পরিস্থিতি যাই হোক না, জয়ের জন্যই ঝাঁপাবে ভারত- এক দশক আগে যে বার্তাটা দিয়েছিলেন বিরাট কোহলি, আজ সেটা সম্পূর্ণ করলেন রোহিত শর্মা। ২০১৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১ অক্টোবরের মধ্যে সম্পূর্ণ হল সেই বৃত্ত। ১০ বছর আগে বিরাটের দেখানো পথে অ্যাডিলেডে হয়তো জয় আসেনি। মেলেনি সাফল্য। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটে যে একটা বীজ বপন করে দিয়েছিলেন বিরাট, আজ কানপুরে রোহিতের অধিনায়কত্বে সেটা একটা মহীরূহ বৃক্ষে পরিণত হল। সেটার হাত ধরেই এল সাফল্য। অ্যাডিলেডে চতুর্থ ইনিংসে ৩৬৪ রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বিরাটের টিম ইন্ডিয়া জয়ের জন্য ঝাঁপিয়েছিল। আর কানপুরে আড়াই দিনের বেশি একটাও বল না গড়ানোর পরেও দেড় সেশন বাকি থাকতেই টেস্ট জিতে নিল ভারত।
কানপুরে ক্যারিশমা ভারতের
কানপুরে প্রথম দিনে বৃষ্টির জন্য মেরেকেটে ৩৫ ওভার খেলা হয়েছিল। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দিনে একটা বলও গড়ায়নি। চতুর্থ দিনেও দেরিতে শুরু হয়েছিল খেলা। সেই অবস্থায় সকলেই ভেবেছিলেন যে নিশ্চিতভাবে ড্র হচ্ছে কানপুর টেস্ট। কিন্তু রোহিতের নেতৃত্বাধীন টিম ইন্ডিয়া জয়ের জন্য ‘অল-আউট’ ঝাঁপায়। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ২৩৩ রানের জবাবে মাত্র ৩৪.৪ ওভারে নয় উইকেটে ২৮৫ রান তুলে ডিক্লেয়ার করে দেয় ভারত। রানরেট ছিল ৮.২২।
সেই বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের কারণে বাংলাদেশকে দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নামিয়ে অল-আউট করে রান তাড়া করার প্রবল সুযোগ পেয়ে যায় ভারত। ঠিক সেটাই হয়। ১৪৬ রানে অল-আউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। জয়ের জন্য ৯৫ রান তাড়া করতে নেমে সাত উইকেট হাতে থাকতেই কানপুর টেস্ট জিতে যায় ভারত। সেই রানটাও তুলে নেয় মাত্র ১৭.২ ওভারে। অর্থাৎ রানরেট হল ৫.৬৫।
অ্যাডিলেডে স্বপ্নভঙ্গ ভারতের
আর এরকম অবস্থা থেকে ভারত যে টেস্ট জিততে পারে, সেটার বীজটা ২০১৪ সালে রোপণ করে দিয়েছিলেন বিরাট। মহেন্দ্র সিং ধোনির অনুপস্থিতিতে অ্যাডিলেডে অধিনায়কত্ব করেছিলেন তারকা ক্রিকেটার। প্রথম ইনিংসে সাত উইকেটে ৫১৭ রান তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া। বিরাটের ১১৫ রানের ইনিংস সত্ত্বেও ৪৪৪ রানে অল-আউট হয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেটে ২৯০ রান তুলে ডিক্লেয়ার করে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।
আরও পড়ুন: IND vs BAN 2nd Test Day 5 Live: কানপুরের দাপুটে জয়ে বাংলাদেশকে চুনকাম করল ভারত
চতুর্থ ইনিংসে ৩৬৪ রান করতে নেমে জয়ের জন্য ঝাঁপিয়েছিল ভারত। মুরলী বিজয় এবং বিরাটের সুবাদে একটা সময় মনে হয়েছিল যে ভারত জিতে যাবে। ৯৯ রান করেছিলেন বিজয়। বিরাট করেছিলেন ১৪১ রান। কিন্তু ঋদ্ধিমান সাহাদের ভুলের কারণে ৪৯ রানে হেরে গিয়েছিল বিরাটের নেতৃত্বাধীন ভারত।
অ্যাডিলেডে হেরেছিলেন বিরাট, কানপুরে জিতলেন
সেদিন হেরে গেলেও আজ কানপুরে জিতলেন বিরাট। আজ জিতল তাঁর মতাদর্শ - যাই হোক না কেন, যে কোনও পরিস্থিতি হোক না কেন, জয়ের জন্যই ঝাঁপাবে ভারত। আর সেই ১০ বছরের যাত্রাপথে ২০২১ সাল গাব্বা টেস্ট (৩২৮ রান তাড়া করে জিতেছিল ভারতের ভাঙাচোরা দল) এবং ২০২২ সালে লর্ডস টেস্ট (হাতে ৬০ ওভার নিয়ে ইংল্যান্ডকে অল-আউট করে দিয়েছিল) দেখেছে। আজ সেই বৃত্তটা পুরোপুরি সম্পূর্ণ হয়ে গেল।
আরও পড়ুন: Rohit Sharma-কখনও পাসপোর্ট, কখনও ব্যাগ! ভারতীয় দলের ‘গজনি’ কি তিনি? হাসি মুখেই জবাব দিলেন রোহিত…
বোলারদের দাপটের পিছনেও বিরাটের অবদান
তবে বিরাটের অবদান সেটুকুই নয়। কানপুরে ভারতের জয়টা শুধু আক্রমণাত্মক ব্যাটিং বা মানসিকতার কারণে আসেনি। সেটায় বড় অবদান আছে ভারতীয় বোলারদের। রোহিত জানতেন যে তাঁর হাতে জসপ্রীত বুমরাহ, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজারা। যাঁরা ২০ উইকেট তুলে নিতে পারবেন। আর সেই পথটাও দেখিয়েছিলেন বিরাট। বাড়তি ব্যাটার না খেলিয়ে পাঁচজন বোলার খেলানোর তত্ত্ব ভারতীয় দলের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল তাঁর জমানায়।
সবমিলিয়ে আজ জিতলেন রোহিত, আজ জিতলেন বিরাট, আজ জিতল ভারত। আর রোহিত প্রমাণ করলেন যে ২০১৪ সালে অ্যাডিলেডে হারেননি বিরাট।