IPL 2025: সলিড ব্যাটিং, স্পিনের কেমিস্ট্রি, ধোনির উপস্থিতি CSK-এর শক্তি হলে, দলের দুর্বলতাগুলোও বড় প্রকট

Strengths and major Weakness of CSK: পাঁচ বার ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতেছে চেন্নাই সুপার কিংস। ২০২৫ আইপিএলে দ্বিতীয় মরশুমে দলকে নেতৃত্ব দেবেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়। তাঁর নেতৃত্বে সিএসকে ষষ্ঠ বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে নামবে। তবে তার আগে জেনে নিন সিএসকে-র শক্তি এবং দুর্বলতাগুলো!

আইপিএলে (IPL) পাঁচটি শিরোপা জয়ের রেকর্ড রয়েছে শুধুমাত্র মুম্বই ইন্ডিয়ান্স (MI) এবং চেন্নাই সুপার কিংসের (CSK)। তবে গত মরশুমে সিএসকে নতুন অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের নেতৃত্বে প্লে-অফে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হয়েছিল। তবে ২০২৫ আইপিএলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া। ২২ মার্চ থেকে এই বছরের আইপিএল শুরু হতে চলেছে। আর সিএসকে ২৩ মার্চ এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মুখোমুখি হবে। আর টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ থেকেই সকলের চোখ মহেন্দ্র সিং ধোনির দিকে থাকবে।

সিএসকে-এর সাফল্যের আসল কারিগর নিঃসন্দেহে এমএস ধোনি। তাঁর অধিনায়কত্বেই চেন্নাইয়ের দল পাঁচটি শিরোপা জিতেছে। এছাড়া দশ বার ফাইনালে উঠেছে এবং মোট ১২ বার প্লে অফে উঠেছে। ২০০৮ সালে আইপিএসের উদ্বোধনী মরশুমে রানার্স-আপ হওয়ার পর, ২০০৯ সালে সিএসকে সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয়। পরের দুই বছর, ২০১০ এবং ২০১১ সালে তারা পরপর দু'বার চ্যাম্পিয়ন হয়।

২০১২ এবং ২০১৩ সালে সিএসকে ফাইনালে পৌঁছেছিল। কিন্তু তারা যথাক্রমে কলকাতা নাইট রাইডার্স এবং মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের কাছে হেরে যায়। ২০১৪ সালে কোয়ালিফায়ার টু-এ পঞ্জাব কিংসের (তখন কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব) কাছে হেরেছিল। ২০১৫ সালে সিএসকে-র পুনরুত্থান হয়েছিল। তারা আবার ফাইনালে পৌঁছেছিল। তবে সেবারও ফাইনালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের কাছে হেরেছিল।

চেন্নাই সুপার কিংসের একটি কলঙ্কিত অধ্যায়ও রয়েছে। ২০১৩ সালের আইপিএল স্পট-ফিক্সিং এবং বেটিং কেলেঙ্কারির কারণে দুই বছরের জন্য, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে আইপিএল থেকে তারা নির্বাসিত হয়েছিল। তবে এই নির্বাসন সিএসকে-এর সাফল্যের রেকর্ড থাবা বসাতে পারেনি। তারা আবার আইপিএলে প্রত্যাবর্তন করেই, ২০১৮ সালে শিরোপা জেতে। ২১৯ সালে একটি রোমাঞ্চকর ফাইনালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের কাছে মাত্র এক রানে হেরে যায়। ২০২০ সালে অবশ্য লিগ পর্ব থেকেই তারা ছিটকে যায়। ২০২১ সালে তারা তাদের চতুর্থ শিরোপা জেতে। ২০২২ মরশুমে ফের বিপত্তি ঘটে। এবারএ তারা প্লে অফে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়। তবে ২০২৩ সালে অসাধারণ প্রত্যাবর্তন করে চেন্নাইয়ের দল তাদের পঞ্চম শিরোপা জেতে।

২০২৪ সালে ধোনির পরামর্শেই রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের হাতে অধিনায়কত্ব হস্তান্তর করে সিএসকে। দুর্ভাগ্যবশত, এই পরিবর্তন কাঙ্খিত ফলাফল দেয়নি, কারণ সিএসকে গতবারও লিগপর্ব থেরেই ছিটকে গিয়েছিল। তারা লিগ পর্বের ম্যাচে সাতটিতে জিতেছিল, সাতটি ম্যাচ হেরেছিল। ১৪ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে শেষ করেছিল চেন্নাই সুপার কিংস।

আইপিএল ২০২৫-এ র আগেও একটি বড় প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে- সিএসকে কি তাদের সাজানো ক্যাবিনেটে ষষ্ঠ ট্রফি যোগ করতে পারে?

চেন্নাই সুপার কিংসের শক্তি-

সলিড ব্যাটিং: সিএসকে-এর সবচেয়ে বড় শক্তি হল এর শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ। এর মধ্যে রয়েছেন অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড়, ডেভন কনওয়ে, রাচিন রবীন্দ্র, শিবম দুবে এবং ধোনি নিজে। গায়কোয়াড় এবং কনওয়ে গত কয়েক মরশুম ধরে টপ অর্ডারে দলের বড় ভরসা হয়ে উঠেছে। ইন-ফর্মে থাকা রচিন রবীন্দ্র নিঃসন্দেহে আক্রমনাত্মক স্ট্রোকপ্লে খেলে ব্যাটিং লাইনআপকে আরও শক্তিশালী এবং গতিশীল করবেন। প্রয়োজনে ইনিংসের রং বদলে দিতে পারেন রাচিন। শিবম দুবে একজন আক্রমণাত্মক মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান, যিনি তাঁর পাওয়ার-হিটিং ক্ষমতা দিয়ে ইনিংসকে গতিশীল করতে সক্ষম। ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়েও ধোনি তাঁর ফিনিশিং ক্ষমতার সৌজন্যে গেম-চেঞ্জার হিসেবে রয়ে গিয়েছেন।

স্পিনের কেমিস্ট্রি: সিএসকে-এর আরও একটি শক্তি হল স্পিন বোলিং আক্রমণ, যার মধ্যে রয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং নুর আহমেদ। জাদেজা ও অশ্বিনের অভিজ্ঞতা দলের কাজে লাগবে। একই সময়ে, নুর আহমেদের রহস্যময় স্পিন সিএসকে-র জন্য এক্স-ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে।

ধোনির উপস্থিতি: মহেন্দ্র সিং ধোনি অধিনায়ক হিসেবে না থাকলেও, তাঁর উপস্থিতি দলের জন্য বড় প্রাপ্তি। কারণ অধিনায়ক না হয়েও তাঁর সিদ্ধান্ত মতোই মাঠে পুরো ম্যাচ খেলে ধোনি। মাঠে এবং মাঠের বাইরে সবটাই হয় ধোনির পরামর্শ মেনেই।

চেন্নাইয়ের দুর্বলতা-

জোরদার নয় পেস অ্যাটাক: সিএসকে-এর ফাস্ট বোলিং ইউনিটে মাথিশা পাথিরানা ছাড়া নির্ভরযোগ্য ফাস্ট বোলারের অভাব রয়েছে। সঠিক ইয়র্কার বোলিং করার ক্ষমতার কারণে পাথিরানা সিএসকে-এর জন্য একজন নির্ভরযোগ্য ফাস্ট বোলার। খলিল আহমেদ, মুকেশ চৌধুরী এবং কমলেশ নগরকোটি দলে থাকলেও, ডেথ ওভারে এখনও বিশেষ কিছু করতে পারেননি তিন জনই। অস্ট্রেলিয়ার নাথান এলিস এবং ইংল্যান্ডের জেমি ওভারটনকে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তবে দু'জনেই এখনও আইপিএলে নিজেদের প্রমাণ করতে পারেননি। পাথিরানার চোট হলে বড় সমস্যায় পড়বে চেন্নাই সুপার কিংস।

