ডাব্লুপিএল চ্যাম্পিয়ন মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। ২০২৩ ফাইনালের বদলা নেওয়া হল না দিল্লি ক্যাপিটালসের। টানা তিনবার ফাইনালে উঠে হারল দিল্লি, আর গত তিন বছরে এই নিয়ে দুবার ফাইনালে উঠে দুবারই চ্যাম্পিয়ন হল হরমনপ্রীত কৌরের মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দল। WPLর ইতিহাসে সব থেকে আনলাকি দল বোধ হয় দিল্লি ক্যাপিটালস। চোকিংয়ের ক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকাকেও টেক দিতে পারে জেমিমা রদ্রিগেজদের দল। ২০২৩ ফাইনালে তাঁরা করেছিল ১৩১ রান, ২০২৪ ফাইনালে তাঁরা করে ১১৩ রান। আর ২০২৫ সালের ফাইনালে তাঁরা করলেন ১৪১ রান। ফাইনালে ৮ রানে দিল্লি ক্যাপিটালসকে হারাল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স।
মারিজানের কাপের জোড়া উইকেট
ব্র্যাবোর্ন স্টেডিয়ামে টস জিতে এদিন বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দিল্লি ক্যাপিটালসের অধিনায়ক মেগ ল্যানিংস। শুরুতেই পেসার মারিজানে কাপ বেশ বেগ দেন মুম্বই শিবিরকে। নিজের স্পেলে তিনি করেন ৪ ওভার, আর তাতেই তুলে দেন দুই উইকেট। মুম্বই ইনিংসের তৃতীয় ওভারের শেষ বলে তিনি আউট করেন ইন ফর্ম ব্যাটার হেলি ম্যাথিউজকে। এরপর যশতিকা ভাটিয়াকে নিজের স্পেলের তৃতীয় এবং মুম্বই ইনিংসের পঞ্চম ওভারে তিনি সাজঘরে ফেরান। তাতেই মুম্বইয়ের স্কোর দাঁড়ায় ৪.৩ ওভারে ২ উইকেটে ১৪ রান।
ব্রান্ট এবং হরমনপ্রীত হাল ধরেন
এরপর ধুঁকতে থাকা মুম্বইয়ের হাল ধরেন ন্যাট স্কিভার ব্রান্ট এবং অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর। প্রথম ১০ ওভারে তেমন রান না ওঠেনি। কারণ প্রাথমিক ধাক্কা সেই সঙ্গে ফাইনালের চাপ কাটিয়ে ওঠাকেই প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে রেখেছিলেন তাঁরা। দুই ব্যাটার মিলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই নিজেদের রানের গতিও বাড়াতে থাকেন। তবে ২৮ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলে আউট হলেন ব্রান্ট। অ্যামেলিয়া কের ২ রান এবং সজীবন সজনা ০ রানেই সাজঘরে ফেরেন, তাতে আবার সব চাপ চলে আসে হরমনপ্রীতের ওপরই।
গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কৌরের অর্ধশতরান
ফাইনালে অবশ্য মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর অনবদ্য ইনিংস খেলে গেলেন। ৪৪ বলে ৬৬ রানের মাথায় তিনি অ্যানাবেল সাদার্ল্যান্ডের বলে আউট হন, তবে তাঁর এই ইনিংসই ফাইনালে নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়ায়। নিজের ইনিংসে মারেন ৯টি চার এবং ২টি ছয়। তাঁর ইনিংসের সৌজন্যেই মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের স্কোর পৌঁছায় ৭ উইকেটে ১৪৯ রানে।
ব্যাট করতে নেমে পরপর ধাক্কা দিল্লির
১৫০ রানের টার্গেট নিয়ে খেলতে নেমে এবারের ডাব্লপিএলের অন্যতম দুই সফল ব্যাটার মেগ ল্যানিংস এবং শেফালি বর্মার উইকেট শুরুতেই হারায় দিল্লি। তখনই মনে হচ্ছিল, ফাইনালে হারের হ্য়াটট্রিকের বিরল নজির হয়ত গড়বে তাঁরা। এরপর জেস জোনাসনের উইকেটটিও পাওয়ারপ্লের পরই হারায় দিল্লি। মেগ ল্যানিং এবং জেস জোনাসন করেন ১৩ রান করে, ৪ রান করেন শেফালি বর্মা। ল্যানিংকে আউট করেন ব্রান্ট। এরপর শেফালিকে ফেরান শাবনিম ইসমাইল, জোনাসন আউট হন আমেলিয়া কেরের বলে।
আসল সময় জ্বলে উঠছিলেন জেমিমা রদ্রিগেজ, কিন্তু ম্যাচ ফিনিশ করতে পারলেন না তিনি। ২১ বলে ৩০ রান করে অ্যামেলিয়া কেরের বলে আউট হলেন তিনি। অ্যানাবেল সাদার্ল্যান্ড করলেন মাত্র ২ রান। সারাহ ব্রাইস ৫ রান করে আউট হন। বল হাতে ম্যাজিক দেখানোর পর মারিজানে কাপ ব্যাট হাতেও দুর্ধর্ষ ইনিংস খেললেন, তবে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হল তাঁর ইনিংস।
ব্রান্টের অলরাউন্ড পারফরমেন্স ম্যাচ জেতাল মুম্বইকে
শেষ ২৪ বলে বাকি ছিল ৩৫ রান, যতক্ষণ কাপ মাঠে ছিলেন আশা জিইয়ে রেখেছিলেন তিনি। ২৬ বলে ৪০ রান করে ন্যাট স্কিভার ব্রান্টের বলে আউট হলেন তিনি।এরপর শিখা পাণ্ডেকেও প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরান ব্রান্ট, তাতেই তাঁর কাছে চলে এসেছিল হ্যাটট্রিকের সুযোগ। কিন্তু মিন্নু মানি প্রথম বল খেলতে নেমেই চার মারেন পুল শটে, তাতে হ্যাটট্রিক হাতছাড়া হয় ব্রান্টের। হেলি ম্যাথিউজ এরপর ১৯তম ওভারে আউট করেন মানিকে।
শেষ ১ ওভারে বাকি ছিল ১৪ রান। ব্রান্টের শেষ ওভারের প্রথম চার বলে আসে মাত্র ৩ রান। শেষ ২ বলে তাই ১১ রান দরকার ছিল। টেলেন্ডারদের পক্ষে মোটেই যা সহজ ছিল না। ৩২ বছর বয়সী ইংরেজ পেসার ৪ ওভার বোলিং করে ৩০ রান দিয়ে তুললেন ৩ উইকেট । ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪১ রান তোলে দিল্লি ক্যাপিটালস, ৮ রানে ম্যাচ জিতে নেয় মুম্বই।