বিজয় হাজারে ট্রফিতে রেকর্ড-ব্রেকিং পারফরম্যান্সের মাধ্যমে নিজের রানের ক্ষুধার কথা বিশ্ব ক্রিকেটকে মনে করিয়ে দিলেন করুণ নায়ার। এমনকি সচিন তেন্ডুলকরও তার পারফরম্যান্সের প্রশংসা করেছিলেন। হিন্দুস্তান টাইসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে করুণ নায়ার বলেন, ‘এটা সত্যিই সন্তোষজনক এবং আমি নিজের ওপর গর্বিত। বিদর্ভ শেষ পর্যন্ত ট্রফি জিততে পারেনি, যদি ফাইনাল জিততাম তাহলে এই সাফল্যের ওপর বাড়তি আনন্দ যোগ করত। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে, আমি আমার ব্যাটিং নিয়ে খুব খুশি। আমি চাই এভাবেই চালিয়ে যেতে এবং প্রচুর রান সংগ্রহ করতে চাই।’
অভিষেক নায়ারের গড় ছিল আশ্চর্যজনকভাবে ৭৫২। কিন্তু কর্ণাটকের বিরুদ্ধে তার স্বপ্নের দৌড় শেষ হয়। যদিও তার দল শিরোপার কাছাকাছি গিয়েও ব্যর্থ হয়, তবুও ৮ ইনিংসে ৭৭৯ রান এবং ৩৮৯.৫০ গড় নিয়ে তিনি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ স্কোরারের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন। উত্তর প্রদেশের বিরুদ্ধে ১১২ রানে আউট হওয়ার আগে, করুণ নায়ার এক অনন্য লিস্ট-এ রেকর্ড গড়েছিলেন। দ্বিতীয়বার আউট হওয়ার আগেই ৫৪২ রান সংগ্রহ করেন। তিনি ৮ ইনিংসে ৫টি সেঞ্চুরি করেন এবং জম্মু-কাশ্মীর, চণ্ডীগড়, তামিলনাড়ু, উত্তর প্রদেশ ও রাজস্থান—কোনও দলই তার রানের ঝড় থেকে রেহাই পায়নি। তবে ব্যক্তিগত রেকর্ডের চেয়ে মূল লক্ষ্য ছিল প্রতিপক্ষ বোলারদের উপর আধিপত্য বিস্তার করা।
আরও পড়ুন… ২০টি উইকেট নেওয়ার জন্য যা দরকার সেটাই করব: স্পিন নির্ভর করে জয়ের কৌশলকে শান মাসুদের সমর্থন
এরপরে করুণ নায়ার বলেন, ‘খেলা এত দ্রুত আসছিল যে রেকর্ড নিয়ে ভাবার খুব বেশি সময় ছিল ন। কিন্তু যদি বলি যে এটি একবারও আমার মাথায় আসেনি, তবে মিথ্যে বলা হবে। অবশ্যই এসেছিল। যখনই সেঞ্চুরি করতাম, মনে হতো—‘ওহ আমার ঈশ্বর, এ কী ঘটছে!’ এটা অবিশ্বাস্য ছিল, প্রায় স্বপ্নের মতো। এমন কিছু যা আগে কখনও অনুভব করিনি, কিন্তু যা বারবার অনুভব করতে চাই।’
তবে নায়ারের সবচেয়ে পছন্দের ইনিংস ছিল রাজস্থানের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে করা শতরান, কারণ সেটি এসেছিল দীপক চাহার, খলিল আহমেদ, অনিকেত চৌধুরি এবং মানব সুথারের মতো শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে। প্রথম ম্যাচ থেকেই শক্তিশালী খেলা শুরু করেছিলেন করুণ নায়ার, কিন্তু একবার জ্বলে উঠে পরে নিভে যাওয়ার পরিবর্তে, ধারাবাহিকতা বজায় রাখা তার প্রধান লক্ষ্য ছিল।
করুণ নায়ার বলন, ‘যখন টুর্নামেন্ট ভালোভাবে শুরু হয়, তখন সেই ফর্ম ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রতিদিন নিজেকে বলতাম—এটা একটা নতুন দিন, এবং আমাকে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।’ একসময় টেস্ট ক্রিকেটে তিনশো রানের ইনিংস খেলে আলোচনার শীর্ষে থাকা করুণ নায়ার এখন নিঃশব্দে নিজের কেরিয়ার নতুনভাবে গড়ে তুলছেন, ধারাবাহিকভাবে প্রচুর রান করছেন। তিনি ইংল্যান্ডের গ্রীষ্মকালটা নর্দাম্পটনশায়ারের হয়ে খেলেছিলেন। যেখানে ১১ ইনিংসে ৪৮৭ রান করেছিলেন, যার মধ্যে একটি অপরাজিত ২০২ রানও ছিল।তবে নির্বাচকদের নজরে আসার জন্য তার অসাধারণ পারফরম্যান্স সত্ত্বেও, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ভারতীয় স্কোয়াডে জায়গা হয়নি করুণ নায়ারের।
আরও পড়ুন… IPL 2025: সোমবার কলকাতায় ঘোষণা করা হবে LSG-র নতুন অধিনায়কের নাম! সিংহাসনে বসতে চলেছেন ঋষভ পন্ত
তিনি বলেন, ‘ভারতের হয়ে খেলার সম্ভাবনা অবশ্যই মাথায় রাখতে হয়। যদি জাতীয় দলে খেলতে চাও, তাহলে স্বপ্ন দেখতে হবে। আমার মনেও এই স্বপ্ন রয়েছে, কিন্তু এটি আমাকে আরও বেশি অনুপ্রাণিত করে।’ নায়ার নিজের পারফরম্যান্সে খুশি হলেও, এখানেই থেমে যেতে রাজি নন। বিজয় হাজারে ট্রফি শেষ, কিন্তু এখন সামনে অপেক্ষা করছে রঞ্জি ট্রফির চ্যালেঞ্জ। আইপিএলের পরবর্তী মরশুমেও তিনি নতুন দলে খেলবেন। দিল্লি ক্যাপিটালস, যেখানে তিনি গত নিলামে অবিক্রিত থাকার পর এবার সুযোগ পেয়েছেন।
করুণ নায়ার বলেন, ‘এই মানসিকতা আসে প্রতিদিন নিজেকে আরও ভালো করার ক্ষুধা থেকে। অতীতের সাফল্যে সন্তুষ্ট না থেকে, ভবিষ্যতে আরও ভালো করার লক্ষ্যেই এগিয়ে যেতে চাই।’ ২০২২ সালে করুণ নায়ার ক্রিকেটকে আরেকটি সুযোগ চেয়েছিলেন। আর ২০২৫ সালে, ক্রিকেট তাকে সেই সুযোগ ফিরিয়ে দিচ্ছে। এবং নায়ার সেই সুযোগকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে প্রস্তুত।