যদিও পাকিস্তান এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে ছিটকে যায়নি। তবে তাদের প্রস্থান এখন সময়ের অপেক্ষা। এর আগে ২০২৩ ওডিআই এবং ২০২৪ টি২০ বিশ্বকাপে তারা পঞ্চম স্থানে শেষ করেছিল। নকআউট পর্বে যেতে ব্যর্থ হয়েছিল পাকিস্তান। এবার চলতি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও তাদের নকআউটে যাওয়ার সম্ভাবনা কার্যত নেই। অথচ পাকিস্তান এবার আয়োজক দেশ। পাশাপাশি তারা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নও।
চলতি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তান তাদের গ্রুপ লিগের প্রথম দু'টি ম্যাচেই হেরেছে। প্রথমটিতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬০ রানে হেরেছে তারা। দ্বিতীয় ম্যাচটিতে তারা ৬ উইকেটে টিম ইন্ডিয়ার কাছে হেরেছে। আর পাকিস্তানের এহেন খারাপ পারফরম্যান্সের পর কিংবদন্তি ওয়াসিম আক্রম এবং শোয়েব আখতার ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন।
পাকিস্তানের ব্যাটিং শৈলীর কড়া সমালোচনা করেছেন অভিজ্ঞ ফাস্ট বোলার আক্রম। স্লো ক্রিকেট খেলছেন বাবর আজমরা। যা নিয়ে সমালোচনাও চলছে। যে কারণে স্কোরও বেশি হচ্ছে না। প্রথমে ব্যাট করে ২৪১ রান করেছিল তারা। যা শক্তিশালী ভারতীয় ব্যাটি-অর্ডারের সামনে খুব কম স্কোর বলে মনে হয়েছে। আক্রমও মনে করেন যে, পাকিস্তান এই ম্যাচটি প্রথম ইনিংসেই হেরে গিয়েছে। আক্রম বলেছেন যে, পাকিস্তান পাওয়ারপ্লে-র সুবিধা নিতে ব্যর্থ হয়েছে, অন্য দিকে ভারত শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মানসিকতা নিয়ে খেলেছে।
আরও পড়ুন: শামি, রোহিতের চোট কি গুরুতর? পাওয়া যাবে পরের ম্যাচে? বড় আপডেট দিলেন শ্রেয়স আইয়ার
এছাড়াও তিনি দল নির্বাচন নিয়েও ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে খুশদিল শাহ এবং সলমন আলি আগাকে বোলার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। আক্রমের দাবি, ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে এত বড় ম্যাচে পার্টটাইম বোলারদের উপর নির্ভর করাটা একটা বড় ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে।
আক্রমের দাবি, ম্যাচটি প্রথম ২০ ওভারেই হেরে গিয়েছিল পাকিস্তান
ক্ষুব্ধ আক্রম বলেছেন, ‘প্রথম ১০ ওভারে ভারত ১১টি বাউন্ডারি মেরেছে। প্রথম ২০ ওভারে ১১টি বাউন্ডারি মেরেছে পাকিস্তান। ম্যাচ সেখানেই শেষ। আমি জানি না, ওরা (পাকিস্তান) কী ভাবছিল! ওরা কি ভাবছিল যে, খুশদিল শাহ এবং সলমন আলি আগা বিশ্বমানের খেলোয়াড়দের আউট করতে পারে? কৌশল কী ছিল? আসলে কোন কৌশলই ছিল না।’
