এবারের আইপিএলে রানের ছড়াছড়ি। এতকাল যা দেখা যেত না, এবারের আইপিএলে তাই দেখা যাচ্ছে। মিচেল স্টার্কের মতো বোলারের ইকোনমি ১১-র ওপরে। শেষ ১২টি ম্যাচের মধ্যে সাতটি ম্যাচেই উঠেছে ২০০-র বেশি রান। ১২টি ম্যাচের ২৪ ইনিংসের মধ্যে ১২টি ইনিংসে পেরিয়েছে ২০০-র গন্ডি। বোলারদের প্রায় নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে এই উইকেটে বোলিং করতে। বহুক্ষেত্রেই প্রশ্ন উঠছে পিচ নিয়ে। বোলাররা বারবারই বলছেন ফ্ল্যাট উইকেট হওয়ার তাঁদের কাজটি কঠিনই হচ্ছে। স্টার্ক, নরকিয়ার মতো বোলাররা তো কার্যত দাঁড়াতেই পারছেন না। অভিষেক শর্মা, সুনীল নারিন, ট্রাভিস হেড, জস বাটলাররা দাপট দাপট দেখাচ্ছেন শুরুর দিকে। এরপর শিবম দুবে, রিয়ান পরাগরাও ছাড়ছেন না। অর্থাৎ নতুন বল বা পুরোনো, কোনও কিছুতেই সেরকম সাহায্য পাচ্ছে না তাঁরা। স্পিনারদের মধ্যে যুজবেন্দ্র চাহাল নজর কেড়েছেন বটে। তবে ওই এক দুজনই ব্যতিক্রম, বাকিরা সবাই ফ্ল্যাট পিচে কঠিন পরীক্ষায় পড়ছেন। হোম অ্যাডভান্টেজও সেরকমভাবে পাচ্ছে না দলগুলি। যা নিয়ে কদিন আগে আক্ষেপ করেছিলেন চেন্নাইয়ের কোচ স্টিফেন ফ্লেমিং
চেন্নাইয়ের উইকেট বরাবরই স্পিন সহায়ক হয়। চিপকে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট রয়েছে অনীল কুম্বলের। এই স্টেডিয়ামের ১০ জন সফল বোলারের মধ্যে ৯জনই স্পিনার। কয়েকদিন আগে সিএকের কোচ স্টিফেন ফ্লেমিং বলেছিলেন, এবারে চেন্নাইয়ের পিচ একদমই স্লো টার্নার নয়। ফলে ফ্ল্যাট ট্যার্ক হওয়ায় স্পিনাররা সমস্যায় পড়ছে।
আরও পড়ুন-IPL - ‘আমি অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু ও শোনেনি’, উথাপ্পার কোন ব্যবহার এখনও মনে রয়েছে কুম্বলের?-ভিডিয়ো
ইডেন গার্ডেন্সও বরাবরই শুরুর দিকে ব্যাটারদের এবং পরের দিকে স্পিনারদের সাহায্য করে। এবারে ইডেন গার্ডেন্সে সেই রকম পিচই রয়েছে। সুনীল নারিন এই পিচে যথেষ্টই ভালো বোলিং করেছেন। বরুণ চক্রবর্তীও গত দুই ম্যাচে উইকেট নিয়েছে। শেষ দুই ম্যাচে চার ইনিংসেই ২০০-র ওপর রান উঠেছে।
চণ্ডিগড়ের মুল্লানপুরে পঞ্জাব কিংস তাঁদের ম্যাচ খেলছে। মোহালিসহ পঞ্জাবের উইকেট স্পোর্টিং হয় সাধারণত। এখানেও তাই। পেসাররাও ঠিক ঠাক লাইন লেন্থ রাখতে পারলে তবেই কম রান দিচ্ছেন।
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম, বরাবরই স্লো উইকেট। বিশ্বকাপ ফাইনালেও তেমন দেখা গেছিল। শুরুর দিকে বোলার বান্ধব থাকলেও পরের দিকে উইকেট স্লো হয়ে যায়। এবারে গুজরাটের হোম ম্যাচেও সেরকমই দেখা গেছে।
সাওয়াই মানসিংহ স্টেডিয়াম রাজস্থানে। এখানকার পিচ বোলারদের জন্য বেশ ভালো। এই স্টেডিয়ামে এখনও পর্যন্ত শুধুই দুটি দল ২০০ রানের গন্ডি টপকেছে। মাত্র একজন ব্যাটারই শতরান পেয়েছে। স্পিনার এবং পেসাররাই সুবিধা পায়। সেই কারণে চাহাল, বোল্ট বা বার্গার এবারে উইকেটের মধ্যে রয়েছেন
আরও পড়ুন-IPL 2024- 'Don't spread nonsense', মিথ্যে উদ্ধৃতির অভিযোগে এক ওয়েবসাইটকে ধুয়ে দিলেন রায়াডু
চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের গ্রাউন্ড ছোট হওয়ার কারণে বরাবরই ব্যাটারদের স্বর্গরাজ্য বলা যায়। বড় লক্ষ্যমাত্রা খাড়া করেও নিশ্চিন্ত হওয়া যায় না ম্যাচ জয়ের ব্যাপারে। কারণ তাও সহজে চেজ হয়ে যায়। স্পিনাররা এখানে তেমন সুযোগ পাননা, তবে পেসাররা এই উইকেট পছন্দ করেন।
হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামের উইকেট ফ্ল্যাট হয় সচরাচর। সেই কারণে পেসারদের তুলনায় স্পিনাররা এখানে বোলিং করতে পছন্দ করে। কিন্তু ট্রাভিস হেড, অভিষেক শর্মা, ক্লাসেনরা অনবদ্য ছন্দে থাকায় এখন এখানে কোনও স্পিনারই শান্তিতে বোলিং করতে আসছেন না।
লখনউয়ের একানা স্টেডিয়ামে পেসাররা সুবিধা পাননা। বল একটু পুরোনো হলে তাঁরা তুলনায় ভালো বোলিং করেন। কারণ এখানকার উইকেটও খুব স্লো।
দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম ব্যাটারদের কাছে খুবই পছন্দের। একদম ফ্ল্যাট ট্র্যাক। নরকিয়ার মতো বোলার যেখানে দাঁড়াতেই পারছেনা। কদিন আগেই ৩৯.১ ওভারে ৪৬৫ রান করেছিল দুই দল। দিল্লির বিপক্ষে হায়দরাবাদ করে ২৬৬, এরপর পন্তরাও করে ১৯৯।
আরও পড়ুন-দেশে ফিরেই সরকারকে এক হাত নিলেন ভারতের পতাকা ওড়ানো পাকিস্তানি খেলোয়াড়
মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের উইকেট যথেষ্টই স্পোর্টিং। স্পিনার এবং পেসাররা পর্যাপ্ত সুবিধা পায়। ব্যাটারদেরও ক্ষেত্রে বল ঠিক ঠাক ব্যাটে আসে। অর্থাৎ বাড়তি বাউন্স বা সুইং কোনওটাই নেই। বোলার নিজের ক্ষমতাতেই বল সুইং করিয়ে থাকেন।
হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় ডিউ ফ্যক্টরের জন্য পরের দিকে ব্যাটিং নিতে পছন্দ করে সব দল। কারণ এখানে পিচ প্রধানত ব্যাটিং সহায়ক। দঃ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০০ রান করেও হেরেছিল ভারত। পরের দিকে বোলিংয়েই বেশি অসুবিধা হয় ডিউয়ের কারণে। অসমের বারসাপারা স্টেডিয়ামে বোলাররা তেমন সুবিধা পাননা। তবে স্পিনাররা কিছু ক্ষেত্রে নজর কাড়ে।
আইপিএলে বোলাররা বারবারই অভিযোগ করছে ফ্ল্যাট উইকেটের। এই মূহূর্তে ইডেন,চিপক এবং সাওয়াই মানসিংহ স্টেডিয়ামে তাঁদের একটু পরিস্থিতি ভালো বলা যায়। এরই মধ্যে ইম্প্যাক্ট প্লেয়ারের নিয়ম তাঁদের পরিস্থিতি আরও করুণ করেছে।