খুব তাড়াতাড়ি ভারতীয় ক্রিকেট আইপিএল মোডে প্রবেশ করবে, এবং বেশিরভাগ আলোচনাই ঘুরবে দাম ও পারফরম্যান্সকে তুলনা করে। যিনি নিশ্চিতভাবে এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবেন, তিনি হলেন ঋষভ পন্ত। আসলে তিনি হলেন এখনও পর্যন্ত আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়, লখনউ সুপার জায়ান্টস (এলএসজি) তাকে মেগা নিলামে ২৭ কোটি টাকায় কিনেছে।
মজার বিষয় হল, পন্ত এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি খেলোয়াড় শ্রেয়স আইয়ার (২৬.৭৫ কোটি টাকা) দুজনেই আইপিএল নিলামের দাম পেলেও, এই মুহূর্তে ভারতীয় দলে তাদের জায়গা খুব একটা নিশ্চিত নয়। আসলে আইপিএল-এর অর্থ তাদের আন্তর্জাতিক কেরিয়ার নির্ধারণ করে না। আইয়ার, গত বছর কলকাতা নাইট রাইডার্সকে আইপিএল ট্রফি এনে দেওয়ার পরও ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ পাচ্ছেন না। আর পন্ত এই মুহূর্তে ওয়ানডে ফরম্যাটে দ্বিতীয় পছন্দের উইকেটরক্ষক। টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা পাওয়ার জন্যও কঠিন প্রতিযোগিতায় রয়েছে।
পন্ত সবসময়ই ভারতীয় ক্রিকেটের ‘এক্স-ফ্যাক্টর’ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু তার সীমিত ওভারের কেরিয়ার এখনও সেভাবে ছন্দ পায়নি। সাম্প্রতিক আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কেএল রাহুল ছিলেন প্রথম পছন্দের উইকেটরক্ষক। অন্যদিকে, সঞ্জু স্যামসন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছেন। আর পন্ত কাটিয়েছেন এক কঠিন টেস্ট মরশুম।
জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক অজিত আগারকর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, পন্তই প্রথম পছন্দের উইকেটরক্ষক। কিন্তু প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর বলেছেন, পন্তকে তার সুযোগের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে, চলতি আইপিএল পন্তের কেরিয়ারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজির অধিনায়ক হিসেবে তার সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ ও চাপ থাকবে। ভারতের প্রাক্তন নির্বাচক দেবাঙ্গ গান্ধী মনে করেন, পন্তের উচিত সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় হওয়ার বিষয়টি ভুলে যাওয়া। তিনি বলেন, ‘যদি দিল্লি ক্যাপিটালস তাকে ধরে রাখত, তাহলে সে সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় হত না। এই আইপিএলে তার উচিত মাথা নীচু করে কঠোর পরিশ্রম করা এবং প্রচুর রান করার চেষ্টা করা।’
আরও পড়ুন … The Hundred 2025 Draft: কেন কোনও পাকিস্তানি খেলোয়াড় দল পেলেন না? সামনে এল একাধিক কারণ
ঋষভ পন্ত নিজেও বলেছেন, তার মূল লক্ষ্য ভারতীয় দলে খেলা এবং তিনি আইপিএলকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যম হিসেবে দেখেন না। পন্ত বলেন, ‘আমি কখনও ভাবিনি যে আমি আইপিএল খেলব। আজকাল সকলেই আইপিএলের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, যদি আপনার লক্ষ্য হয় দেশের হয়ে খেলা, তাহলে বাকি সবকিছু আপনা-আপনি ঠিক হয়ে যাবে।’
প্রাক্তন ভারতীয় উইকেটরক্ষক দীপ দাসগুপ্ত বলেন, ‘ভারতের সাদা বলের ক্রিকেটে এখনও পরিস্থিতি অনিশ্চিত। রাহুল তার জায়গা পাকা করেছে ওয়ানডে দলে, কিন্তু পন্তও খুব বেশি পিছিয়ে নেই, আমি যা অনুশীলনে দেখেছি তা থেকে বলছি। রাহুলকে কৃতিত্ব দিতে হবে, কারণ সে এমন একজন খেলোয়াড়ের সামনে এগিয়ে থাকতে পেরেছে, যার প্রতিভা বিশাল।’
দেবাঙ্গ গান্ধী বলেন, ‘গম্ভীরের ভালো দিক হল, তিনি খেলোয়াড়দের যথেষ্ট সুযোগ দিতে ভালোবাসেন এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চান। পন্ত যখন চোটে ছিলেন, তখন রাহুল ভালো খেলেছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, গম্ভীর পন্তকে পর্যাপ্ত সুযোগ না দিয়ে ছেড়ে দেবেন না।’
আরও পড়ুন … এটা যেন একটা জঙ্গল… CT 2025-তে পাকিস্তানের ব্যর্থতার পরে প্রাক্তন পাক কোচের গলায় PCB-র কড়া সমালোচনা
অনেকে মনে করেন, পন্তের সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অনিয়মিত পারফরম্যান্সের মূল কারণ তার ভূমিকা সম্পর্কে অস্পষ্টতা। ২০২২ সালে, ভয়াবহ দুর্ঘটনার আগে, ভারত তাকে ওয়ানডেতে ৪ নম্বরে খেলিয়েছিল। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটি সিরিজে তিনি অপরাজিত সেঞ্চুরি করে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন। তারপর প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড় তাকে ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরপরই ওপেনার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন, আবার ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাকে ৩ নম্বরে খেলিয়েছিলেন।
আগামীতে, ২০২৬ সালের শুরুতেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০২৭ সালের শেষ দিকে ওয়ানডে বিশ্বকাপ রয়েছে। গান্ধীর মতে, নির্বাচকরা মনে করেন, পন্ত টেস্ট ক্রিকেটের জন্য অপরিহার্য। তাই সীমিত ওভারের ফরম্যাটে তাকে বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ দেওয়া হয় না, যেন তাকে সংরক্ষণ করা যায়। তিনি বলেন, ‘সম্ভবত এই বছর পন্তকে ওয়ানডের চেয়ে টি-টোয়েন্টিতে বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ দেওয়া উচিত।’
আরও পড়ুন … AFC Challenge League 2025: ইস্টবেঙ্গলের লোগো বিতর্ক! এএফসি-তে ‘SC East Bengal’
গান্ধীর মতে, পন্তের শক্তি হল দীর্ঘ সময় ব্যাটিং করা এবং সেটিই তার লক্ষ্য হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘ওর উচিত ওপেন করা এবং নিজেকে ম্যাচে প্রভাব ফেলার জন্য বেশি সময় দেওয়া। আমরা যখন তাকে ১৯ বছর বয়সে দলে নিয়েছিলাম, তখনই স্পষ্ট ছিল যে সে দ্রুতগতির বোলিংয়ের বিরুদ্ধে স্বচ্ছন্দ এবং স্পিনারদের বিরুদ্ধে খুব দ্রুতগতিতে রান করতে পারেন। এখন তার উচিত সেটাকে কাজে লাগানো।’
দীপ দাসগুপ্ত মনে করেন, পন্তের উচিত দ্রুত ‘ফিনিশার’ তকমা সরিয়ে ফেলা। তিনি বলেন, ‘পৃথিবী তাঁকে ৫ বা ৬ নম্বরে ব্যাটসম্যান হিসেবে চেনে। কিন্তু ওকে প্রমাণ করতে হবে যে সে শীর্ষ সারির মানসম্পন্ন ব্যাটসম্যানও। এই বছর এলএসজির হয়ে তার উচিত ৩ নম্বরের নীচে না নামা।’