ওয়াংখেড়েতে ইতিহাস লিখে ফেলল কলকাতা নাইট রাইডার্স। ১২ বছর পর ফের ওয়াংখেড়েতে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে হারাল কেকেআর। ২০১২ আইপিএলে এক বারই ওয়াংখেড়েতে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে সাফল্য পেয়েছিল নাইটরা। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার তারা আরব সাগরের পারের স্টেডিয়ামে মুম্বইকে হারানোর স্বাদ পেল।
এদিন দুই দলের বোলারদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখলেন ক্রিকেট প্রেমীরা। আইপিএল যেখানে ব্যাটিং সর্বস্ব টুর্নামেন্ট হয়ে উঠেছে, সেখানে শুক্রবার মুম্বই ইন্ডিয়ান্স বনাম কলকাতা নাইট রাইডার্স ম্যাচে বোলারদের জাদু দেখা গেল। তাদের আগ্রাসনেই ম্যাচের ভাগ্যে অদল-বদল ঘটল।
এদিন কেকেআর-এর ব্যাটিং লাইনআপকে প্রথমে মুম্বই বোলাররা চাপে ফেলে দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে পালটা চাপ তৈরির খেলায় নামেন কেকেআর-এর বোলাররাও। শেষ পর্যন্ত ১৯তম ওভারে তিন উইকেট তুলে নিয়ে নাইট রাইডার্সকে কাঙ্খিত জয় এনে দেন মিচেল স্টার্ক।
আরও পড়ুন: CSK ছাড়ার আগে ধোনির থেকে বিশেষ উপহার পেলেন মুস্তাফিজ, লিখলেন আবেগপ্রবণ বার্তা
ওয়াংখেড়েতে টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মুম্বই অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া। ম্যাচের শুরু থেকেই আগুনে মেজাজে ছিলেন মুম্বই বোলাররা। শুরুটা করেছিলেন নুয়ান থুসারা। সমাপ্তি টানেন জসপ্রীত বুমরাহ। মিডল অর্ডারে নাইটদের আবার ঝাঁকুনি দেন হার্দিক পান্ডিয়াও। একমাত্র বেঙ্কটেশ আইয়ার এবং মণিশ পাণ্ডে ছাড়া কেকেআর-এর কেউই এদিন ব্যাট হাতে দাগ কাটতে পারেননি।
নাইট রাইডার্স প্রথম ওভারেই ফিল সল্টকে (৩ বলে ৫ রান) হারিয়ে চাপে পড়ে যায়। তৃতীয় ওভারে ৬ বলে ১৩ করে ফেরেন আংকৃষ রঘুবংশী। এই ওভারেই থুসারার পরবর্তী শিকার হন কেকেআর-এর অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ারও। তিনি মাত্র ৪ বলে ৬ রান করেন। থুসারার দাপটে তিন ওভারে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় নাইটরা।
এর পর পঞ্চম ওভারে সুনীল নারিনেরও উইকেট হারায় তারা। ৮ বলে ৮ করে হার্দিক পান্ডিয়ার বলে বোল্ড হন নারিন। শুরুতে কোনও জুটিই গড়ে তুলতে পারেনি কেকেআর। এর পর রিঙ্কু সিং-ও ইনিংসের সপ্তম ওভারে ৮ বলে মাত্র ৯ করে পিযূষ চাওলার বলে আউট হন। তবে ষষ্ঠ উইকেটে মণিশ পাণ্ডেকে সঙ্গে নিয়ে কেকেআর-এর হাল ধরার চেষ্টা করেন বেঙ্কটেশ আইয়ার। এই জুটি স্কোরবোর্ডে ৮৩ রান যোগ করে। তবে মণিশ ২টি করে চার এবং ছক্কার হাত ধরে ৩১ বলে ৪২ করে হার্দিকের বলে আউট হয়ে যান। কিন্তু হাল ধরে থাকেন বেঙ্কি।
বেঙ্কটেশ আইয়ার লড়াই চালালে কী হবে, কেউই তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করতে পারেননি। ১৭তম ওভারে মণিশ আউট হলে, নেমেছিলেন আন্দ্রে রাসেল। কিন্তু ওভারের শেষ বলে তিনি ২ বলে ৭ করে রানআউট হয়ে যান। হার্দিকই তাঁকে রানআউট করেন। তবে এই ওভার থেকে মোট ২০ রান আসে। রাসেল উইকেটে থাকলে হয়তো কেকেআর-এর স্কোরবোর্ডে আরও বেশি রান উঠতে পারত। কিন্তু সেটা আর সম্ভব হয়নি। ১৮তম ওভারে বুমরাহ বল করতে এসে আরও বড় ধাক্কা দেন। এই ওভারে মাত্র ২ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে নেন তিনি। চতুর্থ বলে রমনদীপ (৪ বলে ২) ক্যাচ আউট হন। মিচেল স্টার্ককে (২ বলে ০) দুরন্ত ইয়ার্কারে বোল্ড করেন বুমরাহ। শেষ ওভারেও বল করতে এসে পঞ্চম বলে বেঙ্কটেশ আইয়ারকেও বোল্ড করে দেন জসপ্রীত বুমরাহ। ৫২ বলে ৭০ করে আউট হন বেঙ্কি। তাঁর ইনিংস সাজানো ছিল ৩টি ছয়, ৬টি চারে। ১৯.৫ ওভারে ১৬৯ রানে অলআউট হয়ে যায় কেকেআর।