বুড়োদের ভিড়: আরও একটি বড় দুর্বলতা হল, ধোনি, জাদেজা এবং অশ্বিনের মতো সিনিয়র খেলোয়াড়দের বয়স বাড়ছে। দুই মাস ব্যাপী এই টুর্নামেন্টে ফিটনেস এবং ধারাবাহিকতা নিয়ে তিন জনকেই লড়াই করতে হতে পারে।

চেন্নাইয়ের অনুকূল পরিস্থিতি-

সিএসকে সব সময়ে নতুন প্রতিভাকে তুলে ধরে। রুতুরাজ গায়কোয়াড়, মাথিশা পাথিরানা, রাচিন রবীন্দ্র, স্যাম কারান, মুকেশ চৌধুরী, মহেশ থিকশানা, তুষার দেশপান্ডের মতো খেলোয়াড়রা এই তালিকায় রয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ চলে গিয়েছেন অন্য দলে। এই মরশুমেও দলটি কিছু নতুন প্রতিভাকে নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ দিতে পারে। কমলেশ নগরকোটি, আন্দ্রে সিদ্ধার্থ, আনশুল কাম্বোজ এবং শেখ রশিদের মতো খেলোয়াড়রা আসন্ন মরশুমে আরও সুযোগ পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আনশুল ও সিদ্ধার্থের দিকেই সবার নজর বেশি। এই দুই তরুণ ২০২৫ আইপিএলের আবিষ্কার হতে পারে।

চেন্নাইয়ের ভয়ের জায়গা-

সিএসকে-এর জন্য একটি বড় চাপ, সব সময়েই তাদের টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যানদের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা। গত মরশুমে, শিবম দুবে প্রাক্তন অধিনায়ক ধোনির সঙ্গে দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল, কিন্তু সেটা বাদ দিলে লোয়ার এবং মিড অর্ডারে ধারাবাহিকতার অভাব ছিল। টপ অর্ডার ব্যর্থ হলে সিএসকে এতে সমস্যায় পড়তে পারে। CSK-এর জন্য আরেকটি হুমকি হল তাদের ফাস্ট বোলিং বিভাগে গভীরতার অভাব। পাথিরানা ফিট না হলে দলের সমস্যা বাড়তে পারে।

সিএসকে-এর সেরা একাদশ: ডেভন কনওয়ে/রচিন রবীন্দ্র, রুতুরাজ গায়কোয়াড় (অধিনায়ক), রাহুল ত্রিপাঠি, দীপক হুডা/বিজয় শঙ্কর, শিবম দুবে, রবীন্দ্র জাদেজা, স্যাম কারান, এমএস ধোনি (উইকেটরক্ষক), আর অশ্বিন, নুর আহমেদ/নাথান এলিস, মাথিশা পাথিরানা, খালিল আহমেদ।

আইপিএল ২০২৫-এর জন্য সিএসকে-এর সম্পূর্ণ স্কোয়াড-

ডেভন কনওয়ে, রাচিন রবীন্দ্র, রুতুরাজ গায়কোয়াড় (অধিনায়ক), রাহুল ত্রিপাঠি, দীপক হুডা, বিজয় শঙ্কর, শিবম দুবে, রবীন্দ্র জাদেজা, স্যাম কারান, এমএস ধোনি (উইকেটরক্ষক), আর অশ্বিন, নুর আহমেদ, নাথান এলিস, মাথিশা পাথিরানা, খালিল আহমেদ, সি আন্দ্রে সিদ্ধার্থ, বংশ বেদী, শেখ রশিদ, রামকৃষ্ণ ঘোষ, শ্রেয়স গোপাল, আনশুল কাম্বোজ, গুর্জাপানীত সিং, মুকেশ চৌধুরী, কমলেশ নগরকোটি।