পরিবর্তে হিসেবে দলে ঢোকেন। আর পরিবর্ত হিসেবে ভারতের বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরু, পুণে এবং ওয়াংখেড় টেস্টে উইল ইয়ং যা করেছেন, তাতে নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে চিরকালের জন্য ঠাঁই পেয়ে গিয়েছেন কিউয়ি ব্যাটার। আর তাঁর সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন কলকাতার এক বাঙালি। যিনি ২১ বছর ধরে নিউজিল্যান্ডে আছেন। ইয়ংয়ের সঙ্গে সম্পর্কও প্রায় ২০ বছর। খেলোয়াড় হিসেবে তো বটেই, ব্যক্তি ইয়ংকেও জীবনে পথ দেখিয়েছেন। যে কথাটা স্বীকার করতে একেবারেই কুণ্ঠা করেন ইয়ং।
১১ বছর আগে বেঙ্গালুরুতে এসেছিলেন ইয়ং
সেই বাঙালি দেবু বণিকের হাত ধরেই ইয়ং ২০১৩ সালে বেঙ্গালুরুতে এসেছিলেন। সংবাদমাধ্যম ক্রিকবাজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেই বছর বেঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তিন সপ্তাহ কঠোর ট্রেনিং করেছিলেন ট্রেনিং। সামলেছিলেন স্পিন।
‘সলিড’ ডিফেন্সিভ টেকনিক ইয়ংয়ের
যে অভিজ্ঞতা নিশ্চিতভাবে এবারের ভারত সফর কাজে লেগেছে ইয়ংয়ের। তিনটি টেস্টেই গুরুত্বপূর্ণ রান করেছেন। বেঙ্গালুরুতে স্পিনের অত ব্যাপার না থাকলেও পুণে এবং ওয়াংখেড়েতে স্পিনের বিরুদ্ধে তাঁকে বেশ ‘সলিড’ দেখিয়েছে। টি-টোয়েন্টির যুগে যেখানে ব্যাটারদের ডিফেন্সিভ খেলার মানসিকতা কমে আসছে বলে যেখানে অনুযোগ করেন ভারতের হেড কোচ গৌতম গম্ভীর, সেখানে তাঁর চোখের সামনেই ইয়ংয়ের ডিফেন্স বেশ মজবুত মনে হয়েছে।
তিনে নেমে রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজাদের সামলেছেন ইয়ং। নিউজিল্যান্ড প্রথম উইকেট হারানোর পরে ভারতীয় বোলাররা যে ঝটপট উইকেট তুলে নেবেন, সেটার দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন প্রতিটি ইনিংসেই। বেঙ্গালুরুতে ৩৩ রান এবং অপরাজিত ৪৮ রান করেন। পুণেতে করেন ১৮ রান এবং ২৩ রান। ওয়াংখেড়েতে প্রথম ইনিংসে ৭১ রান করেন। আর দ্বিতীয় ইনিংসে গুরুত্বপূর্ণ ৫১ রান করেছেন।
শুধু ক্রিকেটার নন, মানুষ ইয়ংয়েরও মেন্টর দেবু বণিক
যদিও ইয়ংয়ের মেন্টর দেবুর মতে, ক্রিকেটের স্কোরের থেকে ভালো মানুষ হওয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর সেটার ক্ষেত্রেও দেবুর অনেকটা অবদান আছে। ক্রিকবাজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১১ বছর থেকে ইয়ংয়ের মেন্টর হলেন দেবু। স্কুলের পরে রাত পর্যন্ত অনুশীলন করতেন ইয়ং। তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যেতেন দেবু। সেই দেবুই ইয়ংকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে নিজের এলাকা তারানাকি থেকে ভবিষ্যতের ক্রিকেটার তুলে আনার জন্য তাঁঁকেও কিছু করতে হবে।
ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ইয়ং জানিয়েছেন যে ১১-১২ বছর আগে যখন সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টের থেকে নিজের প্রথম চুক্তিপত্র পেয়েছিলেন, সেইসব দেবু পরামর্শ দিয়েছিলেন যে তাঁর এলাকার অন্যান্য খেলোয়াড়দের সাহায্য করতে কিছু পরিমাণ অর্থ যেন আলাদা করে রাখেন। সেইমতো টাকা জমিয়ে এসেছেন। যা পরবর্তীতে 'উইল ইয়ং ক্রিকেট ট্রাস্ট'-এ পরিণত হয়েছে। সেই ট্রাস্ট এখন তরুণ খেলোয়াড় এবং স্কুলের স্পোর্টস টিমকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। অর্থের অভাবে যাতে খেলাধুলোর স্বপ্ন ছেড়ে দিতে না হয়, সেটার চেষ্টা করে যাচ্ছে ‘উইল ইয়ং ক্রিকেট ট্রাস্ট’।
আরও পড়ুন: Abhishek Porel: ভোররাতে উঠে ভারী ব্যাগ নিয়ে বেরোতাম…IPL-এ রিটেন হয়ে অতীত হাতড়ালেন অভিষেক পোড়েল
তারাও হয়ত স্বপ্ন দেখবে যে ভারতে এসে ভারতকে টেস্ট সিরিজ হারাব, বিশ্বকাপ জিতব। ইয়ং যেমন রোহিত শর্মাদের হারিয়ে দিয়েছেন, ১২ বছর পরে ভারতকে সিরিজ হারিয়ে দিয়েছেন, সেরকমই কোনও স্বপ্ন সত্যি সফল করবে তারানাকির খুদেরা।