যে রয়েছে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে প্রথম হোয়াইটওয়াশ এবং অস্ট্রেলিয়ায় তিনটি টেস্টে পরাজয়। যে টেস্টগুলিতে রোহিতের স্কোর ছিল যথাক্রনে ২, ৫২, ০, ৮, ১৮, ১১, ৩, ৬, ১০, ৩।
যদিও রোহিত ঘোষণা করেছিলেন যে, কোনও ফর্ম্যাট থেকে তাঁর অবসর নেওয়ার কোনও পরিকল্পনা আপাতত নেই, তবে সম্ভবত ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে বোর্ড ইতিমধ্যেই তাঁর সঙ্গে কথোপকথন শুরু করেছে বলে মনে হচ্ছে। এপ্রিলে রোহিতের বয়স হবে ৩৮। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পরবর্তী ফাইনালের সময় তাঁর বয়স হবে ৪০। তার ডিপিং ফর্মের কথা বিবেচনা করে নির্বাচকেরা একটি স্থায়ী বিকল্প চাইছেন।