আরও পড়ুন: কিছু ভাবছিলামই না, শেষ ওভারের প্ল্যান নিয়ে অকপট ভুবি, হতভম্ব কার্তিক
মুম্বইয়ের হয়ে সবচেয়ে ভালো বোলিং করেছেন বুমরাহ। তিনি ৩.৫ ওভার বল করে ১৮ রান দিয়ে তিন উইকেট তুলে নিয়েছেন। নুয়ান থুসারা ৪ ওভার বল করে ৪২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন। হার্দিক এদিন পুরো চার ওভার বল করেন। তিনি ৪৪ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। ১ উইকেট নিয়েছেন পিযূষ চাওলা।
রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই কিছুটা নড়বড় করছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্সও। দ্বিতীয় ওভারেই ইশান কিষাণকে ফেরান মিচেল স্টার্ক। ৭ বলে ১৩ করে বোল্ড হন ইশান। এর পর তিনে ব্যাট করতে নেমে নমন ধীরও ১১ বলে ১১ করে বরুণ চক্রবর্তীর ডেলিভারিতে বোল্ড হন। রোহিত শর্মাও ১২ বলে ১১ করে আউট হন। সুনীল নারিনের বলে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। পাওয়ার প্লে-তেই ৪৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসে থাকে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স।
এর পর তিল বর্মা (৬ বলে ৪), নেহাল ওয়াধেরা (১১ বলে ৬), হার্দিক পান্ডিয়াাও (৩ বলো ১) ব্যর্থ হন। তিন তারকাকে ফেরান যথাক্রমে বরুণ, নারিন এবং রাসেল। চারে ব্যাট করতে নেমে সূর্যকুমার যাদব কিছুটা হাল ধরে রেখেছিলেন। কিন্তু তিনি হাফসেঞ্চুরি করার পরেই সাজঘরে ফেরেন। ৩৫ বলে ৫৬ করে রাসেলের ডেলিভারিতে ফিল সল্টের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের ফেরেন তিনি। তাঁর ইনিংসে ছিল ৬টি চার এবং ২টি ছক্কা। টিম ডেভিড এর পর কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ১৯তম ওভারে বল করতে এসে স্টার্ক একেবারে শেষ করে দেন মুম্বইয়ের ইনিংসে। এই ওভারের প্রথম বলে স্টার্ককে ছক্কা হাঁকিয়ে ডেভিড শুরুটা করেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় বলে শ্রেয়সের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। ২০ বলে ২৪ করেন টিম ডেভিড। এর পর তৃতীয় এবং পঞ্চম বলে যথাক্রমে পিযূষ চাওলা (১ বলে ০) এবং জেরাল্ট কোয়েটজিকে (৭ বলে ৮) আউট করে মুম্বইয়ের ইনিংসের ইতি টানেন স্টার্ক। ১৮.৫ ওভারে ১৪৫ রানে অলআউট হয়ে যায় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। ২৪ রানে ম্যাচ জিতে প্লে-অফের একেবারে কাছে পৌঁছে গেল কেকেআর।
কলকাতার হয়ে এদিন সফল বোলার নিঃসন্দেহে স্টার্ক। ৩.৫ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নেন তিনি। ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন বরুণ। ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন নারিনও। রাসেল আবার ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট।