এত বছরের আইপিএলে মাত্র একবারই জসপ্রীত বুমরাহ পুরো মরশুম মিস করেছেন চোটের জন্য, সেটা বছর দুয়েক আগে। তিনি এবারও প্রথম কয়েকটি রাউন্ডের ম্যাচ মিস করতে চলেছেন বলে জানা গেছে। অস্ট্রেলিয়া সফরে রোহিত শর্মা বুমরাহকে দিয়ে টানা বোলিং করিয়েছিলেন, আর তার ফলই এবার চোকাতে হতে পারে হার্দিক পাণ্ডিয়ার মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে। আজকাল ভারতের ফাস্ট বোলিং একটা চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে, যেটা বছর দুয়েক আগে ছিল না। কয়েক বছর আগে ফাস্ট বোলিংয়ের ক্ষেত্রে মহম্মদ সিরাজ, মহম্মদ শামি, উমেশ যাদবদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখা যেত। কিন্তু বর্তমানে সেই পরিস্থিতি বদলে গেছে। সিরাজ সেই ছন্দে আর নেই। শামিরও বয়স হচ্ছে, যা টেস্টের জন্য তাঁকে আসতে আসতে অনুপযোগী করে দিচ্ছে। প্রসিধ কৃষ্ণা চোটপ্রবণ এবং উমেশ যাদবকে তো নির্বাচকরা নিজেদের পছন্দের তালিকাতেও রাখে না। তাই পেস অ্যাটাকে অস্ট্রেলিয়াতে হর্ষিত রানাকে যোগ করা হয়েছিল, যদিও ক্যাঙ্গারুদের ডেরায় তিনি অসফল।
রোহিত আগেই বোলারদের নিয়ে আশঙ্কা করেন
রোহিত শর্মা অবশ্য আগেই অনুমান করেছিলেন, এমন পরিস্থিতি আসতে পারে। তাই নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে টেস্টে সিরিজের আগেই তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের জরুরি আত্মসমীক্ষা এবং দ্রুত বোলিং সমস্যা সমাধানের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা এমন বেঞ্চ স্ট্রেন্থ তৈরি করতে চাই যেখানে আগামী দিনে যদি কারও চোট লেগে যায় তাহলে আমাদের যাতে উদ্বিগ্ন হতে না হয়। কয়েকজন ব্যক্তির উপর খুব বেশি নির্ভরশীলও হতে চাই না। আমরা ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে চাই এবং একই সময়ে সঠিক খেলোয়াড়দের তুলে আনতে হবে। আমরা এমন খেলোয়াড় তৈরি করতে চাই যেখানে অন্য কারোর চোট থাকলেও সেই শূন্যস্থান ভরাট করা যায়। আমাদের ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে অনেক বিকল্প আছে। বোলারদের নিয়েও একই জিনিস তৈরি করতে চাই’।
আইপিএল খেলে জাতীয় দলে সুযোগ মায়াঙ্ক-নীতীশদের
আইপিএল এখন ভারতীয় ক্রিকেটের প্রধান ফিডার সিস্টেম বা প্রোডাক্ট দেখে নেওয়ার মঞ্চ বলা যেতে পারে। বুমরাহ-সিরাজের মতো বাকি প্রায় সবার ক্রিকেটার, সে বোলার হোক বা ব্যাটার, এই আইপিএলেই লাইমলাইটে নিয়ে আসে। হর্ষিত রানা বা নীতীশ রেড্ডিরা রঞ্জি খেলে নয় বরং আইপিএল খেলেই সুযোগ পেয়েছেন জাতীয় দলে। লখনউ সুপার জায়ান্টের হয়ে দ্রুত গতিতে বোলিং করে মায়াঙ্ক যাদবও নজর কেড়েছিলেন আইপিএলে, যার জেরে তাঁকে সুযোগ দেওয়া হয় জাতীয় টি২০ দলেও।
LSGর তিন পেসারেরই চোট
তবে বেশিরভাগ ভারতীয় তরুণ ফাস্ট বোলারের চোটের কবলে পড়ার বিষয়টি যেন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইপিএলে টানা দুই মরশুমে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ফিট হতে লড়াই করছেন মায়াঙ্ক যাদব, কারণ বেশি গতি রাখতে গিয়ে তিনি নিজের ওপর যে ধকল দিচ্ছেন তা মেনে নিচ্ছে না শরীর। গত বছর তলপেটের ব্যথার কারণে পাঁচ ম্যাচ মাঠের বাইরে ছিলেন তিনি। এরপর ফিরলেও মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে আইপিএলে মাত্র ৩.১ ওভার বোলিং করে ফের মাঠের বাইরে চলে যান তিনি। এদিকে আরও দুই পেসার মহসিন খান এবং আবেশ খানের ফিটনেস ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের জন্যেও অপেক্ষা করে রয়েছে লখনউ সুপার জায়ান্টস। ফলে তিন ভারতীয় পেসারই চোট পাওয়ায় LSGর কপালে এবারে যে কী অপেক্ষা করছে, তা ক্রিকেট দেবতাই একমাত্র জানেন।
মহসিন-আবেশও দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে
ডিসেম্বর চণ্ডীগড়ের বিরুদ্ধে বিজয় হাজারে ম্যাচের পর থেকে কোনও প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে বোলিং করেননি উত্তরপ্রদেশের মহসিন। আভেশের চোট গুরুতর বলে জানা গেছে এবং হাঁটুর কার্টিলেজ সমস্যার জন্য তিনি বর্তমানে এনসিএতে রিহ্যাবে রয়েছেন। ভারতের ভবিষ্যতের পেস বোলারদের ভালো রাখার জন্য এনসিএর গুরুত্ব তাৎপর্যপূর্ণ। তবে তাদের চোট সিনিয়র দলের আগামীর পরিকল্পনাকে থামিয়ে দিয়েছে। কারণ বোলারদের থেকে বিসিসিআই ন্যূনতম চাইবে যাতে তাঁরা পুরো মরশুম খেলার জন্য ফিট থাকে। এমনিতে বুমরাহকে নিয়ে ওয়ার্কলোডের কথা উঠলেও তাঁর বয়স ৩০ ছুঁয়ে ফেলেছে। তবে তরুণ মায়াঙ্ক, মোহসিন, আবেশরাও যদি এভাবে ভুগতে থাকেন তাহলে ভারতের পেস বোলিংয়ের ভবিষ্যৎ যে খুব একটা ভালো হাতে নেই, সেকথাও মেনে নিতে হবে।
উমরানের টানা চোট, ছিটকে গেলেন আইপিএল থেকে
রবিবার চোটের কারণে আইপিএল ২০২৫ থেকে ছিটকে গেলেন কেকেআরের উমরাম মালিক, তাঁর পরিবর্ত হিসেবে বাঁহাতি পেসার চেতন সাকারিয়াকে দলে নিল নাইটরা। নিজের গতি দিয়ে আইপিএলে তাঁর কেরিয়ারের শুরুর দিকে অনেক নাম করেছিলেন মালিক, তবে চোটে চোটে জর্জরিত হয়ে তিনি দ্রুত লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছেন। তিনি সানরাইজার্স হায়দরাবাদে ছিলেন, ১৫৭ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতিবেগে বোলিং করে নজর কেড়েছিলেন। ভারতের জার্সিতে অভিষেকও হয়েছিল, তবে ওই গতির দিকে নজর দিতে গিয়েই চোট পেয়ে আপাতত মাঠের বাইরে রয়েছেন তিনি। এবারে কেকেআর তাকে ৭৫ লক্ষ টাকায় দলে নেয়। কিন্তু তিনিও খেলতে পারবেন না। তাই পেস বোলিং নিয়ে ভারতীয় নির্বাচকদের চিন্তা কিন্তু কমছে না ইংল্যান্ড সিরিজের আগে।