স্পোর্টস সেন্ট্রালে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ভক্তরা আর ফাঁকা প্রতিশ্রুতি এবং প্রত্যাশা মানতে রাজি নন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’ তাঁর দাবি, ‘আমরা বছরের পর বছর ধরে একই খেলোয়াড়দের সাথে সাদা বলের ক্রিকেটে হেরে আসছি। এখন সময় এসেছে সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার এবং নির্ভীক ক্রিকেট খেলা তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে আসার। আপনি যদি বড় পরিবর্তন করতে চান, তবে পরিবর্তন প্রয়োজন। নতুন খেলোয়াড়দের ছয় মাস সময় দিন, ওদের সমর্থন করুন এবং ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি শুরু করুন।’
আরও পড়ুন: ‘বড় শট মার’- দু'রান বাকি থাকতে বললেন রোহিত, চার মেরে অধিনায়কের ইচ্ছাপূরণ বিরাটের- ভিডিয়ো
দল নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললেন প্রাক্তন তারকা
তিনি আরও বলেছেন, ‘গত পাঁচ ম্যাচে পাকিস্তানের বোলাররা ৬০ গড়ে ২৪টি উইকেট নিয়েছেন। চমকপ্রদ পরিসংখ্যান হল যে, ওমান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ ১৪টি দলের মধ্যে পাকিস্তানের বোলিং গড় এই বছর ওডিআই ক্রিকেট খেলে দ্বিতীয় সবচেয়ে খারাপ। আমাদের এখন কী করা উচিত? চেয়ারম্যানকে (পিসিবি প্রধান নাকভি) দেশে ফিরে অধিনায়ক, কোচ এবং নির্বাচক কমিটিকে ডেকে জিজ্ঞেস করতে হবে যে, তারা কী দল নির্বাচন করেছে। মনে হয়েছিল, খুশদিল শাহ এবং সলমন আগা ভারতের কোনও ব্যাটসম্যানকে আউট করতে পারে? আমরা এখানে চিৎকার করে বলছি, স্কোয়াড ভালো নয়। চেয়ারম্যান তাদের একদিন হাতে রেখে দল ঘোষণা করতে বলেন। আর ওরা এক ঘণ্টা বৈঠক করে দল ঘোষণা করেন দেয়।’
রিজওয়ানের সমালোচনা করেছেন আক্রম
রিজওয়ানের তীব্র সমালোচনা করে আক্রম বলেছেন, ‘ক্যাপ্টেন জাহাজের নেতা। রিজওয়ান যদি নিজেই না জানেন, ওর দলে কোন ম্যাচ উইনার দরকার, তবে দলটি কীভাবে সফল হবে? লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ভারত যখন ১৫তম এবং ১৮তম ওভারে পৌঁছেছিল, তখন পাকিস্তানি খেলোয়াড়রা তখনই ম্যাচটি হেরে বসে ছিল। ভক্তরা তাড়াতাড়ি বের হয়ে যাচ্ছিল, এরকমটা আমি আগে কখনও দেখিনি। এটা দুর্ভাগ্যজনক।’
আরও পড়ুন: কোহলিকে বল ছুঁড়ে আঘাতের চেষ্টা, শুভমনকে ইশারায় মাঠ ছাড়ার নির্দেশ- ঔদ্ধত্য আব্রারের, শুরু বিতর্ক
চাঁচাছোলা সমালোচনা শোয়েবেরও
শোয়েব আখতারও একই কথা বলেছেন। তিনি পাকিস্তান ম্যানেজমেন্টকে ‘মগজহীন’ বলেছেন। তিনিও দল নির্বাচনের তীব্র সমালোচনা করেছেন। খেলোয়াড়দের নিয়ে বলেছেন, পাক প্লেয়ারদের কেউই বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মার দক্ষতার কাছাকাছিও যেতে পারেননি।
শোয়েব বলেছেন, ‘আমি মোটেও হতাশ নই (ভারতের কাছে পরাজয়)। কারণ আমি জানতাম কী হবে। পাঁচ জন বোলার নির্বাচন করাটা মোটেও সঠিক হয়বি। পুরো বিশ্ব ছয় বোলারে খেলছে... দু'জন অলরাউন্ডারকে খেলিয়ে সেরার আশা করা হয়েছিল? মস্তিষ্কহীন, বুদ্ধিহীন ব্যবস্থাপনা। আমরা একা খেলোয়াড়দের দোষ দিতে পারি না। খেলোয়াড়রা ঠিক ম্যানেজমেন্টের মতো। ওরা কী করবে জানে না। উদ্দেশ্য নেই কোনও। দক্ষতার ক্ষেত্রে, রোহিত, বিরাট বা শুভমানের ধারেকাছে যায় না। ওরা কোনও স্পষ্ট নির্দেশনা ছাড়াই খেলতে গিয়েছে। কেউ জানে না, তাদের কী করা উচিত।’