ক্লাব বনাম জাতীয় সংস্থার দ্বন্দ্ব ফুটবলে অতি পরিচিত ঘটনা। এবার সম্প্রতি ক্রিকেটেও ঠিক একই ধরণের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আসলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের রমরমার জন্য দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলার আগ্রহ কমছে ক্রিকেটারদের। বিশেষ করে সম্পূর্ণ ফিট ও তরতাজা অবস্থায় ক্রিকেটারদের দেশের জার্সিতে মাঠে নামানোই মুশকিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বিসিসিআই আইপিএলের কৌলিন্য বজায় রাখতে বিদেশি লিগে ভারতীয় ক্রিকেটারদের মাঠে নামার অনুমতি দেয় না। একমাত্র অবসর নেওয়ার পরেই বিদেশি লিগে মাঠে নামতে পারেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, আইপিএল খেলে ভারতীয় ক্রিকেটাররা পর্যাপ্ত অর্থ পকেটে পোরেন। বিসিসিআইয়ের চুক্তি থেকেও ভারতীয় ক্রিকেটাররা মোটে অঙ্কের অর্থ পেয়ে থাকে। ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটেও অর্থ রয়েছে যথেষ্ট। তাই টাকা কামানোর জন্য ভারতীয় ক্রিকেটারদের বিদেশি লিগে মাঠে নামার তেমন প্রয়োজনও হয় না।
তবে অন্যান্য দেশে ছবিটা একই রকম নয় মোটেও। দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলে পর্যাপ্ত অর্থ পাওয়া যায় না বলেই বিদেশি লিগে খেলার প্রতি ঝোঁক বাড়ছে আন্তর্জাতিক তারকাদের। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো ক্রিকেট বোর্ডগুলি খেলোয়াড়দের বিদেশি লিগে মাঠে নামা থেকে আটকাতে পারে না। তবে নিয়ম করে বিদেশি লিগে মাঠে নামা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। অর্থাৎ, বছরে কতগুলি লিগে খেলা যাবে, কোন সময় ফ্র্য়াঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগে মাঠে নামা যাবে না, প্রভৃতি বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায় সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলিকে।
এবার বিদেশি লিগে মাঠে নামার ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে নিজেদের নীতি বদলানোয় বিদ্রোহের আঁচ ইংল্যান্ড ক্রিকেটে। পরিস্থিতি একটাই জটিল হয়ে উঠেছে যে, আগামী বছর ইসিবির নতুন ঘরোয়া টুর্নামেন্ট দ্য হান্ড্রেড বয়কট করার পথে হাঁটতে পারেব ব্রিটিশ ক্রিকেটাররা, এমনটাই খবর।
ইসিবির নতুন এনওসি পলিসির জন্য অন্তত ৫০ জন ব্রিটিশ ক্রিকেটার দ্য হান্ড্রেড বয়কট করতে পারেন বলে রিপোর্ট। গত সপ্তাহেই ইসিবি জানায় যে, ঘরোয়া মরশুমের সময় বিদেশি লিগে খেলার ছাড়পত্র তুলে নেওয়ার কথা ভাবনা চিন্তা করছে তারা। যে সব ক্রিকেটার কাউন্টিতে শুধুমাত্র সীমিত ওভারের ক্রিকেটের জন্য চুক্তিবদ্ধ, তাঁদের ক্ষেত্রে নিয়ম শিথিল করা হতে পারে বলেও জানানো হয়ে ইংল্য়ান্ড ক্রিকেট বোর্ডের তরফে।
আসলে ঘরোয়া টুর্নামেন্ট ছেড়ে ব্রিটিশ ক্রিকেটারদের বিদেশি লিগে মাঠে নামা আটকাতেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে ইসিবি। গত সোমবার ব্রিটিশ ক্রিকেটাররা প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন বলে খবর। সেই বৈঠকের পরেই অন্তত ৫০ জন ক্রিকেটার দ্য হান্ড্রেড বয়কট করতে পারেন বলে খরব সামনে আসে। যদিও বর্তমান টেস্ট দলের কোনও ক্রিকেটার এই তালিকায় রয়েছেন কিনা, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।
সুতরাং, এক্ষেত্রে ঠিক ক্লাব বনাম জাতীয় দল নয়, বরং বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ বনাম ইংল্যান্ডের জাতীয় ক্রিকেট সংস্থার দ্বন্দ্ব দেখা যাচ্ছে। বলাবাহুল্য, ব্রিটিশ ক্রিকেটাররা জাতীয় সংস্থার পাশে না থেকে বিদেশি লিগের দিকেই ঝুঁকে।