নিজের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত গোপনীয় গল্প শুনিয়েছেন ভারতের তারকা ক্রিকেটার নভজ্যোত সিং সিধু। এই সময়ে তিনি টিম ইন্ডিয়াতে তাঁর প্রত্যাবর্তনের গল্প শুনিয়েছেন। সিধু ১৯৮৭ বিশ্বকাপের গল্প বর্ণনা করেছিলেন, যেখানে তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। সেই ম্যাচে ভারত হেরেছিল মাত্র ১ রানে। এই সময়ে জিওফ্রে বয়কটকে নিয়ে একটি মজার গল্পও বলেছিলেন নভজ্যোত সিং সিধু।
জিওফ্রে বয়কট সংক্রান্ত গল্প শেয়ার করেছেন নভজ্যোত সিং সিধু
নভজ্যোত সিং সিধু বলেন, ‘ক্রিকেট কেরিয়ার শেষ করার পরে আমি ধারাভাষ্য জগতে এসেছিলাম। আমি সেখানে গিয়ে জিওফ্রে বয়কটকে দেখি। সেই সময়ে জিওফ্রে বয়কট আমার থেকে শিল্পা শেঠির সম্বন্ধে জানতে চাইতেন। বয়কট আমাকে জিজ্ঞেস করতেন তুমি কেমন আছো। তিনি বলেন, সিধু মর্নিং সানকে দেখুন, তিনি শিল্পা শেঠির মতোই সুন্দরী। আমি তাকে বলেছিলাম যে সে তোমাকে দেখে হাসে কারণ সে মনে করে তুমি তার বাবার সেরা বন্ধু। বয়কট আমার উত্তরে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল কী হয়েছে। আমি বয়কটকে বলেছিলাম যে আপনি যখন আপনার শেষ জন্মদিন পালন করেছিলেন, তখন মোমবাতির দাম জন্মদিনের কেকের চেয়ে বেশি ছিল। আমি ১.৫ লক্ষ টাকার চুক্তিতে ধারাভাষ্য করতে গিয়েছিলাম, কিন্তু তারপরে ১.৫ লক্ষ টাকার পরিবর্তে ৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিল। তারপর তা হয়ে গেল ১৫ লক্ষ টাকা।’
আরও পড়ুন… টেস্টের ১৪৭ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার এমনটা ঘটল! সবচেয়ে বড় রেকর্ড গড়লেন জসপ্রীত বুমরাহ
প্রত্যাবর্তনের গল্প শোনালেন নভজ্যোত সিং সিধু
নভজ্যোত সিং সিধু বলেছেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমি আবার ভারতের হয়ে খেলব। শীষমহল টুর্নামেন্টে ৭টি সেঞ্চুরি করেছিলাম। দিল্লিতে এমন ছক্কা মেরেছিলেন যে বল হারিয়ে যেত। আমি যখন ভারতীয় দলে নির্বাচিত হই, প্রথম ম্যাচ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। প্রীতি ম্যাচ ছিল, কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে হার কে সহ্য করে? মনজুর ইলাহির বলে বড় শট মারতে গিয়ে আমি আউট হয়ে যাই। চার বছর পর এটাই ছিল আমার প্রথম ম্যাচ। গুচ্চি পাজি (সিধুর কোচ) বাইরে উপস্থিত ছিলেন, যিনি আমাকে পঞ্জাবিতে ভীষণভাবে গালিগালাজ করেছিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে আমার আরামে খেলা উচিত ছিল।’
১৯৮৭ বিশ্বকাপের গল্প শোনালেন সিধু-
তারপর সিধু ১৯৮৭ বিশ্বকাপের গল্প শোনালেন। তিনি বললেন, ‘সকাল ছয়টায় জানতে পারি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দলে জায়গা করে নিয়েছি। ম্যাচটি সকাল ৯টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল এবং এটি ছিল শীতের দিন। আমরা ২৭১ রান তাড়া করছিলাম। মনিন্দর সিং আমাকে বলেছিলেন যে গাভাসকর আউট। এরপর মাঠে ব্যাট করতে নেমেছিলাম, দর্শকরাও বেশ উত্তেজিত ছিল। আমি তখন নিজের সঙ্গে কথা বলছিলাম। তখন গুচি পাজির কথা আমার মাথায় আসছিল। আমি পাঁচ বল ডট খেলেছি। অন্যদিকে শ্রীকান্ত ছিলেন এক রানও নেননি। শ্রীকান্ত একটি চার মারেন। এখন আমি সিঙ্গেল নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি পয়েন্টের দিকে খেললাম এবং রানের জন্য দৌড়ালাম। ডিটিসি বাসের মত ছুটলাম। ডাইভিং করে আমি কোনও ভাবে ক্রিজে পৌঁছাতে পেরেছিলাম। এর পরে আমি আমার মন থেকে গুচি পাজি সম্পর্কে জিনিসগুলি সরিয়ে ফেললাম। পরের দুই ওভারে চারটি ছক্কা ও দুটি চার মেরেছি। আমি টানা চারটি হাফ সেঞ্চুরি করেছিলাম।’
আরও পড়ুন… ইতিহাস গড়লেন জসপ্রীত বুমরাহ
নভজ্যোত সিং সিধুর স্ত্রীর ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ের প্রসঙ্গও সামনে এল
নভজ্যোত সিং সিধুর স্ত্রী নভজ্যোত কৌরও এই অধিবেশনে অংশ নেন। নভজ্যোত সম্প্রতি স্টেজ-ফোর ক্যানসার থেকে সেরে উঠেছেন। নভজ্যোত কৌর বলেছেন, ‘একজন ব্যক্তির রোগ না থাকলে তার সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই। আমি সবসময় বিশ্বাস করি যে যতদিন আমি বেঁচে আছি, আমার সুখী হওয়া উচিত।’ নভজ্যোত সিধু বলেছিলেন যে তিনি তার স্ত্রীর জীবনযাত্রা বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করেছেন। সে রোগ থেকে মুক্তি পাবে বলে তার পূর্ণ আস্থা ছিল। ননির সম্পূর্ণ চিকিৎসা ভারতে হয়েছে, যার অর্ধেক হয়েছে সরকারি হাসপাতালে।
দেখে নিন নভজ্যোত সিং সিধুর ক্রিকেট কেরিয়ার
নভজ্যোত সিং সিধু ভারতের হয়ে ৫১টি টেস্ট এবং ১৩৬টি ওডিআইতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। টেস্ট ম্যাচে, সিধু ৪২.১৩ গড়ে ৩২০২ রান করেছেন। যার মধ্যে ৯টি সেঞ্চুরি এবং ১৫টি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে। সিধুর সেরা স্কোর ছিল ২০১ রান, যা তিনি ১৯৯৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে করেছিলেন। নভজ্যোত সিং সিধু একদিনের আন্তর্জাতিকে ৩৭.০৮ গড়ে ৪৪১৩ রান করেছেন। এই সময়ের মধ্যে, তিনি ৬টি সেঞ্চুরি এবং ৩৩টি হাফ সেঞ্চুরি করেন। সিধু ১৯৯৩ সালে গোয়ালিয়র ওডিআইতে ১৩৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। এটিও একদিনের আন্তর্জাতিকে নভজ্যোত সিং সিধুর সেরা স্কোর ছিল।