কিছু খেলোয়াড় রয়েছেন, যাঁদের নিয়ে খুব বেশি চর্চা হয়। আলোচনার কেন্দ্র থাকেন তাঁরা। আবার এমন কিছু প্লেয়ার রয়েছেন, যাঁরা মুখ বন্ধ করে নিজেদের কাজটা করে যান। তবে আলোচনার কেন্দ্রে ঢুকতে পারেন না। শ্রেয়স আইয়ার এই দ্বিতীয় শ্রেণীর একজন খেলোয়াড়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-এ বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের মতো বড় নামগুলি নিয়ে যেমন চর্চা হয়েছে, শ্রেয়সকে নিয়ে তাঁর এক ভাগও আলোচনা হয়নি। তবে ব্যাট হাতে কিন্তু নিজেকে প্রমাণ করেই চলেছেন শ্রেয়স। তিনি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। রোহিত শর্মা তাঁকে ‘সাইলেন্ট হিরো’র তকমা দিয়েছেন।
গত এক বছর শ্রেয়স যেন রোলার-কোস্টারের উপর বসেছিলেন। অনেক ঘটনা ঘটে গিয়েছে তাঁর জীবনে। কেন্দ্রীয় চুক্তি হারানো থেকে শুরু করে ভারতীয় ক্রিকেটে কোণঠাঁসা হয়ে পড়া, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো, কলকাতা নাইট রাইডার্সকে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন করা, এর পর ভারতীয় দলে ধীরে ধীরে নিজের আলাদা জায়গা তৈরি করা, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫-এ ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ রান করে নজর কাড়া- এই সফর শ্রেয়সের জন্য কিন্তু সহজ ছিল না। টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় একটি সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে শ্রেয়স বলছেন, ‘সত্যি বলতে এটা একটা যাত্রা এবং আমি আমার জীবনের এই পর্যায়ে অনেক কিছু শিখেছি।’
আরও পড়ুন: জ্যাকেটটাও ঠিক করে পরতে পারিস না… ছড়ালেন কুলদীপ, কটমট দৃষ্টিতে ভর্ৎসনা রোহিতের- ভিডিয়ো
তারকা ব্যাটার সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘২০২৩ সালের ওডিআই বিশ্বকাপ খেলার পর যখন কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বের হয়ে যাই, তখন মূল্যায়ন করেছি, আমি কোথায় ভুল করেছি, আমার কী করা উচিত, আমার ফিটনেসের উপর আমার কতটা ফোকাস করা দরকার। আমি নিজেকে এই সমস্ত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছি এবং একটি রুটিন তৈরি করেছি এবং আমার প্রশিক্ষণ শুরু করি। পাশাপাশি আমি যে দক্ষতাগুলি যোগ করেছি, তার উপর ফোকাস করতে শুরু করি। একবার আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে একটানা ম্যাচ খেলেছিলাম, তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, ফিটনেস আমার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সামগ্রিক ভাবে আমি নিজেকে নিয়ে অত্যন্ত খুশি... যেভাবে আমি এর থেকে বেরিয়ে এসেছি, যেভাবে আমি পরিস্থিতি পরিচালনা করেছি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে আমি নিজেকে বিশ্বাস করেছি।’
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর রোহিত আলাদা করে শ্রেয়সের প্রশংসা করেছেন, ‘সাইলেন্ট হিরো’ বলেছেন তাঁকে। অধিনায়কের প্রশংসায় শ্রেয়স খুশি হলেও, কোথাও একটা অভিমানও রয়েছে। বলছিলেন, তিনি সব সময়ে নিজের সাফল্যের স্বীকৃতি পাননি। তাঁর দাবি, ‘আমি যখন স্বীকৃতির কথা বলি, তখন সেটা সম্মান পাওয়ার কথাই বলে থাকি। আমি মাঠে যা কিছু চেষ্টা করি বা করছি, তার জন্য এটি (রোহিতের প্রশংসা) ছিল সম্মানের বিষয়। আমি মনে করি, কখনও কখনও এটি অলক্ষিত থেকে যায়, কিন্তু আমি যে প্রচেষ্টা চালিয়েছি, তাতে আমি সন্তুষ্ট। কারণ এই উইকেটে ব্যাট করা সহজ ছিল না। বিশেষ করে যখন বোলাররা এত ভালো এবং টাইট বোলিং করছিলেন, তখন সিঙ্গেল নেওয়া সহজ ছিল না। আমার নিজের উপর বিশ্বাস ছিল যে, একবার কোনও ভাবে দু'টি ছক্কা হাঁকাতে পারলে, আমাদের দিকে ম্যাচ ঘুরিয়ে নিতে পারব। ভাগ্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমি ছক্কা মারতে সক্ষম হই।’
আরও পড়ুন: Champions Trophy জয়ের এক দিন পর অবসর নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বড় বার্তা জাদেজার
ওয়ানডেতে চার নম্বরে ব্যাট করাটা খুবই কঠিন কাজ। টপ অর্ডার এবং লোয়ার অর্ডারের যোগসূত্র হল এই চার নম্বর পজিশন। কিন্তু শ্রেয়স চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চারে ব্যাট করতে নেমে সাফল্য পেয়েছেন। এবং চুপচাপ এসে নিজের কাজটি করে গিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে অবশ্য শ্রেয়সের দাবি, ‘আমি চুপচাপ আসি না। আমি আমার পূর্ণ হৃদয় নিয়ে আসি এবং আমার মনে অনেক কিছু চলে। তবে নিজের কাজটি ঠিক মতো করার জন্য আমার নিজের উপর অনেক আত্মবিশ্বাস আছে। যে কোনও পরিস্থিতিতে ব্যাট করতে পাঠালে, আমি নিজের কাজটা ঠিক করে আসব। এই মানসিকতা আমার মধ্যে কাজ করে। ব্যর্থতা এবং প্রত্যাখ্যানের পরেই আমার মধ্যে এই আত্মবিশ্বাস এসেছে। প্রত্যাখ্যান এবং ব্যর্থতাই হল জীবনের সেরা শিক্ষক। কঠিন সময়ে জানা যায়, শুধুমাত্র নিজেকে নিজেই তুলে ধরতে হয়, ঘুরে দাঁড়াতে হয়, অন্য কেউ সেটা করে দিতে পারে না।’
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শিরোপা জয় নিয়ে শ্রেয়স বলেছেন, ‘ট্রফি জয়ের চেয়ে মধুর আর কিছু নেই। আপনার ব্যক্তিগত স্কোর এবং বাকি সব কিছুই গৌণ। গুরুত্বপূর্ণ হল, দলের জয়। ভারতের মানুষ খুব খুশি। বহু মানুষ মাঠ থেকে এবং সব জায়গা থেকেই আমাদের সমর্থন করেছে এবং তাদের জন্য জিতে খুব ভালো লাগছে।’