সচরাচর টি-২০ ক্রিকেটে ঘাড়ের উপর বিরাট রানের বোঝা চাপলেই রান তাড়া করতে নামা দলের ব্যাটিংকে ভেঙে পড়তে দেখা যায়। তবে এবছর ইডেনের আইপিএল ম্যাচে তেমন ছবি চোখে পড়েনি মোটেও। হাই-স্কোরিং ম্যাচও কীভাবে থ্রিলারে পরিণত হতে পারে, তার উৎকৃষ্ট নমুনা দেখতে পাওয়া গিয়েছে ক্রিকেটের নন্দনকাননে।
আইপিএল ২০২৪-এ ইডেনে যে সাতটি ম্যাচ আয়োজিত হয়েছে, তাতে রান উঠেছে বিস্তর। এমনটা নয় যে, শুধু একদল বড় রান তুলেছে। বরং উভয় দলকেই চার-ছক্কার ফুলঝুরি ফোটাতে দেখা গিয়েছে ইডেনে। অবশ্য বোলারদের জন্য যে বাইশগজে সাহায্য ছিল না, তেমনটা নয় মোটেও। বরং ইডেনে বল হাতে সফল হয়েছেন সুনীল নারিনরাও।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ইডেনের পিচ থেকে কেকেআর একতরফা হোম অ্যাডভান্টেজ নিয়ে গিয়েছে, এমনটা নয় মোটেও। বরং অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে আসা দলও একই রকম সুবিধা পেয়েছে বাইশগজ থেকে। পিচ ও পরিবেশ-পরিস্থিতি ছিল এক্কেবারে নিরপেক্ষ।
ইডেনে প্রথম ম্যাচেই কেকেআরের ২০৮ রানের জবাবে সানরাইজার্স তুলে ফেলে ২০৪ রান। এই মাঠেই কেকেআরের ২২৩ রানের জবাবে ২২৪ রান তুলে ম্যাচ জেতে রাজস্থান রয়্যালস। ম্যাচ শেষ হয় একেবারে শেষ বলে। ইডেনে কলকাতার ২২২ রানের জবাবে ২২১ রান তুলে ম্যাচ হারে আরসিবি। সর্বোপরি টি-২০ ক্রিকেটের ইতিহাসে সব থেকে বড় রান চেজ দেখা যায় ইডেনেই। কেকেআরের ২৬১ রানের জবাবে পঞ্জাব কিংস ২৬২ রান তুলে ম্যাচ জিততে ইডেনের বাইশগজ ইতিহাসে নাম লিখেয়ে ফেলে।
সব মিলিয়ে টি-২০ ক্রিকেটে দর্শকরা মাঠে আসেন যে জন্য, বিনোদনের সব উপরকরণ উপহার দেয় ইডেন গার্ডেন্স। যদিও তার পরেও এবছর আইপিএলের সেরা মাঠ ও পিচের পুরস্কার জোটেনি ইডেনের ভাগ্যে। বরং আইপিএল ২০২৪-এর সেরা মাঠ ও পিচের পুরস্কার পায় হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম।
উপ্পলের কাছে সেরার খেতাব হাতছাড়া করলেও ইডেনের মন খারাপ নয় মোটেও। বরং কেকেআর আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় উচ্ছ্বসিত বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীরা। শুধু কলকাতা এবছর চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বলেই নয়, বরং কেকেআরের খেতাব জয়ের সঙ্গে সঙ্গেই পরের বছর বাড়তি ২টি আইপিএল ম্যাচ পেয়ে যায় কলকাতা। তাও যেমন তেমন লিগ ম্যাচ নয়, বরং ফাইনাল-সহ প্লে-অফের ২টি ম্যাচ।
নিয়ম মতো যে দল আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়, পরের বছর তাদের ঘরের মাঠে খেলা হয় আইপিএল ফাইনাল-সহ ২টি প্লে-অফ ম্যাচ। সেই নিরিখে ২০২৫ আইপিএলের ফাইনাল খেলা হওয়ার কথা ইডেনে। সেই সঙ্গে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচও আয়োজিত হওয়ার কথা কলকাতায়। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, ইডেন পেতে পারে আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচও। সেক্ষেত্রে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেরও সাক্ষী থাকতে পারবেন কলকাতার ক্রিকেটপ্রেমীরা।
২০২৬ টি-২০ বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে ইডেনের সংস্কার হওয়ার কথা এবারের আইপিএলের শেষেই। এখন দেখার যে, সিএবি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইডেনকে নতুন রূপে ক্রিকেটপ্রেমীদের সামনে হাজির করতে পারে কিনা।