প্রয়াত প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার সৈয়দ আবিদ আলি। ৮৩ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন তিনি। জাতীয় দলে একটা সময় চুটিয়ে খেলেছিলেন এই তারকা। ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম ভার্সেটাইল ক্রিকেটার হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল। এছাড়াও তীক্ষ্ণ ফিল্ডিং দক্ষতার জন্য পরিচিত ছিলেন তিনি। সেই আবিদ আলি দীর্ঘ অসুস্থতার পরে বুধবার প্রয়াত হলেন।
নিজের বর্ণময় ক্রিকেট কেরিয়ারে মনসুর আলি খান পতৌদি, এমএল জয়সিমহা, আব্বাস আলী বেগের সঙ্গে চুটিয়ে ক্রিকেট খেলেছেন তিনি। এদিন তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মারা যান। আবিদ আলীর প্রয়াণের খবরটি নর্থ আমেরিকা ক্রিকেট লিগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এনএসিএল তাদের ফেসবুক পেজে লিখেছে, ‘গভীর শ্রদ্ধা ও মর্মাহত হৃদয়ের সঙ্গে আমরা আপনাদের জানাচ্ছি যে, ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার সৈয়দ আবিদ আলি প্রয়াত হয়েছেন। তিনি আমাদের প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করে চলেছেন। নর্থ আমেরিকা ক্রিকেট লিগ তাঁর কাছে ঋণী থাকবে। আসুন আমরা আমাদের প্রার্থনায় তাঁকে স্মরণ করি এবং তাঁর অসাধারণ উত্তরাধিকার উদযাপন করি, নিষ্ঠা ও অধ্যবসায়ের সাথে আমাদের আবেগকে অনুসরণ করে তাঁর স্মৃতিকে সম্মান জানাই।
ডিসেম্বর, ১৯৬৭ সালে অ্যাডিলেডে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে আবিদ আলীর। প্রথম ইনিংসে ৬/৫৫ নিয়ে তার কেরিয়ারের সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। একই সিরিজের শেষদিকে সিডনি টেস্টে ৭৮ ও ৮১ রান করে নিজের অলরাউন্ড পারফরমেন্সের প্রমাণ দেন তিনি।
১৯৬৭ থেকে ১৯৭৪ সালের মধ্যে তিনি ভারতের হয়ে ২৯ টেস্ট খেলে ১,০১৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন এবং ৪৭ উইকেট নিয়েছেন। এখনকার দিনে বিরাট বা জাদেজা কাইফের উইকেটের মধ্যে দৌড়ানো দেখে যারা অবাক হত, তাঁরা আবিদ আলির রানিং বিটউইন দ্য উইকেট দেখলে আরও অবাক হতেন।
সৈয়দ আবিজ আলির বিরল কৃতিত্ব ছিল, তিনি ১৯৬৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি, ১৯৬৯ সালে ঘরের মাঠে তিনটি এবং ১৯৭১ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুটি সহ বেশ কয়েকটি ম্যাচে ভারতের হয়ে ব্যাটিং ও বোলিং উভয়ই ওপেনিং করেছিলেন। তিনি অজিত ওয়াদেকারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অংশ ছিলেন, যা ১৯৭৪ সালে হেডিংলিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে খেলেছিল, তবে সেই ম্যাচে ভারত হেরেছিল।
ওভালে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে, যা ভারত হেরে যায়, আলী ১০ নম্বরে ব্যাট করেন এবং ১১ ওভার বোলিং করে ২১ রানে ১ উইকেট নেন। ১৯৭৫ সালের প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপেও খেলেছিলেন তিনি, যেখানে তিনটি ম্যাচ অংশ নিয়েছিলেন। এই ফরম্যাটে তার সেরা পারফরম্যান্স নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এসেছিল, যেখানে তিনি ৯৮ বলে ৭০ রান করেছিলেন। পাঁচ ম্যাচ খেলে ৯৩ রান সংগ্রহ ও নিয়েছেন সাত উইকেট।
ঘরোয়া পর্যায়ে, আলি ২১২ টি প্রথম-শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছিলেন, ৮,৭৩২ রান করেছিলেন, যার মধ্যে সর্বোচ্চ অপরাজিত ১৭৩ রান ছিল এবং ৬/২৩ সেরা বোলিং পরিসংখ্যানসহ ৩৯৭ উইকেট নিয়েছিলেন। বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় অলরাউন্ডার মদন লাল পোস্ট করেছেন, ‘দুঃখের খবর আবিদ আলী আর নেই। তিনি দুর্দান্ত টিম ম্যান এবং ভাল মানুষ ছিলেন। পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাই। ওম শান্তি’ ।
প্রাক্তন প্রধান জাতীয় নির্বাচক এবং উইকেটকিপার এমএসকে প্রসাদ অন্ধ্রের কোচ হিসাবে আলির সঙ্গে কাটানো দিনের কথা স্মরণ করেছেন। তিনি বলেন, 'এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে আবিদ স্যার মারা গেছেন। বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। পিটিআইকে দেওয়া শোকবার্তায় প্রসাদ লিখেছেন, ‘একটা জিনিস আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, অন্ধ্রের কোচ থাকাকালীন তিনি আমাদের মধ্যে জয়ের খিদে সঞ্চারিত করেছিলেন। শারীরিক ও মানসিকভাবে নিরলস প্রচেষ্টায় তিনি এক দশক ধরে আমাদের দলকে ঘরোয়া ক্রিকেটে একটি বড় শক্তিতে পরিণত করেছেন। অন্ধ্র ক্রিকেটে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’