মানুষের বয়স যতই বাড়ুক না কেন, ভিতরে একটা শিশুসত্ত্বা থেকেই যাচ্ছে। কখনও প্রকাশ পায়, কখনও পায়না। এই যেমন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়ের ক্ষেত্রে। গতবছর নভেম্বর মাসে বিশ্বকাপ ফাইনালে হেরে ভারতীয় দলের কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলেছিলেন, কিন্তু মিস্টার ডিপেন্ডেবলের ওপর দল কতটা নির্ভর করে, সেটা বুঝিয়ে তাঁকে আরও সাত মাসের জন্য কোচের পদে থাকার জন্য রাজি করান রোহিত শর্মারা।
সেদিন তাঁদের অনুরোধ মেনে নিয়ে দ্রাবিড় যে কোনও ভুল সিদ্ধান্ত নেননি, সেটা টি২০ বিশ্বকাপ জিতে গুরুকে প্রমাণ করে দেন রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা। আর বিশ্বকাপ জয়ের পরই লাজুক শান্ত স্বভাবের দ্রাবিড়েরও উচ্ছাসের বাঁধ ভাঙে। বিরাট কোহলি নিজে হাতে ট্রফি এনে দ্রাবিড়ের হাতে তুলে দিতেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান ২০০৩ এবং ২০২৩ বিশ্বকাপ ফাইনাল হারের যন্ত্রণা সহ্য করা দ্রাবিড়, বেড়িয়ে পড়ে তাঁর ভিতরে লুকিয়ে থাকা একটা শিশুসত্ত্বা।
দ্রাবিড় অবশ্য এখনও যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না, সেদিন তাঁর মধ্যে ঠিক কি হয়েছিল। সেদিনের উন্মাদনায় গা ভাসানো দ্রাবিড়কে নিজেই এখন চিন্তে পারছেন না সদ্য প্রাক্তন হওয়া কোচ। বলছেন, ছেলেদের এতদিন যা শিখিয়েছেন, সব কিছুর উল্টো কাজ করেছিলেন বিশ্বকাপ জেতার পর।
দ্রাবিড়ের কথায়, ‘আমরা অনেক পরিশ্রম করেছিলাম এবং মরিয়া ছিলাম ট্রফি জেতার জন্য। এত চেষ্টা লড়াইয়ের পর এমন মূহূর্তে পেলে সেটা সেলিব্রেট করতে ইচ্ছাও করে। আমি এখনও সেই ভিডিয়ো গুলো ছেলেদের দেখাতে পছন্দ করিনা, মনে হয় সেদিন আমি পাগোল হয়ে গেছিলাম আনন্দে। আমি ছেলেদের সব সময়ই বলি খেলায় ওঠা নামা থাকবে, তাতে হতাশ না আনন্দিত না হতে। সব সময় একটা ভারসাম্য রাখতে। কি ভাগ্যাস ওটা আমার শেষ ম্যাচ ছিল, নাহলে ছেলেরা আমায় বলত যে আমি মুখে একরকম বলছি, আর কাজে অন্যরকম করছি ’।
দ্রাবিড় বলছেন, ‘পুরস্কার পাওয়ার ইতিবাচক দিকটি হল, এটা বুঝিয়ে দেয় ক্রিকেটের ময়দানে কোন কোন ভালো নিদর্শন আমরা রাখতে পেরেছি। কিন্তু আসল সত্য এবং বাস্তব হল, আমরা যত না সাফল্য পেয়েছি ক্রিকেটে, তার থেকে অনেক বেশিবার ব্যর্থ হয়েছি। দীর্ঘ কেরিয়ারে ব্যর্থতা এবং মন খারাপের তালিকাটা অনেক দীর্ঘ। কিন্তু ক্রিকেটার বা কোচ হিসেবে যেটা আনন্দ দেয় সেটা হল, এই ব্যর্থতা কাটিয়ে যখন বড় ইভেন্টে ট্রফি জেতা যায়, টেস্ট ম্যাচ জেতা যায়’।
আরও পড়ুন-সিন্ধুরা পারেননি, পারলেন শরদরা! টোকিয়োর সাফল্য প্যারিসে টপকাল প্যারালিম্পিয়ানরা…
ভারতীয় দলের কোচের পদ ছাড়ার পর এখনও কোনও দলে যোগ দেননি তিনি। কোথায় দেখা যাবে তাঁকে ভবিষ্যৎে, এই প্রশ্নের উত্তর দ্রাবিড় এখনই দিতে পারছেন না। বরং জানালেন, স্ত্রী বিজেতা পেন্ধারকর তাঁকে বলেছেন ছেলেদের খেলায় রাখতে। মজা করে সাক্ষাৎকারে সঞ্চালকের উদ্দেশ্য ভারতীয় দলের প্রাক্তন কোচ বলেন, যদি তাঁর কাছে ভালো প্রস্তাব থাকে তাহলে যেন দ্রাবিড়কে তিনি জানান, সেক্ষেত্রে বায়োডাটা পাঠাবেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল।