সোমবার দিনই ভারতীয় ক্রিকেটে ইতিহাস গড়েছে বাংলা দলের মেয়েরা। সিনিয়র ওয়ান ডে ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে ৩৯০ রান তাড়া করতে নেমে, পাঁচ বল বাকি থাকতেই চেজ করে জিতে নিয়েছে বাংলার মহিলা দল। শেফালি বর্মার দুরন্ত ইনিংস সত্ত্বেও বাংলার মহিলারা কঠিন ম্যাচও সহজে বের করে নিয়ে এসেছে। দলগত সংহতিতেই এসেছে জয়।কারণ কম বেশি প্রত্যেক ব্যাটারই অবদান রাখার চেষ্টা করেছেন দলের জয়ে।
আরও পড়ুন- বুমরাহকে বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য প্রাক্তন ইংরেজ তারকার? বাবা কলকাতার ছেলে ছিলেন!
উইকেটে রান উঠবে, আগেভাগেই আঁচ করেছিলেন বাংলার মহিলা দলের কোচ প্রবাল দত্ত। সেই মতো টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত মতো বাংলা দল টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিল। এরপর শেফালি বর্মার ম্যাজিকাল ইনিংসে পাহাড় প্রমাণ ৩৮৯ রান তুলে নেয় হরিয়ানা, কিন্তু হতচকিত না হয়ে তনুশ্রী সরকার, প্রিয়াঙ্কা বালারা সেই রান তাড়া করে জিতে নেয়। তবে ৪০০র কাছাকাছি রান উঠে গেলেও, কোচের পেপটকই মধ্যাহ্নভোজে তাতিয়ে দেয় ব্যাটারদের।
ব্যাটারদেরই দায়িত্ব নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন কোচ-
HT বাংলার তরফে বাংলার মহিলা দলের কোচ প্রবাল দত্তের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি জানাচ্ছিলেন, ‘৩০০র ওপর রান উঠবে সেটা বুঝতে পেরেছিলাম, ব্যাটিং উইকেটই ছিল। কিন্তু এত রান উঠবে বোঝা যায়নি। শেফালি বর্মা একটা ব্রিলিয়ান্ট ইনিংস খেলে দিয়েছিল। তবে আমি মেয়েদের লাঞ্চের সময় বলেছিলাম, এই ম্যাচ ব্যাটারদেরই শেষ করতে হবে। টেলেন্ডারদের ওপর ভরসা করলে হবে না, কারণ এটা ব্যাটিং উইকেট। মেয়েরা সেই চাপ নিতে পেরেছে, ধৈর্য দেখিয়েছে। তবে আমি সবাইকে বলেছি, ব্যক্তিগতভাবে আনন্দ করতেই পারো, কিন্তু এখই বেশি সেলিব্রেশন করা চলবে না, সামনে সেমিফাইনাল ম্যাচও রয়েছে। বোলিং নিয়েও আমরা একটি রিভিউ ভিডিয়ো সেশন করছি আজ’।
অতীতে বাংলা দলের নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি প্রবাল দত্ত দায়িত্ব সামলেছেন মণিপুর সিনিয়র দলেরও। শেষ কয়েকবছর ধরেই বাংলার মহিলা দলের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি, অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী বাংলা দল। স্বপ্ন, এই দল থেকে শুধু রিচা, তিতাসরাই নন, আরও মেয়েরা যেন সুযোগ পান ভারতের নীল জার্সিতে খেলার।
আরও পড়ুন-ওয়ার্নারের স্লেজিংয়ে ভয় পাননি! উল্টে দ্বিগুন স্লেজিং করেন পূজারা! ফাঁস করলেন রহস্য…
ব্যাটে বলে অনবদ্য তনুশ্রী
বাংলা দলকে যারা হরিয়ানার বিরুদ্ধে রেকর্ড রান তাড়া করে জেতালেন সেই তনুশ্রী, প্রিয়াঙ্কাদের খুটিনাটি বাংলার ক্রিকেটভক্তরা অনেকেই জানেন না। রেলে কর্মরত তনুশ্রী এই ম্যাচে একাই সব লাইমলাইট কেড়ে নেন। বল হাতে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট, এরপর ফার্স্ট ডাউনে নেমে তনুশ্রী সরকার দুরন্ত শতরান করেন। মাত্র ৮৩ বলে ২০টি চার মেরে ১১৩ রানের ইনিংস খেলেন।
নদীয়ার মেয়ে প্রিয়াঙ্কা, ১৯ বছরেই তারকা স্বস্তি
ঝুলন গোস্বামী যে জেলা থেকে উঠে এসেছে সেই নদীয়ার মেয়ে প্রিয়াঙ্কা বালা, যিনি সোমবারের ম্যাচে ৮১ বলে ৮৮ রানের ইনিংস খেলে দলকে জেতান, তিনিও কাজ করেন রেলওয়েতেই। পরিবারের আর্থিক উপার্জনের ব্যক্তি বলতে তিনি নিজেই, তাই বাংলার হয়ে ক্রিকেটের মাধ্যমেই সংসার টানেন তিনি। কলকাতার দুই মেয়ে ধারা গুজ্জার এবং স্বস্তি মণ্ডল শুরুটা দুর্দারন্তভাবে করেন বাংলার। ওপেনিংয়ে এসে ৪৯ বলে ৬৯ রান করেন ধারা, ২৯ বলে ৫২ রান করেন স্বস্তি। মাত্র ১৯ বছর বয়স স্বস্তির, আর তাতেই হরিয়ানার বোলারদের পিটিয়ে কার্যত বাংলার জয়ের প্রথম ভিত গড়ে দিয়েছিলেন তাঁরা।
আরও পড়ুন- নতুন বছরে বাগান সমর্থকদের উপহার সঞ্জীব গোয়েঙ্কার! হায়দরাবাদ FC ম্যাচের টিকিট ফ্রি
লিস্ট এতে সবচেয়ে বেশি রান চেজ-
মহিলাদের লিস্ট এ ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয় বাংলার! হরিয়ানাকে হারিয়ে উঠল সেমিতে। হরিনায়ার বিরুদ্ধে ৩৯০ রান তাড়া করে বাংলা মহিলা দল। এর আগে ক্যান্টেবারির বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে ৩০৯ রান তাড়া করে জিতেছিল নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্ট। ২০২৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কা ৩০২ রান তাড়া করে জেতে। ২০২১ সালে থান্ডার্সের বিরুদ্ধে ২৯২ রান তাড়া করে জেতে ওয়েস্টার্ন স্টর্ম। ২০২৩ সালে টাইফুনের বিরুদ্ধে ২৯০ রান তাড়া করে জেতে ড্র্যাগনসরা।