৯০-এর দশকের শেষর দিক থেকে নতুন শতাব্দীর শুরুর কয়েক বছর ভারতীয় ক্রিকেট অদ্ভুত একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায়। ম্যাচ গড়াপেটার কলঙ্কিত অধ্যায়ের পরে ভারতীয় ক্রিকেট খোঁজ করতে থাকে নতুন সুপারস্টারের। এই সময়ে আত্মপ্রকাশ করা বীরেন্দ্র সেহওয়াগ, যুবরাজ সিং, হরভজন সিংরা পরবর্তী সময়ে সুপারস্টার তকমা পেয়ে যান। বর্ণোজ্জ্বল কেরিয়ারই এক্ষেত্রে তাঁদের আলাদা করে চিহ্নিত করে রাখে।
তবে আরও বেশ কিছু ক্রিকেটারকে এই সময়ে যাচাই করা হয়, যাঁরা একবার বাদ পড়ার পরে আর দ্বিতীয় সুযোগ পাননি আন্তর্জাতিক আঙিনায়। টিনু জোহানন, অজয় রাতরা, এসএস দাস, দীপ দাশগুপ্ত প্রমুখ টিম ইন্ডিয়ার হয়ে বেশ কিছু ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ পান। তবে বাদ পড়ার পরে আর ফিরে আসেননি।
তবে হারিয়ে যাওয়া ক্রিকেটারদের ভিড়ে এমন একটি নাম রয়েছে, যাঁকে পরবর্তী সময়ে আর স্পটলাইটেই দেখা যায়নি। বর্তমানে তাঁর পরিচিতি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার একজন সাধারণ কর্মী। অথচ একসময় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল দ্রাবিড়, বীরেন্দ্র সেহওয়াগদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করেছেন তিনি।
উত্তরপ্রদেশের বিচক্ষণ বাঁ-হাতি স্পিনার ছিলেন জ্ঞানেন্দ্র পান্ডে, যাঁর ব্যাটের হাত ছিল অত্যন্ত ভালো। ১৯৯৯ সালের ২৪ মার্চ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পেপসি কাপের ম্যাচে প্রথমবার ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপান তিনি। জয়পুরে নিজের অভিষেক ম্যাচে ১০ ওভারে ১টি মেডেন-সহ মোটে ৩৯ রান খরচ করেন পান্ডে। যদিও কোনও উইকেট পাননি তিনি। পরে ব্যাট করতে নেমে শূন্য রানে আউট হন জ্ঞানেন্দ্র।
পরে মোহালিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টুর্নামেন্টের ষষ্ঠ ম্যাচে দ্বিতীয়বার ভারতের হয়ে মাঠে নামেন জ্ঞানেন্দ্র। সেই ম্যাচে ১০ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ম্যাচে ৩ ওভার বল করে ২১ রান খরচ করেও কোনও উইকেট পাননি পান্ডে।
এই ২টি ম্যাচের পরেই জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন জ্ঞানেন্দ্র। আর কখনও ডাক পাননি টিম ইন্ডিয়ায়। ১৯৯৯ সালেই নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে জাতীয় দলে ঢোকার সম্ভবনা তৈরি করেছিলেন জ্ঞানেন্দ্র। তবে তৎকালীন বিসিসিআই সচিব জয়বন্ত লেলের আপত্তিতে টেস্ট স্কোয়াডে ঢোকা হয়নি জ্ঞানেন্দ্রর।
আরও পড়ুন:- LSG-তে লোকেশ রাহুলের ভবিষ্যৎ নিয়ে মুখ খুললেন গোয়েঙ্কা, রিটেনশন নিয়ে বজায় রাখলেন সাসপেন্স
সেই সময় পান্ডের মনে হয়েছিল নিজের ভুলেই হয়তো জাতীয় দলের দরজা খোলেনি। তবে পরে বুঝেছেন যে, শেষ হার্ডল পেরোনোর জন্য কোনও ট্রিক জানা ছিল না তাঁর। বাদ পড়ার পরে একেবারেই প্রচারের আড়ালে চলে যান জ্ঞানেন্দ্র। আরও বছর ছয়েক উত্তরপ্রদেশের হয়ে খেলা চালিয়ে গেলেও কেউ কখনও জিজ্ঞাসা করেনি যে, কেন আর সুযোগ আসেনি। সংবাদমাধ্যমও তাঁর হয়ে সওয়াল করেনি, এটাই আক্ষেপ জ্ঞানেন্দ্রর।
উল্লেখ্য, জ্ঞানেন্দ্র পান্ডে মোট ১১৭টি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচে মাঠে নেমে ১৬৫টি উইকেট নিয়েছেন। সেই সঙ্গে ব্যাট হাতে সংগ্রহ করেছেন ৫৩৪৮ রান। ৯টি সেঞ্চুরি ও ৩০টি হাফ-সেঞ্চুরি রয়েছে তাঁর। ৮২টি লিস্ট-এ ম্যাচে ৮৯টি উইকেট ও ১৭৮১ রান সংগ্রহ করেছেন পান্ডে।