চলতি বছর শেষ হতে আর কয়েকটা দিনের অপেক্ষা। তারপরেই আমরা পা রাখব ২০২৫-এ। ক্যালেন্ডারের পাতা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ক্রিকেটের মাঠ মিস করবে অনেক তারকাকে। এবছর ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন এক ঝাঁক তারকে। কেউ বা নির্দিষ্ট একটি ফরম্যাটকে, কেউ বা গোটা ক্রিকেটকে। সেই তালিকায় রয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মার মতো বিশ্ব ক্রিকেটের বেশ কিছু বড় নাম। আসুন একবার দেখে নেওয়া যাক কারা এবছর অবসর নিয়েছেন।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন (আন্তর্জাতিক ক্রিকেট):
৩৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার চলতি বর্ডার গাভাসকর ট্রফির তৃতীয় টেস্টের শেষে হটাৎ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেন। রবিচন্দ্রন অশ্বিন আন্তর্জতিক ক্রিকেটে ভারতের হয়ে ২৮৭ ম্যাচে মোট ৭৬৫টি উইকেট নিয়েছেন। এর মধ্যে ৫৩৭টি উইকেট নিয়েছেন টেস্ট ক্রিকেটে। সামগ্রিক পরিসংখ্যানে অনিল কুম্বলের (৬১৯ উইকেট) পরেই রয়েছে তাঁর নাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেও এখনও IPL এবং ক্লাব ক্রিকেট খেলবেন তিনি। ২০২৫ সালে তাঁকে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলতে দেখা যাবে।
বিরাট কোহলি, রবীন্দ্র জাদেজা এবং রোহিত শর্মা (T20Is):
২০২৪-এ ভারতের টি-২০ বিশ্বকাপ জয়ের ঠিক পরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের কথা ঘোষণা করেন এই তিন ক্রিকেটার। ট্রফি নেওয়ার সময়ই নিজের অবসরের কথা ঘোষণা করেন বিরাট। তিনি ভারতের হয়ে ১২৫টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন, রান করেছেন ৪১৮৮। তাঁর ব্যাটিং গড় ৪৮.৬৯। ২০১৪ এবং ২০১৬ টি-২০ বিশ্বকাপের প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। অন্যদিকে রোহিত শর্মা ভারতের হয়ে ১৫৯টি টি-২০ ম্যাচে ৪২৩১ রান করেছেন। জাদেজার ও এই ফরম্যাটে অনবদ্য রেকর্ড রয়েছে। তিনি ভারতের হয়ে ৭৪টি টি-২০ ম্যাচে ৫১৫ রান করেছেন এবং ৫৪ উইকেট নিয়েছেন।
শিখর ধাওয়ান (সব ধরণের ক্রিকেট):
শিখর ধাওয়ান ২০২৪ সালের আগস্টে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের কথা ঘোষণা করেছিলেন। এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান টেস্টে ২,৩১৫, ওয়ানডেতে ৬,৭৯৩ এবং টি-২০তে ১,৫৭৯ রান করেছেন। এর মধ্যে ১৭টি ওডিআই সেঞ্চুরি এবং ৭টি টেস্ট সেঞ্চুরি রয়েছে। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্য বিখ্যাত ছিলেন ধাওয়ান। তিনি ভারতের হয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অনেক ম্যাচে জয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ২০১৩ এবং ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুরন্ত পারফরম্যান্স করেছিলেন তিনি।
দীনেশ কার্তিক (সব ধরণের ক্রিকেট):
দীনেশ কার্তিক IPL ২০২৪ শেষ হওয়ার কয়েকদিন পরেই অবসরের কথা ঘোষণা করেছিলেন। একটি আবেগপূর্ণ ইনস্টাগ্রাম পোস্টের মাধ্যমে তিনি বিষয়টি জানিয়েছিলেন। কার্তিক IPL 2024-এ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (RCB) হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, ফিনিশার হিসাবে তাঁর চিত্তাকর্ষক পারফরম্যান্সের কারণে ভারতের T২০ বিশ্বকাপ দলে প্রত্যাবর্তন হতে পারে বলে জল্পনা ছড়িয়েছিল। তবে সেই সুযোগটি বাস্তবায়িত হয়নি। ক্রিকেট কেরিয়ারে কার্তিক ভারতের হয়ে ২৬টি টেস্ট, ৯৪টি ওয়ানডে এবং ৬০টি টি-২০ ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি ৩ হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক রান করেছেন।
সিদ্ধার্থ কৌল (সব ধরণের ক্রিকেট):
সিদ্ধার্থ কৌল ১৭ বছরের ক্রিকেট কেরিয়ারের ইতি টানেন ২০২৪ সালের নভেম্বরে। ৩৪ বছর বয়সী এই পেসার ৩টি ওয়ানডে এবং ৩টি টি-২০তে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২০০৮ সালে ভারতের অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। সেই সময় কৌল বিরাট কোহলি এবং রবীন্দ্র জাদেজার মতো তারকাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলেছিলেন।
জেমস অ্যান্ডারনসন (আন্তর্জাতিক ক্রিকেট):
ইংল্যান্ডের পেসার জেমস অ্যান্ডারসন, ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার হিসেবে বিবেচিত হন। এবছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে লর্ডস টেস্টের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি। অ্যান্ডারসন টেস্ট ক্রিকেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হিসেবে তাঁর বর্ণাঢ্য কেরিয়ারের সমাপ্তি ঘটান। মুথাইয়া মুরলীধরন এবং শেন ওয়ার্নের পরেই রয়েছে তাঁর নাম।
