আইপিএল ২০২৫-এর চতুর্থ ম্যাচে বিশাখাপত্তনমে লখনউ সুপার জায়ান্টসের (LSG) বিরুদ্ধে খেলতে নেমে একটা সময়ে দারুণ চাপে ছিল দিল্লি ক্যাপিটালস (DC)। ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ২১০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৭ রানে ৩ উইকেট এবং পরে ৬৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে একেবারে কোণঠাসা অবস্থায় ছিল দিল্লি ক্যাপিটালস।
তবে নীচের সারির ব্যাটসম্যানরা, বিশেষ করে আশুতোষ শর্মার নেতৃত্বে, এক অসাধারণ জয়ের ভিত্তি গড়ে তোলে দিল্লি। শেষ দুই ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২২ রান, আর শেষ ওভারে দরকার ছিল মাত্র ৬ রান। শেষ ব্যাটসম্যান মোহিত শর্মা প্রথম বলেই এলবিডব্লিউর একটি ক্লোজ আবেদন থেকে বেঁচে যান এবং এক রান নিয়ে আশুতোষকে স্ট্রাইক দেন। এরপর আশুতোষ একটি বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে DC-র পক্ষে ঐতিহাসিক এক উইকেটের জয় নিশ্চিত করেন, যা আইপিএলের ইতিহাসে মাত্র পঞ্চমবার ঘটেছে।
DC-র সহ-অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসি এই উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচের তুলনা করেছেন ২০০৬ সালে ওয়ান্ডারার্সে দক্ষিণ আফ্রিকার ঐতিহাসিক ৪৩৮ রানের চেজের সঙ্গে, যেখানে শেষদিকে মাখায়া এনটিনি গুরুত্বপূর্ণ এক রান নিয়েছিলেন।
এ দিনের ম্যাচ জয়ের পরে ডু প্লেসি বলেন, ‘অবিশ্বাস্য! এটি আমাকে ৪৩৮ রানের সেই ম্যাচের কথা মনে করিয়ে দিল, যেখানে মাখায়া (এনটিনি) শেষদিকে গুরুত্বপূর্ণ এক রান নিয়েছিল। সম্ভবত এটি মোহিত শর্মার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রান - অসাধারণ এক ফরোয়ার্ড ডিফেন্স, ফাঁকা জায়গায় ঠেলে দিয়ে এক রান নেওয়া। এবং কী দুর্দান্ত এক স্টোরি, যেখানে বড় শট খেলার জন্য ব্যাটসম্যানকে স্ট্রাইকে ফেরানো হয়!’
আরও পড়ুন … IPL 2025: ম্যাচের সময়ে পর্দার আড়াল থেকে CSK-র ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন কে? কী বললেন ধোনি?
DC-র ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে আশুতোষ সপ্তম ওভারে ৬৫ রানে ৫ উইকেট পতনের পর ব্যাট করতে নামেন। ১৩তম ওভারের পর DC-র স্কোর ছিল ১১৬/৬, তখনও দরকার ছিল ৪২ বলে ৯৪ রান, হাতে মাত্র ৪ উইকেট। ইএসপিএনক্রিকইনফোর উইন প্রেডিক্টর তখন DC-র জয়ের সম্ভাবনা মাত্র ১.৫৬% দেখাচ্ছিল।
ফ্যাফ ডু প্লেসি বলেন, ‘অনেক ক্রিকেটার আইপিএলের ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নিয়ম নিয়ে অভিযোগ করে, কিন্তু আজকের ম্যাচে দেখা গেল এই নিয়মের গুরুত্ব। যখন মনে হচ্ছিল আমরা হেরে গেছি, তখনই একজন ব্যাটসম্যান এসে এমন পারফরম্যান্স দেখায়। আমি নিশ্চিত আরও কিছু মশলা চা খাব, যেন শেষের দিকে আমিও ছক্কা হাঁকাতে পারি!’
আরও পড়ুন … IPL 2025: এগুলোই তাঁকে বাকিদের থেকে আলাদা করেছে… কোহলিকে নিয়ে প্রথমবার মুখ খুললেন ধোনি
ডু প্লেসি আরও বলেন, ‘সত্যি বলতে, যখন আমি উইকেট দেখেছিলাম এবং বুঝতে পারছিলাম যে বল কতটা গ্রিপ করছে, তখন মনে হয়েছিল জয় প্রায় অসম্ভব। কিন্তু আজকের ম্যাচ আমার মতো অভিজ্ঞদেরও মনে করিয়ে দিল যে ক্রিকেটে কিছুই অসম্ভব নয়। বাড়তি একজন ব্যাটসম্যান থাকাটা বিশাল পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।’
আশুতোষ ও বিপ্রাজ নিগম তখন একসঙ্গে ৪৫ বলে ৯৭ রান প্রয়োজন থাকাকালীন ব্যাটিং করতে নামেন। মাত্র ২২ বলে তাদের ৫৫ রানের পার্টনারশিপ ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। শেষ ২৪ বলে DC-র প্রয়োজন ছিল ৪২ রান, তখন নিগম ৩৯ (১৫) করে আউট হন। আশুতোষ শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৬৬ রান (৩১ বল) করে।
আরও পড়ুন … ভিডিয়ো: ললিপপ মুখে হেলিকপ্টার থেকে নামলেন! প্রকাশ্যে ‘রবিনহুড’ ছবির ওয়ার্নারের নতুন লুক
ডু প্লেসি আরও বলেন, ‘একজন বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে আমার কাছে সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হল, ভারতীয় ক্রিকেটারদের শক্তি এবং বলকে এত সহজে বাউন্ডারির বাইরে পাঠানোর ক্ষমতা। এটি সহজ উইকেট ছিল না, অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু ম্যাচের শেষ দিকে এই দুই তরুণ যেভাবে এসেই অনায়াসে বাউন্ডারি মারতে থাকল, তা দেখার মতো ছিল!’