আইপিএলে মেন্টর হিসাবে প্রচুর তরুণ ক্রিকেটারদের তুলে নিয়ে এসেছিলেন গৌতম গম্ভীর। কলকাতা নাইট রাইডার্স হোক কিংবা লখনউ সুপার জায়ান্ট- সব জায়গায় তারুণ্যের উপর জোর দিতেন তিনি। তার ফলও হাতেনাতে পেয়েছে দলগুলি। গম্ভীর বরাবরই সোজাসোজি ক্রিকেটারদের সঙ্গে বার্তালাপ করতে পছন্দ করেন। কাউকে মুখের উপর উচিত কথা বলতেও ছাড়েন না তিনি। আইপিএলের মতো বড় টুর্নামেন্ট খেলোয়াড়দের জন্য খুব কঠিন একটি মঞ্চ, আর যখন কোনও খেলোয়াড় লাগাতার সুযোগ না পান দলের হয়ে খেলার তখন বিষয়গুলি আরও কঠিন হয়ে ওঠে। সেই সময় দলের মেন্টরদের অবদান অনস্বীকার্য হয়ে ওঠে।
একদা আইপিএলের তারকা ক্রিকেটার মনন ভোরা তাঁর এবং গম্ভীরের একটি কথোপকথন তুলে ধরেছেন সম্প্রতি। মনন আইপিএলে ৫০টির বেশি ম্যাচ খেলেছেন। একটা সময় দলে নিয়মিত না খেলতে পেরে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেই সময় গম্ভীরের মন্ত্র কীভাবে তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারে পরিবর্তন ঘটিয়েছিল সেই সম্পর্কে জানান মনন। ঘটনাটি যখন মনন ভোরা রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে খেলতেন সেই সময়ের। তখন সারা মরশুম বেঞ্চে বসেই কাটাতে হয়েছিল তাঁকে, অপর দিকে রিয়ান পরাগকে লাগাতার সুযোগ দেওয়া হচ্ছিল।
ভোরা একটি ইউটিউব চ্যানেলের পডকাস্টে বলেন, ‘একজন খেলোয়াড় স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য সব সময় খেলতে চান, তার পক্ষে খেলার সুযোগ না পাওয়াটা খুবই কঠিন একটি পরিস্থিতি। রাজস্থান রয়্যালস-এ রিয়ান পরাগ যখন এসেছিল তখন তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর, আর আমি সেখানে আগেই ছিলাম। ওঁ আমার সঙ্গে অনেক কথা বলত, বড় ভাই হিসাবে দেখত আমায়, আমিও তাঁর পাশে থাকতাম এবং গাইড করতাম। বরাবরই ওঁ খুব আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান ছিল। দলের হয়ে খেলার সুযোগ পাচ্ছিল। এমন একটি পর্যায় ছিল যখন রিয়ান ভালো খেলছিল না, কিন্তু তারপরও দলের তরফে তাঁকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আমার এই জন্য খারাপ লাগেনি যে তিনি সুযোগ পাচ্ছেন, আমার খারাপ লেগেছিল আমারও এমন সুযোগ পাওয়া উচিত ছিল। গম্ভীরের সঙ্গে লখনউয়ে সাক্ষাতের আগে পর্যন্ত এই খারাপ লাগার বিষয়টা সব সময় আমার মনে ঘুরতে থাকত’।
পরে লখনউ সুপার জায়ান্ট-এ যোগ দেন মনন ভোরা। সেই সময় লখনউয়ের মেন্টর ছিলেন গৌতম গম্ভীর। সেখানে ১টি ম্যাচ খেলার পর তাঁকে প্রথম একাদশ থেকে বসিয়ে দেওয়া হলে প্রশ্ন তোলেন মনন, তখন বাস্তবতার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটিয়েছিলেন গৌতম গম্ভীর। সেই সময় তিনি মননকে বলেছিলেন, ‘জীবন প্রত্যেকের জন্য আলাদা। কিছু খেলোয়াড় ৮টি ম্যাচ পায়, কেউ কেউ মাত্র ১টি পায়। সবাই একই পরিমাণ ম্যাচ খেলার সুযোগ পায় না, তবে তুমি যদি একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে থাক, তবে তোমাকে শুধুমাত্র সেই একটি ম্যাচেই নিজেকে প্রমাণ করতে হবে, ব্যাস গল্প শেষ’। এরপর মনন বলেন, ‘আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমার খারাপ লাগতে পারতা, কিন্তু আমি সেই কথোপকথনের গভীরতা বুঝতে পেরেছিলাম’। তিনি জানান গম্ভীরের এই বক্তব্য তাঁর চিন্তাধারার পরিবর্তন ঘটিয়েছিল।