ডেভিড ওয়ার্নার (আন্তর্জাতিক ক্রিকেট):
এই বছর ডেভিড ওয়ার্নারই প্রথম অবসরের কথা ঘোষণা করেন। সিডনিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ টেস্টের পরই ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি। অস্ট্রেলিয়ার এই বাঁ-হাতি ব্যাটার ১১২টি টেস্ট, ১৬১টি ওয়ানডে এবং ১১০টি টি-২০তে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, সমস্ত ফরম্যাট মিলিয়ে তিনি মোট ১৮,৯৯৫ রান সংগ্রহ করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপ এবং ২০২১ টি-২০ বিশ্বকাপ জয় করেছিলেন ওয়ার্নার।
নিল ওয়াগনার ( আন্তর্জাতিক ক্রিকেট):
নিল ওয়াগনার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজের ঠিক আগে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের কথা ঘোষণা করেন। তিনি টেস্টে নিউজিল্যান্ডের পঞ্চম-সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক হিসেবে তাঁর ক্যারিয়ার শেষ করেন, ২৬৭টি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ওয়াগনার ৬৪টি টেস্ট খেলেছেন, যার মধ্যে ৩২টি জিতেছেন এবং সেই জয়গুলিতে ২২-এর অসাধারণ গড়ে ১৪৩টি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। ওয়াগনার ২০২১-র বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী কিউয়ি দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন।
ইমাদ ওয়াসিম এবং মহম্মদ আমির (আন্তর্জাতিক ক্রিকেট):
পাকিস্তানের ইমাদ ওয়াসিম এবং মহম্মদ আমির ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তাদের অবসরের কথা ঘোষণা করেছিলেন। ইমাদ পাকিস্তানের হয়ে ৫৫টি ওয়ানডে এবং ৭৫টি টি-২০ খেলেছেন। তিনি ১৩০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে ১,৫৪০ রান সংগ্রহ করেছেন এবং ১১৭ উইকেট নিয়েছেন। অন্যদিকে আমির পাকিস্তানের হয়ে ৩৬টি টেস্ট, ৬১টি ওয়ানডে এবং ৬২টি টি-২০ খেলেছেন । তিনি ২৭১টি আন্তর্জাতিক উইকেট নিয়েছেন এবং সমস্ত ফরম্যাট মিলিয়ে ১,১৭৯ রান করেছেন।
টিম সাউদি (টেস্ট):
এবছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ শেষ হওয়ার পর টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানান নিউজিল্যান্ডের পেসার টিম সাউদি। তিনি কিউয়িদের হয়ে ১০৭ টেস্ট খেলে ৩০.২৬ গড়ে ৩৯১টি উইকেট নিয়েছেন।
ডেভিড মালান ( আন্তর্জাতিক ক্রিকেট):
প্রাক্তন নম্বর ১ ICC T20I ব্যাটার, ডেভিড মালান ইংল্যান্ডের সেই খেলোয়াড়ের মধ্যে একজন যারা ৩টি আন্তর্জাতিক ফরম্যাটেই সেঞ্চুরি করেছেন। ২০১৭ সালে ক্রিকেটে অভিষেক করেছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৮টি সেঞ্চুরি ও ৩২টি হাফ-সেঞ্চুরি রয়েছে তাঁর।
শ্যানন গ্যাব্রিয়েল (আন্তর্জাতিক ক্রিকেট):
ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই পেসার গ্যাব্রিয়েল ২০২৪ সালের আগস্টে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ৫৯টি টেস্ট, ২৫টি ওয়ানডে এবং দুটি টি-২০ ম্যাচ খেলে ২০২টি উইকেট নেন।
মইন আলি (আন্তর্জাতিক ক্রিকেট):
ইংল্যান্ডের এই অলরাউন্ডার ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের কথা ঘোষণা করেন। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া মইন ৬৬৭৮ আন্তর্জাতিক রান করেছেন। এছাড়াও তিনি ৩৬৬টি উইকেটও নিয়েছিলেন। মইন ২০১৯ ওডিআই বিশ্বকাপ এবং ২০২২ টি-২০ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য ছিলেন।
শাকিব আল হাসান (T20Is):
বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচিত, শাকিব ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক টি-২০ থেকে অবসর নিয়েছিলেন। তবে তিনি ২০২৫ ICC চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেট খেলবেন। তিনি টেস্টে ৪ হাজারের বেশি রান করেছেন এবং ২৪০টি উইকেট নিয়েছেন। টি-২০তে তিনি ২২৫১ রান করেছেন এবং ১৪৯টি উইকেট নিয়েছেন।
মাহমুদুল্লাহ (T20Is):
বাংলাদেশের প্রাক্তন অধিনায়ক এবং অলরাউন্ডার মাহমুদুল্লাহ টি-২০ ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। তিনি ১৩০টিরও বেশি ম্যাচ খেলেছেন এবং এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় শীর্ষস্থানীয় রান সংগ্রাহক। টি-২০তে ৪০ উইকেটও নিয়েছেন তিনি। যদিও এখনও মাহমুদুল্লাহ বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে খেলা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।